প্রথম পাতা

শরিফুলের জাদু নিঃস্ব বহু পরিবার

মরিয়ম চম্পা

১৮ অক্টোবর ২০২১, সোমবার, ১০:২৬ অপরাহ্ন

মো. শরিফুল ইসলাম। রাজধানীর হাজারীবাগে আশরাফুল এন্টারপ্রাইজ নামে রয়েছে নিজস্ব একটি কম্পিউটারের দোকান। স্থানীয় অনেকের কাছে তিনি জাদুকর শরিফুল হিসেবে পরিচিত। মুহূর্তেই যেকোনো দলিলের হুবহু জাল দলিল তৈরি করে ফেলতে পারেন। শরিফুল বিভিন্ন অভিজাত এলাকার জমির জাল দলিল তৈরি করে নিঃস্ব করেছেন বহু পরিবারকে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম গ্রেপ্তার শেষে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য দিয়েছে প্রতারক শরিফুল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একদল প্রতারক এবং জমি বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত দালালরা মূলত শরিফুলের দোকানের কাস্টমার। নামমাত্র টাকা দিয়ে কোটি কোটি টাকার জমির দলিলের হুবহু জাল দলিল তৈরি করতে পারায় বিশেষ কদর রয়েছে তার। এ ছাড়া তিনি ভুয়া সার্টিফিকেট এবং ভোটার আইডি কার্ডও তৈরি করে থাকেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কলেজের গণ্ডি না পেরোনো শরিফুল এতটাই দক্ষ যে তার দোকানের বিশেষ চাহিদা রয়েছে দালাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে।
দোকানের কম্পিটারে বিভিন্ন উন্নতমানের সফটওয়ার ব্যবহার করে খুব কম সময়ের মধ্যে চাহিদা মোতাবেক জাল দলিল, জেএসসি, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে পাবলিক পরীক্ষার যেকোনো সার্টিফিকেট, ভোটার আইডি কার্ড টাকার বিনিময়ে মেলে শরিফুলের কাছে। গত ছয় বছর ধরে এই প্রতারণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত সে। প্রতিটি জাল দলিলের বিপরীতে শরিফুল পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। খুব বেশি পড়ালেখা না করলেও প্রযুক্তিগত বিষয়ে সে খুবই দক্ষ বলে জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, মানুষের কষ্টের সম্পদ যখন সেটার হুবহু আরেকটি দলিল তৈরি হয়ে অসাধু এবং সুযোগ সন্ধানি চক্রের হাতে চলে যায় তখন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পথে বসার মতো অবস্থা হয়। শরিফুলের কাছে বিষয়টি খুবই হালকা ও ছোট মনে হলেও তার তৈরি করা জাল কাগজের অপব্যহারের শিকার হয়েছেন অনেকেই। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলশান, হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকার অসাধু চক্ররাই জাল দলিল তৈরিতে শরিফুলের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। এক শ্রেণির লোক আছে যারা রাজধানীতে জমির ব্যবসা করেন, কাউকে হয়রানি করতে তাদের কাছে একটি জাল দলিলই যথেষ্ট। শরিফুলের দোকানে কারা জাল দলিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে আসতেন তাদের সন্ধান করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, কোটি টাকার সম্পদের মূল দলিলের বিপরীতে যখন হুবহু জাল দলিল এক শ্রেণির অসাধু চক্রের হাতে চলে যায় তখন ভুক্তভোগী ব্যক্তির পথে বসার মতো অবস্থা তৈরি হয়। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় জমির দাম বেশি হওয়ায় দালাল চক্র সেই সুযোগটি কাজে লাগায়। ভুয়া এবং জাল দলিল তৈরির সঙ্গে যুক্ত চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, জাল দলিল তৈরির ক্ষেত্রে শরিফুলের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছেন কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status