অনলাইন

সুনীল অর্থনীতি দেশে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাময় খাত: সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৪ অক্টোবর ২০২১, রবিবার, ৭:৪৫ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাময় খাত। এ খাত থেকে আগামী কয়েক বছরেই ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা সম্ভব।

রোববার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ব্লু ইকোনমি: সম্ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

সালমান এফ রহমান বলেন, সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতটাকে কাজে লাগাতে হবে। সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে যেসব পলিসি সহয়াতা দরকার তা চিহ্নিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে গামের্ন্ট শিল্প কিন্তু একদিনে আজকের এই দিনে আসেনি। তাই সবার সহযোগিতায় এই খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক সময়ের উদীয়মান খাত জাহাজ শিল্পের অগ্রগতি কেন ধীর হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে ও নীতি কৌশল ঠিক করতে এফবিসিসিআই ও বিডাকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন সালমান এফ রহমান এমপি। এছাড়া গভীর সমুদ্রের উপযোগী মাছ ধরার ট্রলার বা জাহাজ নির্মাণে দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নীতির সংশোধন জরুরি।

সালমান এফ রহমান বলেন, অনেকে বলে থাকেন একটি খাতের ওপর আমরা রপ্তানি নির্ভর হয়ে আছি। এছাড়া আমদানি নির্ভর হয়ে আছি। কিন্তু এখন পণ্যের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। আমি মনে করি, আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যেই আপনি দেখবেন, ৩-৪ টা খাতে আমরা ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করতে পারব। দুই তিন বছরের মধ্যে ওষুধ খাত রপ্তানি আয় ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, আমি ওয়ালটনে গিয়েছি। আমি মনে করি ওয়ালটন একা দুই বছরের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার (পণ্য) রপ্তানি করবে। এটাই হচ্ছে আমাদের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের চিত্র। এছাড়া অন্যান্য খাতও আরও ভালো করবে। আইটি খাত ইতিমধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এটাও কিন্তু ৪ বিলিয়নে পৌঁছাবে। এই যে আমরা ডাইভারসিফিকেশনর কথা বলছি, তা হচ্ছে এবং হবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার আয়তন মোট ৬৬৪ কিলোমিটার। কিন্তু মাছ আহরণ করা হয় মাত্র ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে। আর তাই মাছের বৈশ্বিক উৎপাদনে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ২.৬%। যেখানে চীন একাই বিশ্ববাসীকে ৬১ শতাংশ মাছের যোগান দিচ্ছে। একই ভাবে সাগরের সীমানায় মালিকানা প্রতিষ্ঠা হলেও, এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে সমুদ্র বক্ষের বিপুল পরিমাণ তেল ও গ্যাস। এ ব্যাপারে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও, তা আলোর মুখ দেখেনি। অথচ বাংলাদেশের সমুদ্র ব্লকের পাশেই মিয়ানমার আরো আগেই খনিজ সম্পদ উত্তোলন শুরু করেছে। শুধু মাছ কিংবা খনিজ সম্পদ নয়, নিজেদের সীমানার সাগরকে ব্যবহার করে পাল্টে দেয়া যেতে পারে বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতির চিত্র। সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন, জাহাজ শিল্প, গভীর সাগরে মাছ ধরার উপযোগী জাহাজ নির্মাণ, কনটেইনার, ওষুধ, প্রসাধনীসহ নানা শিল্প বিকশিত হতে পারে। তিনি জানান, বাংলাদেশের যে সমুদ্রসীমা আছে তা মূল ভূখণ্ডের ৮১ ভাগের সমান। পুরো বিশ্বে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে দেড় লাখ জাহাজ চলাচল করে, সেখানে বাংলাদেশের জাহাজ মাত্র ৭০টি। অথচ এই পথে পণ্য পরিবহনের অর্থনীতির আকার ৯০০ কোটি ডলার। এছাড়াও কনটেইনার নির্মাণেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে। ৭৪ শতাংশ কনটেইনার ব্যবহার হয় এশিয়া অঞ্চলে। প্রতি বছর ১৫ শতাংশ হারে বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কনটেইনারের চাহিদা আরো বাড়বে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সমুদ্র বন্দর থাকলেও, তা মাদার ভেসেলের জন্য উপযোগী নয়। এমন অবস্থায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে তা সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পদ সংরক্ষণের নীতিও গ্রহণ করতে হবে। সরকারের নেয়া নদী ভাঙন প্রতিরোধ কর্মসূচির কারণে উপকুলীয় এলাকায় মানুষ এই বিপর্যয়ের হাত থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত বলে জানান উপমন্ত্রী।

কর্মশালার বিশেষ অতিথি বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৮-২৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ওই সম্মেলনে ব্লু ইকোনমি নিয়ে আলাদা আলোচনা করা হবে।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সমুদ্র অর্থনীতি। কর্মশালায় আলোচিত বিষয়গুলোর সমন্বয়ে এ খাতের কর্মকৌশল নির্ধারণে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে এফবিসিসিআই।

এর আগে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ব্লু ইকোনমি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ খাতের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই। এই খাতের অভিভাবক কে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যার যার মতো কাজ না করে, বিডা নিজে তত্ত্বাবধান করলে, দ্রুত সুফল পাওয়া যেতে পারে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ড. একে এনামুল হক বলেন আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে সমুদ্রকেন্দ্রীক। ব্লু ইকোনমিকে কাজে লাগাতে পর্যটন, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা, ফিশিং, বন্দর, মেরিটাইম ইক্যুইপমেন্ট খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। তবে এজন্য বিদেশি ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে নীতি বৈষম্য দূর করার তাগিদ দেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status