শেষের পাতা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩৩ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। এদেশে সব ধর্মের নাগরিকের অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তিনি তার দলের নেতা-কর্মীদের সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি শান্তি সম্মিলন, শান্তি মিছিল এবং শান্তিসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কোনো রকমের সংঘাত দেখা না দেয়। কারণ, এই মাটিতে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকলেই যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে। গতকাল কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত ‘অফিস ভবন’Ñ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবণ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি অনুষ্ঠানে কুমিল্লা প্রান্ত থেকে স্বাগত বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু এই অনুষ্ঠানে নবনির্মিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শন করা হয়। করোনার শিক্ষাÑ ‘যতই সম্পদ হোক দুঃসময়ে তা কাজে লাগে না’, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, মানুষ মরে গেলে এই সম্পদ পড়ে থাকবে তা কোনো কাজেই আসবে না। কাজেই যত বেশি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতে পারবো সেটাই জাতির পিতার এবং ইসলামের শিক্ষা। আর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মানুষের সেবার জন্য, সে কথাও মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। সরকার দেশের বেদে শ্রেণি, তৃতীয় লিঙ্গ এমনকি কুষ্ঠরোগীদের জন্যও ঘর-বাড়ি করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেভাবে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকেও মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের সেবা করতে হবে। জাতির পিতার ডাকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ কাঁধে অস্ত্র তুলে নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এই স্বাধীনতাকে কোনভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, কুমিল্লার যে ঘটনাটি ঘটে গেছে সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। কারণ, মানব ধর্মকে সম্মান করাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সকলের রয়েছে তেমনি অন্যের ধর্মকেও কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয় না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। আর অন্য ধর্মকে হেয় করা হলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়ে যায়। শেখ হাসিনা বলেন, কুমিল্লার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা সেটাই দেখবো। আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করেছে অন্যের ধর্মকে অসম্মান করতে গিয়ে। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার নিজের ধর্মের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। আর একটি কথা আইন কেউ হাতে তুলে নেবে না। কেউ যদি অপরাধ করে, সে যেই হোক সে অপরাধীদের বিচার হবে। আমাদের সরকার সে বিচার করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। কাজেই আমাদের সকলেরই সেই কথা মেনে চলতে হবে এবং জানতে হবে, তাহলেই সঠিক শিক্ষা আমরা পাবো। প্রতিটি ধর্মই শান্তির বাণীর কথা বলে, সকলেই শান্তি চায়। কাজেই এই বাংলাদেশে আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি যেখানে সকলের ধর্মের সাথে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে এবং এই সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। কেননা যুগ যুগ ধরেই এদেশে সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, সেখানে কোনো ধর্ম দেখে নয়, যারা রক্ত দিয়েছেন তাঁদের রক্তের সঙ্গে সকল ধর্ম একাকার হয়ে মিশে গেছে। আর এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষই একটা মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে চলবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই মাঝে-মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর প্রচেষ্টা নেয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনা ঘটার পর পরই পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যে ঘটনা ঘটেছে, ঘর-বাড়ি পুড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু টাঙিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুকনো খাবার থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার বিতরণ, কাপড়- চোপড় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং যাদের এ ধরনের ক্ষতি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকেই আমরা ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেবো। ইতিমধ্যে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আওয়ামী লীগ এমন একটা সংগঠন যে সংগঠন জাতির পিতা করে দিয়ে গিয়েছেন, যে সংগঠন এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নতি