খেলা

কোহলি-রোহিতদের কাঁপিয়ে দেয়া আফ্রিদির উঠে আসা যেভাবে

স্পোর্টস ডেস্ক

২৫ অক্টোবর ২০২১, সোমবার, ৪:০১ অপরাহ্ন

দুবাইয়ে স্বপ্নের মতো এক স্পেলে নায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদি। নতুন বলে গতির ঝড় তুলে রোহিত শর্মা-লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙে দেন। শেষ দিকে এসে ফেরান দারুণ খেলতে থাকা বিরাট কোহলিকে। শুরুর মতো শেষটা রাঙিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের ভিত গড়ে দেন। ব্যাটিংয়ে অনায়াস জয় এনে দেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। আন্তর্র্জাতিক অঙ্গনে অভিষেকের পর থেকেই আলো ছড়াচ্ছেন আফ্রিদি। সবচেয়ে কমবয়সী বোলার হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব তার। পাঁচ উইকেট আছে টেস্টেও। এরপরও পাদপ্রদীপের আলোয় ছিলেন না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে থেকেই অবশ্য আলোচনায় ছিলেন। তবে প্রথম ম্যাচেই সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিবেন কে ভেবেছিল? পাকিস্তান ক্রিকেটে নতুন গতি তারকা হয়ে ওঠার পথে বড় এক পদক্ষেপ ভারতের বিপক্ষে আফ্রিদির ম্যাচ জেতানো স্পেল। কীভাবে উত্থান ২১ বছর বয়সী এই গতি তারকার?

আফগানিস্তান সীমান্তের খাইবার পাস-এর গা ঘেঁসে ছোট্ট শহরতলী লান্ডি কোটাল। পাকিস্তানের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আফ্রিদির। যেখানেই নেই ক্রিকেট অনুশীলনের অবকাঠামো। অবশ্য ক্রিকেটপাগল এক পরিবারে জন্ম তার। বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদিকে দেখে ক্রিকেটে আসা শাহীনের। রিয়াজকে অনুসরণ করে পেস বল করতে চাইতেন শাহীন। রিয়াজ কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে সাফল্যের দেখা পান ২০০৪ সালে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় রিয়াজের। ২০০৭ সালে বিদ্রোহী লীগ আইসিএলে যোগ দিয়ে নিষিদ্ধ হন রিয়াজ। থেমে যায় রিয়াজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। রিয়াজের টেস্ট অভিষেকের বছর তিনেক আগে জন্ম শাহীনের। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটলেও ভাইকে দিয়ে স্বপ্নের সর্বোচ্চ শিখরে উঠার স্বাদ মিটিয়েছেন রিয়াজ। শাহীনের পেস বোলিংয়ের প্রতি টান দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রিয়াজের কাছেই ক্রিকেটের প্রথম পাঠ নেন শাহীন। ততদিনে তৃণমূলের কোচ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছেন রিয়াজ। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা কোচ সুলেমান কাদির। পাকিস্তানি কিংবদন্তি লেগস্পিনার আব্দুল কাদিরের ছেলে তিনি। রিয়াজের সঙ্গে লম্বা সময় খেলেছেন সুলেমান। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে সুলেমান জানালেন শাহীনের তারকা হয়ে ওঠার গল্প। তিনি বলেন, ‘রিয়াজের সঙ্গে আমি লম্বা সময় খেলেছি। তাকে দেখেই শাহীনের ক্রিকেটে আসা। রিয়াজও দারুণ বোলার ছিল। শাহীনকে বড় মঞ্চের জন্য তৈরি করার বড় অবদান রিয়াজের।’

যুব দল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে খুবই ভালো স্পেল করেছেন এমন রেকর্ড খুব বেশি নেই শাহীন আফ্রিদির। গতির সঙ্গে সুইং করাতে পারেন এমন প্রতিভার কারণেই ১৯ বছর বয়সে তিন সংস্করণে জাতীয় দলে অভিষেক। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলা আফ্রিদি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ২০২০ বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ থেকে। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দুই ইনিংসে আফ্রিদির শিকার ৫ উইকেট। আফ্রিদির বেড়ে ওঠা কাছ থেকে দেখেছেন সুলেমান কাদির। তার চোখে আফ্রিদির ক্যারিয়ারের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। সুলেমান বলেন, ‘সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার কারণে ভালো বাউন্স পেতো। আর গতিময় বল করা তার সহজাত প্রতিভা। তবে শাহীন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পিন্ডি টেস্ট থেকে। গতিময় ইন সুইঙ্গার ডেলিভারি বোঝা ব্যাটারদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’

টেনিস বলে বোলিং শুরু আফ্রিদির। এজন্য জোরে বল করার বিকল্প ছিল না। গতির সঙ্গে আফ্রিদি যোগ করেছেন ইনসুইং। নিজের সেরা অস্ত্র ব্যবহার করে রোহিত-রাহুলদের ঘোল খাইয়েছেন। নতুন বলে আফ্রিদির ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আভাস ছিলই। ভারত ম্যাচের আগে ৬১ টি-টোয়েন্টিতে (আন্তর্জাতিক ও পিএসএল) বোলিং ওপেন করেছেন শাহীন। যার ২০টিতেই প্রথম ওভারে পেয়েছেন উইকেটের দেখা। এছাড়া গত দুই বছর ধরে সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে সেরা বোলার আফ্রিদি। ভারতের বিপক্ষে ঝড় তোলার আগে পাওয়ার প্লেতে নিয়েছেন ৪৮ উইকেট।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status