খেলা

ওমান ক্রিকেটের রূপকার এক ‘হিন্দু শেখ’

ইশতিয়াক পারভেজ, মাসকাট (ওমান) থেকে

২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫৪ অপরাহ্ন

হিন্দু শেখ! সে আবার কীভাবে হয়? শেখতো আরবদের উপাধি। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু শেখের বসবাস ওমানে। তার হাত ধরেই দেশটির ক্রিকেটের পথচলা শুরু। তার আগে হিন্দু শেখের রহস্যটা বলে দিচ্ছি আপনাদের। তখনও ওমান বিশ্বের ‘অয়েল পাওয়ার’ হয়ে উঠেনি। তখন দেশটির সমুদ্রবন্দর দারুণ শক্তিশালী। ওই সময়ে এক হিন্দু ব্যবসায়ী সম্ভাবনাময়র মাসকাটে গড়ে তোলেন এন্টারপ্রাইজ খিমজি রামদাস গ্রুপ। সেই সময় ওমানের সুলতান সা’ইদ রামদাসের পরিবারের কাছ থেকে ব্যবসায়িক পুঁজি ধার করতেন। তিনি হলেন লিজেন্ডারি সুলতান, প্রয়াত কাবুজের বাবা। পরবর্তীতে কাবুজ সুলতান হলে রামদাশের নাতি কানাকসি খিমজিকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দান করেন। এপর ১৯৭৯তে তার হাত ধরেই ওমান ক্রিকেটের যাত্রা শুরু। সেই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১তে আইসিসি তাকে লাইফ টাইম সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। সেইসঙ্গে সুলতান কাবুজের কাছে পেয়েছিলেন ‘শেখ’ উপাধি। ২০১২-এর অক্টোবরে এই আল আমেরাত স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেছিলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আশরাফুল হক। তার ধরে ওমান ক্রিকেটেও ঠুকে পড়ে বাংলাদেশ। বর্তমানে এই মাঠের ১৫ জন গ্রাউন্ডসম্যানই বাংলাদেশের প্রতিনিধি।
শেখ বা শাইখ সাধারণত একটি মুসলিম উপাধি যা নেতা, শিক্ষক বা সন্মানীত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কানাকসি খিমজিই হচ্ছেন পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু যার রয়েছে ‘শেখ’ উপাধি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে খিমজি মারা গেলে তার ছেলে পঙ্কজ খিমজি তার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে কানাকসি খিমজি মারা যাওয়ার আগেই ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠ আইসিসি টেস্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায়। বসেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। এই মাঠেই বাংলাদেশ খেলছে বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। ধূসর পাহাড়ে ঘেরা   স্টেডিয়ামটির নাম আল- আমেরাত। ওমান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মধ্যদিয়েই শুরু হয়েছিল এই মাঠে অন্তর্জাতিক ক্রিকেটের লড়াই। আইসিসি’র নিয়ম অনুসারে এখনো বিশ্বের সবগুলো ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ এলইডি ফ্লাডলাইট না বসালেও। আল-আমেরাতে রয়েছে সেই শুভ্র দুধ সাদা ফ্লাইড লাইট। যা বাংলাদেশও এখন পর্যন্ত শুরু সবাতে পারেনি।
এই আজকের এই অধুনিক স্টেডিয়ামের গল্পটা শুরু হয়েছিল ধুলা, আর পাথুরে ময়দানে।  পারিবারিকভাবে ক্রিকেট অনুরাগী কানাকসি খিমজি হলেন ওমান ক্রিকেট বোর্ডের ফাউন্ডিং চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালে তার হাত ধরেই ওমান ক্রিকেটের যাত্রা শুরু। আজকের ওমান ক্রিকেটের যে অবয়ব তার জন্য খিমজি’র অবদান সবচেয়ে বেশি। ওমান ক্রিকেট একাডেমি, আমেরাত স্টেডিয়াম তার ভিশনেরই একটি অংশ। আরব আমিরাতের সাথে এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ সহ-আয়োজক হিসেবে অন্যতম অংশীদার ওমান। আর বিশ্বের একমাত্র হিন্দু শেখের হাত ধরে গড়া ওঠা আল-আমেরাত স্টেডিয়ামই হলো এদেশের ক্রিকেটের প্রধান বিজ্ঞাপন।
ওমানের ক্রিকেট মানেই খিমজি পরিবার। তেমনি এর ক্রিকেটাররাও খিমজি পরিবারেই অধিনে। কারণ এখনো ক্রিকেটটা পুরোপুরি পেশাদার কাঠামোর মধ্যে আসেনি। এমনকি ওমানের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও এখন পর্যন্ত ‘সেমি প্রফেশনাল’ পর্যায় পার করতে পারেননি। অধিনায়ক জিশান মাকসুদ থেকে শুরু করে সবাই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। খেলা না থাকলে তাঁদের অনেককে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসও করতে হয়। খেলার সময়ে ছুটিও পান, তবে বিনা বেতনে। খেলতে এলে অবশ্য তাঁদের পুষিয়েও যায়। ওই সময়ে অফিস থেকে না পাওয়া বেতনটা দেয় ওমান ক্রিকেট বোর্ডই। খেলা শেষে আবার তাঁরা ফিরে যান নিজ নিজ অফিসে, ডুবে যান কাজে। কোথায় চাকরি করেন তারা? সেটিই জানাচ্ছিলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে ওমানেও কাজ করা বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম, ‘ওমান ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ ভাইদের অনেকগুলো পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেগুলোতেই ক্রিকেটারদের চাকরি দিয়ে রাখা হয়। ওমানে জমজমাট কর্পোরেট ক্রিকেট লীগও হয়। সেখানে ওরা খেলে। আর জাতীয় দল বা ওমানের প্রতিনিধিত্ব করে, এমন কোনো দলের হয়ে খেলার সময় এলে ওরা ছুটি পায়।’ বিনা বেতনের ছুটি হলেও টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা হয় না। কারণ ক্রিকেটেও তো ‘বস’ সেই পঙ্কজ খিমজিই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status