প্রথম পাতা

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা

কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার

২০ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, ৯:৪২ অপরাহ্ন

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এই তথ্য জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সাম্প্রদায়িক হামলায় প্রশাসনের গাফিলতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেবিনেট মিটিংয়ে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যে, এটা আগেই বলে দেয়া হয়েছে হোম মিনিস্ট্রিকে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) যে এখানে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই ধরতে হবে। তিনি বলেন, পাশাপাশি জনগণকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। রিঅ্যাকশন করা যাবে না। আমার কোরআনের যদি কেউ অবমাননা করে, কোরআন আমাকে দায়িত্ব দেয়নি যে ঘরবাড়ি ভাঙবো, এটা ঠিক না; এটা অপরাধ। যদি কেউ ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর কিছু করে তাহলে প্রতিবাদ করতে পারি, সরকারের কাছে দাবি করতে পারি যে ধরে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কাজ করবো, এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, এটা ঠিক না। ইসলামে সবচেয়ে বড় অপরাধ ফিতনা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যারা এগুলোর সূত্রপাত করলো তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবে। পাশাপাশি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে বলা হয়েছে, ছোটখাটো বিকৃতি কেউ করলেই যে এইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, এটা ঠিক নয়। এটা করা যাবে না। ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না।
দেশে ধর্ম নিয়ে যেন কেউ বাড়াবাড়ি না করে: প্রধানমন্ত্রী
দেশে ধর্ম নিয়ে যেন কেউ বাড়াবাড়ি না করে সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবে বলে তিনি জানান। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এতো রক্তক্ষয়, এতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেছে আর যেন এ ঘটনা না ঘটে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ, এখানে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। আমাদের সংবিধানেও সেই নির্দেশনা দেয়া আছে। আমাদের ইসলাম ধর্মও সেই কথাই বলেছে। নবী করিম (সা.)-ও বলেছেন যে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কাজে সেই বাড়াবাড়ি যেন কেউ না করে সেটাও আমরা চাই এবং এদেশে সব মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এই যে পক্ষপাতিত্ব এটার কারণটা কী? কারণটা খুব স্পষ্ট। কারণ, খুনি মোশতাকের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। রাসেলকে সর্বশেষে হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিল, ওই ছোট্ট শিশুটি যেন না বাঁচে। এই নির্দেশটা কে দিয়েছিল? কারা দিয়েছিল? সব শেষে, সবচেয়ে এটাই কষ্টের। তিনি বলেন, আমি জানি আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখায় ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড়। কিন্তু সেই দেশেই আমি চাই প্রত্যেকটা মানুষের জীবন যেন সুন্দর হয়, উন্নত হয়। প্রত্যেকটা মানুষ যেন তার অন্ন, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়- যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। আমরা যেন তা পূরণ করতে পারি সেটাই আমার লক্ষ্য। শিশুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি- এদেশে শিশুরা যেন এই নির্মমতার শিকার আর না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো- এখনো আমরা দেখছি সেই নির্মমতা, এখনো মাঝে মাঝে দেখি এবং দেখেছি। কিন্তু এটা যেন আর না হয়। আমরা দেখেছি আগুন দিয়ে কীভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে- কীভাবে জ্যান্ত মানুষগুলোকে, শিশুকে পর্যন্ত। এই খালেদা জিয়া বিরোধী দলের থাকতে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাপ দেখেছে চোখের সামনে সন্তান আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। সেই রকম নিষ্ঠু হত্যাকাণ্ড এই বাংলাদেশে ঘটেছে এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। আমি এটাই চাইবো- এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে তারা যেন এই ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কি ঘটতো। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা যেকোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকবে না, তাদের জন্য একটা ঠিকানা থাকবে। তারা যেন একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে। আমাদের একটাই লক্ষ্য একটা শিশু তার যে জ্ঞান, মেধা সেটা যেন বিকশিত হতে পারে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি। শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল ছোটবেলা থেকে সহজ-সরল ছিল। তার কোনো দাবি ছিল না। তার স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে সেনা অফিসার হবে। সে কারণে ছোটবেলা থেকেই টুঙ্গিপাড়ায় শিশুদের নিয়ে প্যারেড করতো। প্যারেড করার পর তাদের পুরস্কার হিসেবে এক টাকা করে দিতো। সবাইকে জমা-কাপড়ও কিনে দিতো। তিনি বলেন, আজকে রাসেল নেই। কিন্তু এ দেশের হাজার হাজার শিশু যেন নিরাপত্তা পায়। তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। তারা যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। সুকান্তের ভাষায় বলি, ‘এ বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ বিশ্বকে পারবো কিনা জানি না। এ দেশকে যেন শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। সবাই দোয়া করবেন। সরকারপ্রধান বলেন, সব শিশু যেন সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এ দেশের শিশুরা যেন আর নির্মমতার শিকার না হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এখনো সেটি দেখছি। খালেদা জিয়ার বিএনপি গাড়িতে আগুন দিয়ে বাপের সামনে শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে। সুশীলদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে, তারা যেন এসব ঘটনা দেখে যে, বাংলাদেশে কী ঘটতো। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী পরিচালনায় দক্ষ দাবিদারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ থেকে ৮১’র মধ্যে ১৯টা ক্যু হয়েছিল। সেই সময়ের সেনাবাহিনী ডিসিপ্লিন দাবি করে কীভাবে? জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি, হাজার হাজার সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের ওপর জিয়ার অত্যাচারের খড়গ পরে তার দলও অব্যাহত রেখেছে। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status