প্রথম পাতা

কুমিল্লার ঘটনায় চিহ্নিত কে এই ইকবাল?

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩৫ অপরাহ্ন

কুমিল্লা নগরীর নানুয়ারদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। ইকবাল হোসেন নামের ওই ব্যক্তিকে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার কথা জানানো হয়েছে। ১২টি সিসি টিভি ফুটেজ দেখে ইকবাল হোসেনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ইকবাল নগরীর সুজানগর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ আলমের ছেলে। এই তথ্য প্রকাশের পর এখন নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন এই ইকবাল মণ্ডপে  কোরআন রাখতে গেল। তাকে কেউ এ কাজ করতে প্ররোচিত করেছে কিনা। করে থাকলে কারা তাকে প্ররোচিত করেছে। যদিও এসব প্রশ্নের জবাব পেতে ইকবালকে আগে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, আমরা মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছি। সে ঘন ঘন স্থান পাল্টাচ্ছে।
পুলিশের তরফে ঘটনার মূল হোতার তথ্য প্রকাশের পর এ নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক জিজ্ঞাসা। কে সেই ইকবাল?
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবঘুরের মতো মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতো ইকবাল। বিয়ে করেছে দুটি।
কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫) তিন ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার বড়। একসময় কুমিল্লা- ফেনী সড়কে মদিনা নামের বাসের হেলপার থেকে রঙ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। মাদকাসক্ত ইকবাল কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার কচুয়া গ্রামে বিয়ে করে। এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়ার পর মাদকাসক্তিসহ নানা কারণে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে চৌদ্দগ্রামের শুভপুর ইউনিয়নের কাদৈর গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করে ইকবাল।
ইকবালের মা আমেনা বলেন, আমার নাম কেন বিবি আমেনা হলো, আমার গর্ভে কেন এমন ছেলে জন্ম নিলো। এলাকার লোকজনের কাছে আমরা খুব হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। এমন ছেলে আমার না থাকাই ভালো ছিল। তাকে যেন মেরে ফেলা হয়। তার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। সে দুইটি বিয়ে করেছে। তার অত্যাচারে আমি ও আমার পরিবারসহ আশেপাশের লোকজন অতিষ্ঠ। সে নেশা করে এবং বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ায়। সে নেশা করতো বলে কেউ কাজে  নেয় না।
গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) ওয়াই. এম বেলালুর রহমান। কুমিল্লার কোয়ালীতে ৫টি, সদর দক্ষিণে ২টি ও দাউদকান্দিতে দায়ের করা ৮ মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৭ জনকে। এর মধ্যে পৃথক দুটি মামলায় কুসিকের কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন, গোলাম কিবরিয়া ও ইকরাম হোসেন বাবুকে আসামি করা হয়েছে।  
প্রকাশিত সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইকবাল রাত ২টা ১০ মিনিটে দারোগা বাড়ি মসজিদের উত্তরপাড়ের দিক দিয়ে গ্রন্থসদৃশ কিছু একটা হাতে নিয়ে উত্তর দিকে যায়। রাত তিনটা ১২ মিনিটের দিকে সে পূজামণ্ডপের হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদা নিয়ে নানুয়ারদিঘির পশ্চিম পাড়ের রাস্তার দিকে আসে, আবার ঘুরে দারোগা বাড়ি মাজারের সড়কে চলে যায়। তবে দারোগা বাড়ির মাজারের ইমাম ইয়াছিন নূরী সাংবাদিকদের জানান, আমাদের মাজারে নতুন কোনো কোরআন শরীফ নেই এবং কোনো কোরআন শরীফ হারানো যায়নি।
কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদিঘিরপাড় এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের গঠিত অনুসন্ধানী দল। বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুসন্ধানী দলের সভাপতি ও বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) ওয়াই. এম বেলালুর রহমানের নেতৃত্বে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়। এসময় পূজামণ্ডপের লোকজনসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। এদিকে সিসি টিভির ফুটেজে থাকা ঘটনার সময় ইকবাল নামে এক ব্যক্তি নগরীর দারোগাবাড়ি মাজার সংলগ্ন মসজিদ থেকে বের হয়ে নানুয়ারদিঘির পাড় যান। অনুসন্ধানের স্বার্থে ওই এলাকাটিও পরিদর্শন করে দলটি। পুলিশ জানায়, শুক্রবার (আজ) চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ এবং শনিবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করবে অনুসন্ধানী দল। এরপরই তারা পুলিশ হেডকোয়াটার্সে প্রতিবেদন দাখিল করবে। পুলিশের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) ওয়াই. এম বেলালুর রহমান বলেন, আমরা আজকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের তরফ থেকে পরিদর্শন করে গেলাম।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়া ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। পুলিশের এখন প্রধান টার্গেট হলো তাকে গ্রেপ্তার করা। তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ তার সঙ্গে জড়িত অন্যদের তথ্য পাওয়া যাবে। রিমান্ডে থাকা আসামি ফয়েজকে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানান।
ওদিকে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার মূল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামে নিজের বাসভবনে স্থানীয় এমপি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ দাবি জানান রানা দাশগুপ্ত। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিলো। সেটা হলো ভবঘুরে। কখনো কখনো এমন যাদের ধরা হয়, কখনো বলে পাগল, না হলে বলে ভবঘুরে।
পুলিশের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে রানা দাশগুপ্ত বলেন, এই ভবঘুরে কী করে পবিত্র কোরআন শরীফ চিনলো? যদি সে ভবঘুরে হয়ে থাকে, রাস্তার লোক হয়, তাহলে নতুন বই কোত্থেকে আনলো, কে দিলো? আর হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরালো, যাতে হাতের কিছু না হয়, আবার সেখানে পবিত্র কোরআন শরীফ দিয়ে দিলো। এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। চক্রান্তকারীরা পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকারকে নিতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status