বিশ্বজমিন

বৃটেনে দিনে এক লাখ ছাড়াতে পারে সংক্রমণ, রাজনীতিকদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান

মানবজমিন ডেস্ক

২১ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ২:১৬ অপরাহ্ন

বৃটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পূর্বাভাসে বলেছেন, বৃটেনে দিনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রেকর্ড এক লাখে পৌঁছাতে পারে। এ জন্য জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে মুখে মাস্ক পরার মতো কিছু দায়িত্ব রাজনীতিকদের আছে এবং এ বিষয়কে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করতে আহ্বান জানান তিনি। সংক্রমণ বাড়ার কারণে বিভিন্ন মহল থেকে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়ার দাবি বা ‘প্লান বি’ প্রয়োগের দাবি উঠলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, করোনার এই মহামারি শেষ হয়ে যায়নি। তবে স্বাস্থ্যসেবাকে সুরক্ষিত রাখতে যা প্রয়োজন, তিনি তা করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। বলেন, আমরা মনে করি না যে- বর্তমানে যে চাপ রয়েছে, তাতে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাত (এনএইচএস) অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এ সময় মন্ত্রী বৈধ লাখ লাখ মানুষকে করোনার টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, এর মধ্য দিয়ে মানুষ তার স্বাধীনতাকে খুঁজে নিতে সক্ষম হবে। কি পরিমাণ মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলে আবার বিধিনিষেধ দেয়া হবে? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে চাননি তিনি।
হাউজ অব কমন্সে অথবা ভরপুর উপস্থিতি এমন মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল বা কনজার্ভেটিভ দলের বেশির ভাগ এমপি মুখে মাস্ক পরতে চান না। অন্যদিকে বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী কোসি কারতেং লোকজনকে উৎসাহিত করছেন বড়দিনের পার্টি আয়োজন করতে। এসব নিয়ে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি মেনে নেন এটা একটা ইস্যু। বৃটেনের নতুন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সির প্রধান জেনি হ্যারিস, এনএইচএস ইংল্যান্ডের মেডিকেল পরিচালক স্টিফেন পোয়িসকে সঙ্গে নিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাভিদ। তিনি বলেছেন, এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবস্থায় মন্ত্রী হিসেবে, এনএইচএসের সদস্য হিসেবে, ইউকেএইচএসএ’র প্রধান হিসেবে আমাদের সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদেরকে উদাহরণ হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে আমি নিশ্চিত বিপুল পরিমাণ মানুষ আমাদের কথা শুনবে।
বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সের চেম্বার এমন একটি এলাকায়, যেখানে ভেন্টিলেশন বা বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা সীমিত। এর আগে যখন তাতে এমপিরা গাদাগাদি করে মাস্ক ছাড়াই বসেছিলেন, তখন তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীরা সেই উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে গেছেন। তারা বলেছেন, তারা গাইডলাইন্স মেনে চলছেন, এমপিরাও তাই। তবে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কণ্ঠ ছিল মলিন। বার বারই তিনি বলেছেন, ইংল্যান্ডের নিত্যদিনের কোন আনুষ্ঠানিক বিধিনিষেধের নেই। তবে এখনও এই ভাইরাস বিদায় নেয়নি। বুধবারই বৃটেনে নতুন করে কমপক্ষে ৪৯ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিন মারা গেছেন ১৭৯ জন। এই গ্রীষ্মে দেয়া সতর্কতা নতুন করে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে পারে।
তার ভাষায়, আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, এই ভাইরাস দীর্ঘ সময় আমাদের সঙ্গে অবস্থান করবে। ফলে এই হুমকি থেকেই যাবে। আমাদের প্রিয়জনের প্রতি এটা একটা হুমকি, আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি তার প্রতিও এটা একটা হুমকি। আমরা পুরো জাতিকে স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছি।
ওদিকে বুধবার বৃটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) বলেছে, স্পষ্টতই এখন ‘প্লান-বি’ কার্যকরের সময়। এটা কার্যকর করলে ইংল্যান্ডে করোনা ভাইরাস সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধ আবার ফিরবে। বৃটেনে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এটা। তারা বলেছে, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকার। এটা বিস্ময়করভাবে উদ্বেগজনক ব্যাপার এবং ইচ্ছাকৃত অবহেলা। বিএমএ কাউন্সিল চেয়ার ড. চান্দ নাগপাল বৃটিশ মন্ত্রীদের সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, করোনা মহামারি আমাদের পিছনে পড়েছে- এমন মিথ্যা অভিব্যক্তির মাধ্যমে লাখ লাখ বৃটিশকে নিয়ে ‘ব্রেক অফ’ করছেন। তিনি আরো বলেন, এই তো গত সপ্তাহে দুটি সিলেক্ট কমিটি দেখতে পেয়েছে যে, করোনা ভাইরাস সঙ্কটের সময় সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতির ক্ষেত্রে আন্তজার্তিক অঙ্গনের বাইরে রয়েছে বৃটেন। আমরা দ্রুত আবার এমন একটি পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি, যেখানে সরকার খুব বেশি বিলম্ব করছে। পদক্ষেপ নিতে একই রকম সুরে কথা বলছে। এখনই সময় অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার। তা নাহলে আমাদেরকে পরে আরো বড় পদেক্ষপ নিতে হবে।
মঙ্গলবার এনএইচএস কনফেডারেশন বলেছে, সরকারকে অবিলম্বে করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘প্লান বি’ কার্যকর করতে হবে। এর প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ টেলর বলেছেন, মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ দিনে এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার যে সতর্কতা দিয়েছেন, তাতেই বিধিনিষেধ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে। জবাবে মন্ত্রী জাভিদ বলেছেন, এনএইচএস কনফেডারেশনের প্রতি তার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। তবে এখন তিনি প্লান-বি’র দিকে অগ্রসর হবেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status