খেলা

ওমানে কথা বলতে মানা বাংলাদেশি মাঠকর্মীদের

ইশতিয়াক পারভেজ, মাসকাট (ওমান) থেকে

১৮ অক্টোবর ২০২১, সোমবার, ৯:১৭ অপরাহ্ন

রাজধানী মাসকাট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ওমান ক্রিকেট গ্রাউন্ডস। যার নাম আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেখানে যেতে যেতে পথের যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আর পাহাড় কেটেই তৈরি হচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ নানা দৃষ্টনন্দন স্থাপনা। তবে জানেন কি এই শহর নির্মাণে রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের হাতের জাদু। শুধু কি তাই শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির উপর সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো স্টেডিয়ামটিও যে তাদের হাতেই গড়ে উঠেছে। এই মাঠেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্কটল্যান্ডের। গেল দু’দিন মাঠে প্রবেশ করতেই চার পাশ থেকে ভেসে আসে নানা বাংলা শব্দ। কেউ বলছেন- ‘ঘাস কাটার ছুরি নিয়ে আয়’। আবার কেউ বলছেন- ‘কি করবো এখন, পানি লাগবে?’। দেশ থেকে ৩৫০০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রাচ্যের একটি মাঠে বাংলা কথা শুনে আপনি আপ্লুত হবেন নিঃসন্দেহে। হ্যাঁ, আমেরাতের সবুজ মাঠটিও গড়ে উঠেছে ১৫ বাংলাদেশির হাতের ছোঁয়ায়। এখানে প্রধান কিউরেটর ভারতের হলেও মূল কাজটা করেন বাংলাদেশিরাই। তবে অবাক হতে হলো তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে। নিজেরা নিজেরা কথা বললেও কোনো রকম আলাপ করতে নারাজ দেশের সাংবাদিক এমনকি ক্রিকেটারদের সঙ্গেও। এমনটাই যে নিদের্শ ওমান ক্রিকেট বোর্ডের। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুখ খুললেন একজন। বলেন, ‘আসলে আমাদের কড়াভাবে নিষেধ করা আছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য। আমরা এই দেশে থাকি, তাই ওমান ক্রিকেট বোর্ডের এমন নিষেধ মানতেই হবে।’
বাংলাদেশি গ্রাউন্ডসম্যানদের কথা বলতে নিষেধ করার কারণটি খুঁজতে গিয়ে জনা গেল ভিন্ন এক তথ্য। সবারই জানা টাইগাররা এই মাঠে খেলবে তিনটি ম্যাচ। প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগেনি। যেহেতু উইকেট তৈরিতে বাংলাদেশিরা আছে তাই তথ্য যেন বের হয়ে না যায় তাই তাদের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা। বাংলাদেশ জেনে যেতে পারে কেমন উইকেট হবে ম্যাচের দিন। তাই শুধু বাংলাদেশি সংবাদকর্মীই নয় ক্রিকেটারদের সঙ্গেও কথা বলতে বারণ করা হয়েছে আল আমেরাত স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ডসম্যানদের। শনিবার বাংলাদেশ দল যখন অনুশীলন করে তখন গ্রাউন্ডসম্যান দূর থেকে তাদের দেখেছেন। কিন্তু সামনে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেনি তারা। এতেই অনুমান করা যায় কতটা নজরদারিতে তারা!
গেল চারমাস ধরেই বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ আয়োজনে আল আমেরাত মাঠ তৈরিতে ব্যস্ত বাংলাদেশি গ্রাউন্ডসম্যানরা। তবে ওমান ক্রিকেটের এই মাঠটি তৈরির গল্প শুরু আরো অনেক আগেই। ২০০৮ এর জুলাইয়ে ওমান ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেট মাঠ নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ২০১২ এর ১৫ অক্টোবর এর নির্মাণ কাজও উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান নির্বাহী আশরাফুল হক। বলতে গেলে আমেরাত স্টেডিয়ামের পথ চলা বাংলাদেশিদের হাত ধরে। মাঠটিতে এসিসির পশ্চিমা অঞ্চলগুলির টি-টোয়েন্টি খেলার আয়োজন করে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে, পরে চারজাতি সিরিজের আয়োজন করা হয় একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এর প্র্‌থম রাউন্ড এর ম্যাচগুলো এই মাঠে আয়োজেনর ঘোষণা দেয় আইসিসি। মাঠের কাজ শুরুর পর থেকে ধীরে ধীরে এখানে বেড়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কদর। ৫ বছর ধরে মাঠের কাজ করছেন সুমন মিয়া। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সব মিলিয়ে ১৯ জন গ্রান্ডসম্যান কাজ করি। এর মধ্যে ১৫ জনই বাংলাদেশি।
আমি পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি। বাকিরাও অনেক দিন ধরে আছেন। দুই তিন জন নতুনও আছে। আমরা মাঠের কাছেই থাকি। আমাদের প্রধান কিউরেটর ভারতের। তবে আমরা একটি পরিবারের মতো। আমরা এখানে কাজ করতে পেরে দারুণ খুশি।’
আইসিসির টা-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব আয়োজনে আমেরাত স্টেডিয়াম সেজেছে নতুন সাজে। বিশ্বকাপের রং মাসকাট শুহরে না লাগলেও স্টেডিয়ামের ভেতরে সাজসজ রব। চার মাস ধরে এখানে গ্যালারি নির্মাণ কাজ চলছে। স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রেসবক্স, ডেসিংরুম থেকে শুরু করে সব ধরনের গ্যালারিও। উদ্বোধনী ম্যাচের একদিন আগেও নির্মাণ কাজ চলছিল তড়িঘড়ি করে। এক গ্রাউন্ডসম্যান বলেন, ‘আসলে বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনে কাজ শুরু কয়েছে ৪ মাস আগে। তবে শেষ ৬ দিনে ফিনিশিংয়ের কাজগুলো করা হয়েছে। আমরা অনেক দ্রুতই শেষ করতে পেরেছি কাজগুলো।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status