ইতিহাস থেকে

এক সময় মানুষ তালপাতায় চিঠি লিখতো

শামীমুল হক

২৪ অক্টোবর ২০২১, রবিবার, ৭:৪২ অপরাহ্ন

রানার ছুটছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/রানার চলেছে খবরের বোমা হাতে/রানার চলেছে, রানার/রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার/দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটে রানার/কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার/রানার! রানার।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে এ কবিতায়ই ফুটে ওঠে পত্র যোগাযোগের মাধ্যম রানারের কঠিন এ কাজের। রানারের কাজই ছিল দৌড়ানো। রাতের আঁধারে পাহাড়, জঙ্গল পেরিয়ে অন্যের খবর পৌঁছে দিতে তারা ভয়কে করতেন জয়। মধ্যযুগের এ রানারকে এখন আর দৌড়াতে হয় না ।
আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও হয়েছেন এখন আধুনিক, যান্ত্রিক। ভাবা যায়! এক সময় পৃথিবীতে ছিল না, কোনো যান্ত্রিক গাড়ি, ট্রেন, স্টিমার কিংবা বিমান। তখনও এক আত্মীয়ের খবর বয়ে নিয়ে গেছেন রানার। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনেই মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল অনেক আগ থেকে। এজন্য প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতো মানুষ। যখন গোত্রে, গোত্রে ছিল দ্বন্দ্ব, সংঘাত। প্রায়ই লেগে থাকত সংঘর্ষ। এ
অবস্থায় গোত্র থেকে বেরিয়ে কেউ চলে যেতেন অন্যত্র। আবার দেখা গেছে, ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন গোত্রের বেশির ভাগ পরিবার। এ অবস্থায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন সবাই। তবে সে সময় চিঠি বা অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে সংবাদ আদান-প্রদান করতেন তারা। সে সময় ধোঁয়ার মাধ্যমেই সংবাদ পেতো গোত্রের লোকজন। পাহাড়ের উঁচু জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে, ধোঁয়ার রঙ পরিবর্তন করে, কিংবা ধোঁয়ার আকার পরিবর্তন করে তথ্য আদান-প্রদান করতো তারা। যদি ধোঁয়া গোল গোল করে ওপরে উঠতো তাহলে লোকজন বুঝে যেতো তাদের গোত্রের ওপর শত্রুপক্ষ আক্রমণ করেছে। সে হিসেবে তারা প্রস্তুতি নিতো। আবার যদি ধোঁয়া সোজা ওপরে উঠতো তাহলে বুঝে যেতো তারা জয়ী হয়েছে। কিংবা শত্রুপক্ষ পালিয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে তথ্য আদান-প্রদানে কি মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করা যায়? গ্রিক ইতিহাসে দেখা যায়, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সে সময় জয়ী পক্ষ একজন বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিজয়ের খবর পাঠান রাজার কাছে। তার আগে কথা ওঠে কে আগে গিয়ে রাজাকে খবর পৌঁছে দিতে পারবে। ২৬শে মাইল দূরত্ব রাজদরবারে এক দৌড়ে গিয়ে খবর দিতে হবে বিজয়ের। রাজি হয় পিডিপ্রাইডিস নামের একজন। যিনি কিনা ছিলেন রানার। তিনি ২৬ মাইল দৌড়ে গিয়ে রাজাকে বিজয়ের সংবাদ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। তার সম্মানেই শুরু হয় ম্যারাথন দৌড়। দিনে দিনে মানুষের আকুলতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা থেকে হরফের আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। কিন্তু তখনও কাগজ আবিষ্কার হয়নি। এ অবস্থায় পশুর চামড়া, গাছের বাকল কখনও কাদামাটিতে লিখে কিংবা চিত্র এঁকে মনের ভাব ও প্রশাসনিক আদেশ-নির্দেশ আদান-প্রদান করা হতো। এক সময় মানুষ তালপাতায় চিঠি লিখতো। ব্যবহার করতো বিভিন্ন গাছের পাতাও।

(চলবে)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status