হয়, মানুষের কল্যাণ হয়। অথচ ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা মানুষকে কিছু না দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কাজেই আমরা চাই সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় আওয়ামী লীগের একটা অফিস হোক। কুমিল্লা খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল উল্লেখ করে তিনি নদী ড্রেজিং এবং জলাধার সংস্কারসহ এর অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা আমাদের অব্যাহত থাকবে। আর গ্রামগুলোতে যারা বসবাস করেন তারা যেন শহরের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে। কুমিল্লাকে বিভাগে রূপান্তরিত করার দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ফরিদপুর এবং এর আশপাশের জেলাগুলোকে নিয়ে ‘পদ্মা’ এবং কুমিল্লা ও তার আশ পাশের জেলা নিয়ে ‘মেঘনা’ বিভাগ প্রতিষ্ঠার ও প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ’৭৫ এর পর সবচেয়ে বেশি নির্মম নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক সংগঠন হিসাব উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যেখানেই মানুষের ওপর কোনো নির্যাতন হয় আওয়ামী লীগ পাশে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে। আর বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে ধ্বংস করা। তাদের অগ্নি-সন্ত্রাসে কতো মানুষ জীবন দিয়েছে, কতো নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে। তার সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া আজ তৃণমূলের মানুষ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন,‘ আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে তা দিয়েই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো’ সেটাতেই আমরা বিশ্বাস করি। কারো কাছে আমরা হাত পেতে চলবো না।
‘কু’ নাম দিয়ে বিভাগ দেবো না: কুমিল্লা নাম নিলেই খন্দকার মোশ্তাকের কথা মনে আসে, তাই ‘কু’ নাম দিয়ে বিভাগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন দু’টো বিভাগ করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিভাগের ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমি দু’টো বিভাগ বানাবো দুই নদীর নামে। এর মধ্যে একটা পদ্মা, একটা মেঘনা। এই দুই নামে দু’টো বিভাগ করতে চাই। এ সময় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার দাবি জানিয়ে বলেন, আপা (শেখ হাসিনা) কুমিল্লার নামে (বিভাগ চাই)। সারা কুমিল্লার মানুষ কুমিল্লা নামে চায়।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ‘কু’ নাম দেবো না আমি। কুমিল্লা নামে দেবো না। কারণ তোমার এই কুমিল্লা নামের সঙ্গে মোশ্তাকের নাম জড়িত। সেজন্য দেবো না। না, আমি দেবো না তো বললাম। ওই কুমিল্লা নাম নিলেই মোশ্তাকের কথা মনে আসে। এ সময় বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আপা (প্রধানমন্ত্রী) পৃথিবীর কোনো ব্যক্তির ওপর দেশের পরিচয় হয় না। বাংলাদেশের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর ওপর। মোনায়েম খানের ওপর না। বঙ্গবন্ধুকেই চেনে বাংলাদেশ, চেনে সারা বিশ্ব। যখন বাংলাদেশ চিনতো না- বলতো শেখ মুজিবের দেশ। কুমিল্লা নামে বিভাগ হলে অন্য জেলাগুলো আসতে চায় না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নামে (বিভাগ হলে) অন্য জেলাগুলো আসতে চায় না। আমরা চেষ্টা করেছি তো। নোয়াখালী আসবে না, ফেনী আসবে না, চাঁদপুর আসবে না, লক্ষ্মীপুর আসবে না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসবে না। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম হোক, ফেনী চায় ফেনী নাম হোক, চাঁদপুর নাম তো আরও সুন্দর, চাঁদপুর চায় চাঁদপুর হোক। বাহাউদ্দিন বলেন, আপা আপনি দিলেই সবাই মানবে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তুমি (বাহাউদ্দিন) সবার কাছ থেকে লিখিয়ে আনো। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম সবার কাছ থেকে লিখিয়ে নিয়ে আসো। যাও। এ সময় রসিকতা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে তুমি থাকো, তোমার হবে না। যদি বিভাগ চাও আমি মেঘনা নামে করে দিতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ফরিদপুর বিভাগ করবো পদ্মা নামে, ফরিদপুর নামও দিচ্ছি না। ফরিদপুর সেটা হবে পদ্মা আর কুমিল্লা হবে মেঘনা নামে। কারণ ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার-আমার ঠিকানা’। এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। তিনি বলেন, কুমিল্লার আসল নাম ছিল ত্রিপুরা। এটা ভুলে যেও না এখনো পুরনো কাগজে ত্রিপুরা লেখা আছে। পুরোনো দলিলে ত্রিপুরা লেখা আছে। বিভাগের নামকরণ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক আছে আমরা প্রস্তাব রাখলাম যদি পছন্দ হয় ভালো, না হলে হবে না। আমি কি করবো। আমাদের দু’টি বড় নদী, নদীর নামটা আমি সম্মান দিয়ে রাখতে চাই। যে সেøাগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি সেই স্লোগান দিচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status