প্রথম পাতা

আল্টিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১৯ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৪১ অপরাহ্ন

সম্প্রতি কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও অংশগ্রহণ করেন।  বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলায় জড়িদের গ্রেপ্তার করে ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ ৭ দফা দাবি করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয় ওই সমাবেশ থেকে।

দাবিগুলো হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মন্দিরগুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে,  রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, জাতীয় সংসদে আইন করে মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করতে হব,  হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে, জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে ৭ দফা দাবি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও আন্দোলনের সমন্বয়ক জয়দ্বীপ দত্ত। এ সময় জয়দ্বীপ দত্ত বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই দাবিগুলো যদি মেনে নেয়া না হয়, অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেন, তাহলে আগামীকাল (আজ) বিকালে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো। এই কর্মসূচি আরও কঠোর হবে বলে জানান তিনি।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকেন। পরে সেখানে যোগ দেয় ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভের কারণে শাহবাগ ও তার আশেপাশে এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়ার আগে ঢাবির টিএসসি এলাকায় জড়ো হন প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে উদ্দেশ্যে মিলিত হন তারা। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্গোৎসবে সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ ধরনের হামলা ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী রতন চক্রবর্তী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এখন বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। উগ্রবাদী একটি গোষ্ঠী নিয়মিতই সংখ্যালঘুদের নিজেদের হামলার বস্তুতে পরিণত করছে। আশা করি সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় এনে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাবে।
পার্থ নামে আরেক শিক্ষার্থী আক্ষেপের সুরে জানান,  এসব পূর্বপরিকল্পিত হামলার যদি সুষ্ঠু বিচার সরকার করতে না পারে তাহলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
বিক্ষোভ থেকে হামলার শিকার হওয়া মন্দিরগুলোর সংস্কার ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ ও জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য যারা দায়ী, সেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এমন হামলার ঘটনা দেখতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল, ঢাবির জগন্নাথ হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকারসহ অনেকে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
বেলা ২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী জয়দ্বীপ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৭ দফা দাবি প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করেছি। তারা দাবিগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা না হয় এবং আর কোন মন্দিরে হামলা হয় তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক কর্মসূচি গ্রহণ করবো। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা এ প্রতিবাদ সমাবেশ শেষ হয় দুপুর আড়াইটার দিকে। পরে সেখান থেকে  বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টিএসসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা এবং হতাহতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন)। গতকাল সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইসকন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে ইসকন নেতৃবৃন্দ বলেন, এই দেশ সকলের। কারা নানা অজুহাতে হামলা চালিয়ে হিন্দুদের দেশছাড়া করতে চায়, তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। হিন্দুরা এ দেশ ছেড়ে যেতে চায় না। সরকারকে এ দেশে হিন্দুদের শান্তিতে বসবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও সহিংসতার ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের হামলা কখনো বন্ধ হবে না। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব।
ইসকনের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈর সভাপতিত্বে ও ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারীর পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ইসকনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জগদ্‌?গুরু দাস ব্রহ্মচারী, বিমলা প্রসাদ দাস, শুভ নিতাই দাস ব্রহ্মচারী ও সুমুখ গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন ফুড ফর লাইফের পরিচালক রূপানুগ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, জাগ্রত ছাত্রসমাজের পরিচালক দ্বীজমনি গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌?যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী এবং বাসুদেব ভক্ত ফাউন্ডেশন, ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন গোস্বামী পুলক প্রমুখ। মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে তারা শাহবাগে বিক্ষোভে অংশ নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status