প্রথম পাতা

বিদেশি সিম দিয়ে ফোন, শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ অক্টোবর ২০২১, সোমবার, ১০:১৭ অপরাহ্ন

শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, শাহাদাতের নাম ভাঙ্গিয়ে চক্রটি চাঁদা দাবি করতো। নতুন নির্মাণাধীন ভবনের মালিক থেকে শুরু করে অলিগলির ছোট ব্যবসায়ী। চাঁদা দাবি করে সবাইকে ভয়ভীতি
দেখানো হতো। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা দেখালে তার বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করা হতো। এ ভাবে কয়েক বছর ধরে একটি চক্র চাঁদাবাজি করে মানুষকে হয়রানি করে আসছিল। সর্বশেষ ঢাকার শ্যামলী এলাকায় একটি মোটরসাইকেলের শো-রুমে চাঁদা চেয়ে ব্যর্থ হয় চক্রটি। পরে ওই শো-রুমে পরিকল্পনামাফিক তারা হামলা করে। ছিনিয়ে নিয়ে যায় নগদ টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কিছু। পরে ওই শো-রুমের মালিকের করা মামলায় চক্রের ছয় সদস্যকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও ধামরাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব গোয়েন্দা দল ও র‌্যাব-২ এর যৌথ দল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন (৩৪), জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), খায়রুল ভূঁইয়া (২০), রাকিব হাসান (২০) ও মো. নয়ন (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি চাপাতি, শো-রুম থেকে লুণ্ঠিত টাকার ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এসব কথা বলেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে মঈন বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে একজন পলাতক কথিত সন্ত্রাসীর নামে শ্যামলীর ইডেন অটোস নামক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না পাওয়ায় তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। ঢাকা উদ্যান এলাকায় গ্রেপ্তার জসিমের বাসায় জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল এবং রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটোস শো-রুমে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। তারা ১১ই অক্টোবর ওই শো-রুম রেকি করে। গ্রেপ্তার জসিম এবং জহির ঢাকা উদ্যান কাঁচাবাজার থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি ক্রয় করে। পরের দিন ১২ই অক্টোবর ঢাকা উদ্যানে একত্রিত হয়ে শো-রুমের সামনে আসে এবং শো-রুমের লোকজন ও আশেপাশের লোকজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। জাহিদ তার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে তিনটি চাপাতি জহির, রাকিব এবং খায়রুলের হাতে দেয় এবং নিজে একটি চাপাতি নিয়ে নয়নসহ একযোগে শো-রুমে প্রবেশ করে। এসময় গ্রেপ্তার জসিম শো-রুমের বাইরে অবস্থান করে ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করে। জহির শো-রুমে প্রবেশ করেই চাপাতি দিয়ে ম্যানেজার সবুজকে আঘাত করে এবং রাকিব চাপাতি দিয়ে শো-রুমের মোটর টেকনিশিয়ান হাসানকে আঘাত করে। এ সময় দলের অন্য সদস্যরা শো-রুমে ভাঙচুর চালায়। জাহিদ চাপাতি নিয়ে শো-রুমের ২য় তলায় গিয়ে কাঁচের দরজা ভেঙে ক্যাশিয়ারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাশ বাক্স থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মনিটর নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় শো-রুমের মালিক কে এম আবদুল খালেক শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। পুরো ডাকাতির ঘটনা কয়েক মিনিটের ভেতরে শেষ হয়। শো-রুম থেকে বের হয়ে জহির এবং জাহিদ লেকসিটিতে জাহিদের বাসায় টাকা নিয়ে যায়। পরে নিজ নিজ ভাগের টাকা নিয়ে তারা আত্মগোপনে চলে যায়।
র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে তাদের কেউ পিয়ন, কেউ পরিচ্ছন্নকর্মী, কেউ আবার অটোরিকশাচালক। এ পরিচয়ের আড়ালে তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। ঢাকার মোহাম্মদপুর, বসিলা, শ্যামলী এবং আশপাশের এলাকার মানুষদের পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও শাহাদাত হোসেনের নাম ভাঙ্গিয়ে বিদেশি নম্বর থেকে ফোন দিতো। বড় ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতো। দাবি করা চাঁদা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের নানা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। কেউ চাঁদা দিতে অসম্মত হলে তারা ভুক্তভোগীদের বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করে। তাদের নামে একাধিক চুরি, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তারা এলাকায় মাদক ও চোরাই অটোরিকশার ব্যবসা, চুরি-ছিনতাই সহ নানা অপরাধে জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার জহিরুল ইসলাম জহির চক্রের মূলহোতা। জহিরসহ অন্যরা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে টাকা দাবিসহ নানা অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত। জহির আগে অটোরিকশা চালালেও বর্তমানে চোরাই অটোরিকশার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার নামে একটি ডাকাতি মামলাসহ মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার জসিম এ চক্রের সমন্বয়কারী। মোটরসাইকেল শো-রুমে ডাকাতির আগে সবাইকে একত্রিত করা এবং ডাকাতি চলাকালে শো-রুমের বাইরে অবস্থান করে। ওয়াচম্যানের দায়িত্বে ছিল জসিম। সে ঢাকা উদ্যানের একটি হাউজিংয়ে ১৮ বছর ধরে পিয়নের চাকরি করে। এর আড়ালে সে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রাকিব হাসান এ চক্রের সমন্বয়কারী জসিমের আত্মীয়। সে ডাকাতিকালে মোটরসাইকেল টেকনিশিয়ান হাসানকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। তার বিরুদ্ধেও মোহাম্মদপুর থানায় চুরি এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার জাহিদুল শিকদার অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ করে। নিয়মিত মাদকসেবী জাহিদুলই ডাকাতিকালে ক্যাশ থেকে নগদ অর্থ লুণ্ঠন করে। তার বিরুদ্ধেও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার খাইরুল ভূঁইয়া অটোরিকশাচালক। বিভিন্ন জায়গা থেকে অটোরিকশা চুরি করে সে এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করতো। এ ছাড়া সে ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতি ও মাদকের মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার নয়নের নির্দিষ্ট পেশা নেই। সে মূলত দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত।
র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করলেই কেউ শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে যায় না। দেশে থেকেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভিওআইপি কলে ফোন করা যায়। বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করে তারা মূলত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমার প্রমাণ হাজির করে। এরপর চাঁদা না পেলে হামলা করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status