বাংলারজমিন

একটি ধর্ষণ এবং...

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে

২০২১-১০-১৬

রংপুরে ধর্ষণ মামলার ৮ দিন পর আসামি গ্রেপ্তার হলেও তার দলের হুমকির কারণে এলাকা ছেড়েছেন বাদী। মামলার বাদীরা আশঙ্কায় ভুগছেন তদন্তে সঠিক রিপোর্ট পাবেন কিনা। রংপুর প্রেস ক্লাবে মানবজমিনের জাভেদ ইকবাল সমস্ত বিষয়টি শুনে থানার তদন্তকারী এস আই আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি রাত ৯টার দিকে থানায় এসে ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। দেড় ঘণ্টা থেকেও ওসির সাক্ষাৎ না পেয়ে এস আই মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ওই এলাকাটি ক্রাইম জোন। প্রায়ই ছেলেরা মাদক সেবন করে। তাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, বিষয়টি জেনেছি। আপনি নিশ্চিত থাকেন, তারা অবশ্যই গ্রেপ্তার হবে এবং তদন্তে সঠিক রিপোর্টসহ বাদীরা ন্যায় বিচার পাবে। এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, জাহাঙ্গীরসহ তার সঙ্গীরা এ এলাকার নয়। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকার। এখানে এসে তারা মাদক সেবন করে। কয়েকদিন আগের ঘটনা বলতে গিয়ে বলেন, ওই দলের ছেলেরা রায়হান নামে গাড়ির কনট্রাক্টরকে পিটিয়ে আহত করে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ হলেও বিষয়টি রফাদফা হয়ে যায়। জানা গেছে, ভুক্তভোগী ও তার স্বামী বিয়ে করে অন্য জেলা থেকে রংপুরের গণেশপুর বকুলতলা এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেন। জীবিকার তাগিদে স্বামী সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং রাতে ফেরে। স্ত্রী একা বাসায় থাকায় ওই এলাকার মাদক সেবী জাহাঙ্গীর ভুক্তভোগীর সঙ্গে বোনের সম্পর্ক গড়ে তোলে। উভয়ের মধ্যে ভাই-বোনের সম্পর্ক ভালো হওয়ার সুবাদে একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর ভুক্তভোগীকে বিয়ে করতে চায়। এ সময় মেয়েটি বলে আমি বিবাহিত আমার স্বামী আছে। এরপর সুযোগ বুঝে মোবাইল চার্জ দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩রা সেপ্টেম্বর তাকে ধর্ষণ করে জাহাঙ্গীর। ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে বিষয়টি কাউকে বললে স্বামীসহ এলাকাবাসীকে জানিয়ে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে সংসার নষ্ট করে দেবো। এতে মেয়েটি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং বিষয়টি গোপন রাখে। অবস্থা বুঝে আসামি জাহাঙ্গীর আবার ১৩ই সেপ্টেম্বর বিকালে তাকে পুনরায় ধর্ষণ করে। এতে সে ভীতু হয়ে স্বামীকে বিষয়টি জানায়। ওদিকে জাহাঙ্গীরের বন্ধুরা ধর্ষণের ঘটনা শুনে মেয়েটিকে ধর্ষণের প্রস্তাব দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে ২১শে সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ করে। স্বামী জানায়, থানায় অভিযোগের বিষয়টি আসামিরা জানতে পেরে টাকা দিয়ে মিমাংসার প্রস্তাব দেয়। এদিকে, অভিযোগের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসে রহস্যজনকভাবে বাদীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও টালবাহানা শুরু করে। ৩-৪ দিন কেটে গেলেও অভিযোগ আমলে না নেয়ায় তারা বিষয়টি র‌্যাবের এএসপি মর্তুজকে জানায়। র‌্যাব থানায় ফোন করে তাদের পাঠিয়ে দিলে থানার ইনচার্জ রাত ১১টায় ধর্ষিতা ও তার স্বামীকে ডেকে মামলা আমলে নেয় এবং মামলার তদন্ত দায়িত্ব দেয় এস আই আল আমিনের ওপর। সেইসঙ্গে পরদিন ধর্ষিতার মেডিকেল টেস্ট করানো হয়। এ সময় ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, অভিযোগ দিয়েছি ২১শে সেপ্টেম্বর, মামলা নিলেন ২৭শে সেপ্টেম্বর। আগামীকাল কী মেডিকেল টেস্টে কোনো আলামত পাওয়া যাবে। এতে ওই ইনচার্জ বলেন, সমস্যা নেই। তারা উপ-পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, আগে মামলা করেন। এ সময় ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, স্যার মামলা ৭ দিন আগেই করেছি। তখন তিনি মামলার তদন্তকারীকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাইলে তদন্তকারী বলেন, বিষয়টি অন্যরকম। মেয়েটির সঙ্গে জাহাঙ্গীরের পরকীয়া সম্পর্কের কারণে সম্মতিতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপ-পুলিশ কমিশনার রেগে বলেন, যেহেতু ধর্ষণ মামলা সেহেতু আগে আসামি গ্রেপ্তার করেন। এরপর আসামি জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার দলের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী এস আই আল আমিন বলেন, বিষয়টি ওসি স্যার আব্দুর রশিদ বলবেন। আসামি দলের বাকিদের ধরা হয়নি কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সব নাবালক হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করাও একটি বিপদ। এলাকাবাসীর প্রশ্ন তাহলে নেশাখোর সন্ত্রাসীরা যদি নাবালক হয়ে থাকে তাহলে কি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে না? গণমাধ্যম কর্মীসহ অন্যান্যরা জরুরি বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশীদ ফোন ধরেন না। ধর্ষণ মামলার বিষয়ে গত ১০শে অক্টোবর রাতে ৩ বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। চতুর্থ বারের পর কল রিসিভ করলেও বলেন, এখন ব্যস্ত।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status