খেলা

মাসকাটে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ইশতিয়াক পারভেজ, মাসকাট (ওমান) থেকে

১৯ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:০২ অপরাহ্ন

ওমানে ৯ লাখ বাংলাদেশির বসবাস। হাঁটতে চলতে আপনি আপ্লুত হবেন বাংলা কথা শুনে। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেও আপ্যায়িত হবেন অতিথির মতো। কারণ,  সেখানেও নিজ দেশের  কাউকে না কাউকে পাবেন স্টাফ বা মালিক হিসেবে। টাইগার ক্রিকেট নিয়ে ওমানবাসীর  আগ্রহ না থাকলেও আল আমেরাত স্টেডিয়ামে চোখ রেখে বসেছিলেন সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেকেই পকেটের টাকা খরচ করে টিকিট কিনে মাঠে গেছেন। কেউ অনেক চেষ্টা করেও টিকিট কিনতে না পেরে মাঠের বাইরে বসে কেঁদেছেন। আর সেই ম্যাচই কিনা হেরে গেলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল! তাও আইসিসির সহযোগী দেশ স্কটল্যান্ডের কাছে!  মাত্র ১৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬ রানের হার! কোনভাবেই যেন মানতে পারছেন না ভক্তরা। হারের পরই মাসকাটে টাইগারভক্তদের হৃদয়ে যেন রক্তক্ষরণ শুরু হয়। খেলা শেষে আমেরাত স্টেডিয়ামের বাইরে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জড়িয়ে পড়েন তর্কে। কেন হারলো এই ম্যাচ? প্রায় সবার অভিযোগের আঙুল, রাগ, ক্ষোভ মুশফিকুর রহীমের দিকে। তবে কেউ কেউ দুষছেন  বোলিং বিভাগকেও। মিঠু তানভির আহমেদ নামের এক ভক্ত  দৈনিক মানবজিমনকে বলেন, ‘দেখেন মাত্র ১৪০ রান। বুঝলাম দুই ওপেনার আউট হয়েছেন। কিন্তু মুশফিকতো সেট হয়েছিলেন। ৩৮ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। তাহলে সেই সময় কেন তিনি এমন একটা শট খেললেন। তার প্রিয় সেই সুইপশট আর কত ডোবেবে বাংলাদেশকে। তিনি যদি সেই সময় এমন শট না খেলতেন তাহলে আমাদের পথটা সহজ হতো। আমরা বলছি না অন্য ব্যাটাররা ভালো করেছে। কিন্তু এটি টি-টোয়েন্টি খেলা, এখানে যে সেট হয়ে যাবে তাকেই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে।’
এক তরফা  মুশফিককে দায় দেয়াতে ক্ষেপে গেলেন আরো কিছু সমর্থক। তাদের দাবি  শুধু ব্যাটিং নয়,  বোলাররাও ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রবাসী বাংলাদেশি সমর্থক সুমন মিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি না শুধু মুশফিকের দায়। সে চেষ্টা করেছে। আমার মনে হয় বোলারদের কারণেই হার। দেখেন দেশে  দলের সঙ্গে খেলেছে পেসার হিসেবে শরিফুল ইসলাম। কিন্তু এখানে এসে নামিয়ে দেয়া হলো তাসকিন আহমেদকে। সেটি কেন! আর সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখে মনে হয়েছে তারা বেশ ক্লান্ত। সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটার, যে মাত্রই আইপিএল খেলে এসেছে তার এমন পারফরম্যান্স মেনে নেয়া যায় না। মোস্তাফিজের পারফরম্যান্সও মেনে নেয়া যায় না। যখন ওদের ৫২ রানে ৬ উইকেট পড়ে গেছে তখন থেকেই আমরা দেখেছি বোলাররা কেমন যেন হয়ে গেল। তারা মনে করেছে স্কটল্যন্ডকে ১০০’র নিচেই থামানো যাবে। কিন্তু এটা ক্রিকেট। স্কটল্যান্ড দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ম্যাচে ফিরতে হয় কিভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে হয়।’ অন্যদিকে আরেক ভক্তের অভিযোগের আঙুল অধিনায়কের দিকে। তিনি বলেন, ‘মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যদি সেই সময় রানের চাকা সচল রাখতো তাহলে আমাদের এতগুলো বল নষ্ট হতো না। সাকিব, মুশফিক ও অধিনায়ক তিনজনই যেন টি-টোয়েন্টি না টেস্ট খেলতে মাঠে নেমেছে এমনটাই মনে হয়েছে। আর ফিল্ডিও ভালো হয়নি। যেমনটি করেছেন স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।’ সোমবার স্বকটল্যান্ডের বিপক্ষে টসে জিতেও ফিল্ডিং নেয়া সত্যিকার অর্থেই বুমেরাং হয়েছে। কারণ, আল আমেরাত মাঠের গ্রাউন্ডসম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এখানকার উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ। এর প্রমাণ ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে ওঠে ২০৭ রান। রিয়াদ রাতের শিশিরের যে ভয় পেয়েছিলেন মরু অঞ্চলে তা যথার্থ নয়। রাতে শীলত হাওয়া থাকলেও শিশির পড়ার সম্ভাবনা থাকে একেবারেই কম। তাই ধারণা করা হচ্ছে অধিনায়ক তার দলের ব্যাটারদের ওপর শুরু থেকেই আস্থা রাখতে পারেননি। কারণ, সবশেষ দেশের মাঠে নিজেদের মতো করে যে উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে সেখানে বোলাররা সফল ছিল। কিন্তু ওই দুই সিরিজেও ব্যাটারদের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হয়তো সেই কারণেই টাইগার অধিনায়ক ব্যাটারদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। কিন্তু হার দিয়েই সেই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বটল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল রণ পরিকল্পনা মাঠে প্রয়োগের বিষয়ে। শারিরীক ভাষাও জয়ের জন্য উদগ্রীব ছিল না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status