দেশ বিদেশ
এত উন্নয়নমূলক কাজের পরও ‘স্বস্তিতে নেই’ কাদের
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ অক্টোবর ২০২১, শনিবার, ৮:৪৩ অপরাহ্ন
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে ‘মেগা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিস্তর উন্নয়নের পরও স্বস্তি নেই। এতকিছু করার পরও আমি স্বস্তি পাচ্ছি না। আমরা সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারবো না? দুর্ঘটনা অবিরাম দুর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। পাখির মতো মানুষ মরে, মাছির মতো মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়। গতকাল ঢাকার তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিন শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতার অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন। যে পরিবারের কয়েকজনও একসঙ্গে পথের বলি হয়। কখনো দুই পরিবহনের সংঘর্ষে। কখনো তিন চাকার গাড়ি ইজিবাইকে, নসিমন, করিমনে। তিনি বলেন, এত উন্নয়ন হলো। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারবো না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে। অনেকগুলো ত্রুটি আমাদের আছে সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন। চলতি বছরের গত ৯ মাসে সড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য কী পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম। পরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কতটাকা জরিমানা তুলেছেন, এটার হিসাব দিয়ে কোনো লাভ নেই। এটা কোনো বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কি না। গাড়িগুলো নিয়মমতো চলছে কিনা, গাড়ির ফিটনেস আছে কিনা, চালকের ফিটনেস- গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কিনা, গাড়ি ওভারলোডেড কিনা, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কিনা আমি এটাই দেখবো। আমার কাছে বিষয় হল দুর্ঘটনা কমেছে কিনা। এত উন্নয়নমূলক কাজের পরও ‘স্বস্তি পাচ্ছি না’ উল্লেখ্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় নিয়মতো চালাচ্ছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, দশ বছর একাধারে আছি, এই মন্ত্রণালয়ে কোনো কমিশন, পার্সেন্টেজ, কোনো প্রমোশন বাণিজ্য কখনো করিনি। আমার বিবেকের কাছে আমি পরিষ্কার। আমি এ মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবিরও বন্ধ করেছি। ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সফার, বিআরটিএ’র অফিসার ট্রান্সফার, এসব তদবির শুরুতে আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি কঠোর হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। যে কারণে তদবির বন্ধ হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। এরই মধ্যে অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগামী বছর সড়কে আমি তো বলবো বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ পর্য়ায়ে, আমি গর্ব করে বলবো, আমার মন্ত্রণালয়ে মেগা প্রকল্পগুলো পদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন ৬, মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল আগামী বছর উদ্বোধন হবে। চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে আরেকটি মেরিনড্রাইভের উদ্বোধন করা হবে। আগামী ২৪শে অক্টোবর পায়রা সেতুর উদ্বোধন হবে। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিআরটিএ-এর দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজনৈতিক তদবির হয় কারণ সবাই আসতে চায় মিরপুরে না হলে ইকুরিয়ায় (কেরানীগঞ্জ)। টাকার খনি আছে ওখানে। যেখানে গাড়ি বেশি, সেখানে সবাই ট্রান্সফার হয়ে যেতে চায়। এসব অপকর্ম আমি বন্ধ করেছি। বিআরটিএ অফিসগুলোতে সর্ষের মধ্যে ভূত উল্লেখ করে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে সেতুমন্ত্রী বলেন, এখনো বিআরটিএ অফিসগুলোতে সর্ষের মধ্যে ভূত। এই ভূত হলো দালাল। ভেতরের আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে কীভাবে বাইরে থেকে তারা দৌরাত্ম্য করে? এগুলো বন্ধ করতে হবে যেকোনো মূল্যে। আমি কোনো রাজনৈতিক সুবিধা কাউকে অ্যালাউ করি না। বিআরটিএতে অপকর্ম যারা করে, তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুন। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বন্ধ না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইজিবাইক গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ২২টি সড়কে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু অনেক জায়গায় নিষেধ মানা হচ্ছে না। ইদানিং নতুন উপদ্রব হচ্ছে মোটরসাইকেল। কোনো নিয়ম মানে না। ঢাকা শহরে মাঝে মাঝে দেখবেন, নিয়ম মেনে চলছে না, এরা রাজনীতির তরুণ কুর্কি। কিছু রাজনৈতিক কর্মী আছে, যারা একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে তিনজন করে পার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের সবার হেলমেট থাকে। কিন্তু ওই যে তরুণ তুর্কি, তাদের দেখেই বোঝা যায়, এরা রাজনৈতিক দাপট দেখাচ্ছে। লক্ষ্য কিন্তু রাজনীতি না। এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক পরিবহনের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।