অনলাইন

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পাকিস্তানের ইমরান সরকার

২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার, ২:৩২ অপরাহ্ন

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর পার্টি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সেই অর্থে শক্তিশালী শক্তি ছিল না কিন্তু একটি 'নতুন পাকিস্তান' তৈরির স্বপ্ন দেখিয়েছিলো দেশবাসীকে। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন ইমরান। খান তার পাঁচ বছরের মেয়াদের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু দেশের পরিস্থিতি ভাল নয়। আংশিকভাবে তার নিজের সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে এবং আংশিকভাবে বাহ্যিক কিছু কারণে দেশের অর্থনীতি আজ ধুঁকছে। পিটিআই জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখেছে ঠিকই কিন্তু সেনেটকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। যার জেরে ইমরান খান তার আইনী কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হন। তবে তার থেকেও এখন বড় সমস্যা হল আফগানিস্তান। কারণ আফগানিস্তানের অনিশ্চিত অর্থনীতি এবং অস্থির পরিবেশ ইমরানের পাকিস্তান পরিচালনা এবং নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। পিটিআই বিভিন্ন দলের অংশীদারদের নিয়ে পার্টি অফিস চালায়। তাদের মধ্যে কেউ পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীনভাবে নিজেদের দল চালাতে চায়, নয়তো পিটিআই-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়। বাকিদের অধিকাংশই সুবিধাবাদী দলের মধ্যে পড়ে, যারা ভবিষ্যৎ গোছাতে এক দল ছেড়ে অন্য দলে যেতে পা বাড়িয়ে থাকে। একই দলে ভিন্ন ভিন্ন মতের মানুষ থাকার দরুন একটি দৃঢ় সুসংহত পিটিআই সরকার চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেই কোভিড-১৯ এর কারণে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট খানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সহ চীন এবং সৌদি আরবের মত বহিরাগত দেশগুলি থেকে সহায়তা চাইতে বাধ্য করেছিল। ২০১৯-২০ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার -০.৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। এটি এখন ২-৪ শতাংশে পৌঁছেছে, কিন্তু জনসংখ্যার নিরিখে যা কিছুই নয়। পাকিস্তানের ক্রমাগত দরিদ্র আর্থিক অবস্থা এবং তার প্রবৃদ্ধি-ভিত্তিক বাজেটের অর্থায়নে রাজস্ব বাড়াতে অক্ষমতা একে কোনঠাসা করে রেখেছে। যদি বৃদ্ধির হার বজায় রাখা যায় এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পে দৃশ্যমান ব্যয় সম্ভাব্য ভোটারদের আকৃষ্ট করে তাহলে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের তেমন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। আগস্ট মাসে আইএমএফ কর্তৃক ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে কিছুটা হলেও নিঃশ্বাস নিতে পারছে ইমরানের দেশ। রেমিটেন্স বৃদ্ধির ফলে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে। বিমান ভ্রমণের সীমাবদ্ধতা অবৈধ মুদ্রার প্রবাহকে ধীর করে দিচ্ছে, মানুষ স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নতুন এবং উন্নত ব্যবস্থা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর কোভিড-১৯ এমন বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে এবং পাকিস্তান ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (FATF) ধূসর তালিকায় রয়ে গেছে যা অবৈধ অর্থ চলাচল এবং সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ করে। ২০১৫ সালে পাকিস্তান সফলভাবে সেই তালিকা থেকে বেরিয়ে এসেছিল, কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একে আবার ধূসর তালিকায় ফেলতে পারে বলে দেশটির সরকার আতঙ্কে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখানে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে, বিশেষ করে আফগানিস্তান তালেবানদের হাতে চলে যাবার পর। এটি বাইডেন প্রশাসনের জন্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে তালেবানকে সমর্থন করার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করতে পারে মার্কিন প্রশাসন। যদি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলো তালেবান শাসিত সরকারের কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তান কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। কাবুলে তালেবান শাসনের স্বীকৃতির জন্য রাশিয়া, চীন এবং আরব রাষ্ট্রগুলি নিজেদের অবস্থান নিতে পারে। এখন আমেরিকার অবস্থান কী হবে? যদি আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য তার কর্মসূচি অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেয়, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে যে, তালেবান সংক্রান্ত আলোচনায় এবং কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাহায্যকে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২২ এর নভেম্বরে ইমরান খানকে সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে তার পৃষ্ঠপোষক এবং পাকিস্তান পরিচালনায় অংশীদার হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। তিনি নিজেকে এই পদের জন্য ইতিমধ্যেই যোগ্য বলে প্রমান করেছেন। ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ। এদিকে বাজওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য একটা সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তা হয় তবে তৃতীয় বাজওয়া মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হামিদ এবং অন্যান্য প্রবীণ প্রতিযোগীরা অবসর নেবেন। কিন্তু পাকিস্তানের অস্থির রাজনীতি সেই দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে, বিশেষ করে যদি অর্থনীতি দক্ষিণ দিকে যায়। জেনারেল বাজওয়াও এই অক্টোবরে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের রদবদল করতে পারেন কারণ কিছু জেনারেল অবসর নিচ্ছেন বলে খবর। আগামী ছয় মাসে যা ঘটবে তা সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং ইমরান খানের পুননির্বাচনের সম্ভাবনা নির্ধারণ করে দিতে পারে। তাই আগামী ছয় মাস পাক রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, সেই সঙ্গে ইমরানের সামনেও হাজির কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: nationalinterest.org
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status