দেশ বিদেশ

আরও বেড়েছে চাল তেল, মুরগি ও চিনির দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৩ অক্টোবর ২০২১, শনিবার, ৮:৪৩ অপরাহ্ন

সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে ফের দাম বেড়েছে চাল, তেল, মুরগি ও চিনির। এরমধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকার কাছাকাছি। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। ফলে সবজি ও মুরগির দাম নিম্নআয়ের মানুষদের বেশ ভোগাচ্ছে। ফলে নিয়মিতই তর্কে লিপ্ত হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর বাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় এসব পণ্যের বাড়তি দর লক্ষ্য করা গেছে। টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে ৭টি পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পণ্যগুলো হচ্ছে- সরু চাল, খোলা সয়াবিন তেল, চিনি, ব্রয়লার মুরগি, দেশি আদা, জিরা ও দারুচিনি। ফলে এসব পণ্য কিনতে আগের তুলনায় ক্রেতার নতুন করে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি সরু চালের দাম বেড়েছে ০.৮৩ শতাংশ, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১.০৯ শতাংশ, প্রতিকেজি দেশি আদা ২.৭৮ শতাংশ, জিরা ২.৮৬ শতাংশ, দারুচিনি ২.২০ শতাংশ, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ৪.৪১ শতাংশ ও সাতদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনির দাম ১.৮৯ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমদানির গতি কমছে, এমন খবরে চালের বাজারও চড়ছে। চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি এক-দেড় টাকা বেড়েছে চালের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, আগে যে মিনিকেট ৫৬ টাকায় বিক্রি করা গেছে, এখন তা ৫৭ টাকা হয়েছে। আটাশ, পাইজাম, কাটারি, নাজির, কাজল লতা, গুটি-স্বর্ণাসহ সব ধরনের চালের দামই বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ৭৫ টাকা বেড়েছে। মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন বলেন, নতুন করে সরু চালের দাম বেড়েছে। যেখানে আগে সরু চাল সর্বোচ্চ কেজি ৬৬ টাকায় বিক্রি করেছি, সেখানে কেজি ৬৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। হঠাৎ করে মিল পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
দাম বাড়ানোর পরও বাজারে নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না খোলা সয়াবিন ও পাম তেল। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫২ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি। কিছু দোকানদার আগের দামের তেল থাকায় পরিচিত ক্রেতার কাছে ১৫০ টাকায়ও বিক্রি করছেন। আগের সপ্তাহে খোলা তেলের দাম ছিল ১৪৮ থেকে ১৪৯ টাকা কেজি। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি চার থেকে ছয় টাকা। আগের সপ্তাহে খোলা পাম তেল বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ১৩৮ টাকা কেজি। গতকাল ১৪২ টাকা পর্যন্ত দাম চাইলেন দোকানিরা। গত মঙ্গলবার লিটারপ্রতি সাত টাকা বাড়িয়ে সব ধরনের ভোজ্য তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন মিল মালিকরা। নতুন দাম অনুসারে এক লিটারের সয়াবিনের বোতলের সর্বোচ্চ দাম হবে ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১৩৬ টাকা ও পাম সুপার এক লিটার ১১৮ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, কোনো পাইকারের কাছে সেই দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এর চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
বাজারে খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি আরও দুই টাকা বেড়ে ৮২ টাকায় উঠেছে। আগের সপ্তাহে ১৭৮ থেকে ১৮০ টাকায় কেনা যেতো। তবে মসুর ডালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বড় দানা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ও ছোট দানা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি।
বাজারে খুচরায় ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। ছোট বাজারগুলোতে ব্রয়লারের দাম আরও বেশি। অথচ সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেও এই মুরগির ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ২১০ টাকা কেজির সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। দেশি মুরগির দাম চাওয়া হচ্ছে মানভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মাংসের চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক কম। তাই তারা না চাইলেও মাংসের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা মালেক বলেন, আমাদের পক্ষে তো গরু বা খাসির মাংস কেনা সম্ভব না। তাই ব্রয়লার মুরগিই ভরসা। তবে এটাও মনে হচ্ছে কপাল থেকে উঠে যাবে। তিনি বলেন, বাজারে এসে দেখি ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা।
মুরগির পাশাপাশি সবজির দামও বেশ ভোগাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আগের মতোই সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর ও টমেটো। মান ভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এই দুই সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজি। শীতের আগাম সবজি শিম গত সপ্তাহের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে খুব একটা হেরফের হয়নি।
এ ছাড়া চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, পোটল, করলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
সবজি কিনতে আসা আলী বলেন, চাল, ডাল, তেল, চিনি, পিয়াজ, রসুন সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করে এমন দাম বাড়াচ্ছে। পিয়াজের দামের ওঠা-নামা বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। দেখেন কোনো কারণ ছাড়াই পিয়াজের কেজি ৮০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। সরকার শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতেই এখন ৬০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। এটা কীভাবে স্বাভাবিক হতে পারে। আসলে বাজারে কারও কোনো নজরদারি নেই, যার সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা।
এদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে চলতি সপ্তাহে ভোক্তার জন্য স্বস্তির খবর বলতে পিয়াজের দাম কমছে। গত ১৪ই অক্টোবর পিয়াজের দাম কমানোর জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক তুলে দেয় সরকার। এতে গত এক সপ্তাহে দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে পিয়াজের কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় নেমে আসে। এ ছাড়া আমদানির পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। সপ্তাহখানেক আগে দেশি ও আমদানি সব ধরনের পিয়াজের কেজি ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
নিত্যপণ্য কিনতে আসা হালিম বলেন, তেল ও চিনির দাম প্রতি সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে চাল। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামও বেশ বাড়তি। সবমিলে বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status