শেষের পাতা

রাহাত খুন

বেপরোয়া ‘ঘাতক’ সাদী

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৩ অক্টোবর ২০২১, শনিবার, ৮:২৩ অপরাহ্ন

দক্ষিণ সুরমা কলেজ ক্যাম্পাসে বেপরোয়া ছিল রাহাতের খুনি ছাত্রলীগ কর্মী সামসুদ্দোহা সাদী। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আতঙ্কে থাকতেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে বারবার নানা অঘটন ঘটানোর কারণে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এরপরও থেমে থাকেনি সাদীর অপরাধ কর্মকাণ্ড। শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগ কর্মী আরিফুল ইসলাম রাহাতকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে। সহপাঠিরা জানিয়েছেন- বড় ভাই না ডাকার কারণে রাহাতকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে সাদী। সে এমন বেপরোয়া ছিল তাকে সমীহ না করলেই সে টার্গেট করে হামলা চালাতো। ক্যাম্পাসে কেউ তাকে সম্মান না জানালে সে জোর করে সম্মান আদায় করে নিতো। সিলেটের আলোচিত এই সাদীকে এখন হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ। সঙ্গে তার বন্ধু তানভীরকেও। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের সামনে সাদী ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে রাহাতকে। রাহাত স্থানীয় তেতলি ছাত্রলীগের উপ-ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক। আর সাদী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা। রাহাতের সহপাঠি ছাত্রলীগ কর্মীরা জানিয়েছেন, রাহাতের বাড়ি পুরান তেতলী গ্রামে। আর সাদীর বাড়ি ও তানভীরের বাড়ি সিলাম পশ্চিমপাড়া গ্রামে। রাহাত দ্বাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী। রাহাতের সিনিয়র হচ্ছে সাদী। সে নগরীর কাশ্মীর গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী। সাদিও ছিল ওই গ্রুপের সমর্থক। দক্ষিণ সুরমা কলেজে সাদী একক নিয়ন্ত্রণ চালাতো। এতে কখনো বাধ সাধেনি রাহাত। এরপরও রাহাতকে প্রায়ই নানা কারণে টার্গেট করতো সাদী। জোর করে বশে আনার চেষ্টা চালাতো। বড় ভাই হিসেবে শাসন করার চেষ্টা করতো। তবে- রাহাত মাঝে মধ্যে এসবের প্রতিবাদ করলেও কখনোই মারামারিতে জড়াতো না। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাহাত সকালে নিজ বাড়ি থেকে দক্ষিণ সুরমা কলেজে আসে। মোটরসাইকেলে আরেক বন্ধুকে কলেজের বাইরে রেখে সে ভেতরে যায়। ফিরে আসার পর সাদী তার সঙ্গে তর্ক শুরু করে। কেন বড় ভাই হিসেবে মানেনা- এসব প্রশ্ন করে রাহাতকে। একপর্যায়ে সে পেছন দিক থেকে রাহাতের পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। রাহাত মাটিতে ঢলে পড়লে সাদী ও তার বন্ধু তানভীর মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর রাহাতকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এমন ঘটনায় স্তব্ধ দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মী সাদী ছিল বেপরোয়া। সে ক্যাম্পাসে এসে ক্লাসে যেতো না। বখাটেপনা করতো। রাজনীতির নামে নানাভাবে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাতো। এসব কারণে তাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে বিতর্ক ছিল। এজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে একবার বহিষ্কারও করেন। এরপরও সাদীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। দীর্ঘ ছুটি শেষে কলেজ খোলার পর ফের সাদী ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। মহড়াও দিচ্ছিল সে। সর্বশেষ রাহাতকে খুনই করে ফেললো। এদিকে, রাহাত খুনের ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল বিকাল পর্যন্ত তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পরপরই সাদী তার ফেসবুক আইডি নিস্ক্রিয় করেছে। এমনকি তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানে তাদের খোঁজ মিলছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে পুলিশ একাধিক স্থানে অভিযান চালালেও সাদী কিংবা তার বন্ধু তানভীরের সন্ধান পায়নি। পুলিশ জানিয়েছে- খুনের ঘটনার সময় তানভীরও ছিল সাদীর সঙ্গে। তারা দু’জন একসঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঘটনাকারী সাদী সামসুদ্দোহা সাদী সিলাম পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম ও তানভীর একই গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে। তাদের ধরতে বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার জানিয়েছেন- আসামিদের ধরতে অভিযানে রয়েছে পুলিশ। এর বাইরেও বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে। রাহাত খুনের ঘটনায় গত শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বিকালে লাশ দাফনের পর সন্ধ্যায় থানায় নিহতের স্বজনরা এজাহার দিলে পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলা না হলেও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বসে নেই। দ্রুতই সাদী গ্রেপ্তার হবে বলে জানান তিনি। এদিকে, তেতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের উপ-ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল হক রাহাতের খুনী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তেতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আখলাকুল ইসলাম লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ইমন। রাহাতের পরিবারকে শান্তনা জানাতে বৃহস্পতিবার রাতে তার গ্রামের বাড়িতে যান সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি রাহাতের পরিবারকে শান্তনা দিয়ে বলেন, যারা রাহাতকে খুন করেছে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এজন্য তার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status