দেশ বিদেশ
ডিক্যাব টক-এ জাপানের রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন
স্টাফ রিপোর্টার
১৫ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার, ৮:৪৯ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দীন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা আঁচ করা খুবই কঠিন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, রাখাইন রাজ্যে আমরা ৬৪ মিলিয়ন সহযোগিতা দিয়েছি প্রত্যাবাসন সহজ করতে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় জাপান সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। জাপান মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি উত্থাপন করা অব্যাহত রাখবে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একেক দেশের আলোচনার ধরন একেক রকম। আমরা অনেক পথ, অনেক উপায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন উল্লেখ করেন তিনি। ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র?্যাটেজিক-আইপিএস জোটে যুক্ত হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলেও জানান জাপানের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আইপিএস জোটে বাংলাদেশের ব্যবহারিক অংশগ্রহণ দেখতে চায় জাপান। এর ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। আইপিএস জোট সবার জন্যই উন্মুুক্ত। যেকোনো দেশ এতে যুক্ত হতে পারে। এ জোট শুধু কোনো নিরাপত্তার বিষয় নয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতিও এর সঙ্গে যুক্ত। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাপান বাংলাদেশে বিভিন্ন সামগ্রী পাঠাবে জানিয়ে তিনি বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জাপান সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। এর অংশ হিসেবে এ উপকরণগুলো এ বছরের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে পাঠানো হবে। জাপান নভেম্বরে উপহার হিসেবে কোস্টগার্ডকে টহল জাহাজও পাঠাবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের উচ্চকিত প্রশংসা করেন ইতো নাওকি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩০০ জাপানি কোম্পানি কাজ করছে। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রশংসনীয়। সব অর্জন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার অবদানে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে চোখে দেখার মতো। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, মাতারবাড়ি প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দেবে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে এগুলো উন্নয়নের নতুন ধাপে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এখনো সহজ নয়। টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার এশিয়ার মধ্যে শুধু দুটি দেশে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। বাংলাদেশ বিদেশি কোম্পানিকে আকৃষ্ট করে আরও ইমেজ বাড়াতে হলে কিছু নিয়মকানুনে পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হতে যাচ্ছে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্ট্যাটাস অনেক বেড়েছে। এর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক উন্নয়ন বড় ভূমিকা রেখেছে। দেশে চলমান জাপানি প্রকল্পগুলো নিয়ে তিনি বলেন, মাতারবাড়ি শুধু বাংলাদেশ নয়, এ অঞ্চলের স্বপ্ন। এটি এ অঞ্চলের অন্যতম একটি পাওয়ার হাব হিসেবে কাজ করবে। বেশির ভাগ বড় প্রকল্পে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। জাপানের ক্ষেত্রে সম্ভাবত্য যাচাই করতে বেশি সময় লাগে, কিন্তু এটা সব সময় একটু গুণগত কাজ হয়। প্রকল্পের সময়, বাজেট এবং গুণগতমান রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, নভেম্বরে কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশে আরও টিকা পাঠাবে জাপান। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে জাপান বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ৩০ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে। ইতো নাওকি বলেন, দুই মাসের মধ্যে পাঁচ চালানে এসব টিকা বাংলাদেশে এসেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য যখন অনেক বাংলাদেশি অপেক্ষায় ছিলেন তখন জাপান বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশ ভালোভাবে টিকাগুলো কাজে লাগিয়েছে। জাপান বাংলাদেশকে কোভ্যাক্সের আওতায় করোনার আরও টিকা সরবরাহ করবে। বর্তমানে জাপানের পরিকল্পনায় এটি রয়েছে। ঠিক কত টিকা দেয়া হবে সেটি এই মুহূর্তে আমি বলতে পারবো না। তবে আশা করছি, এটা নভেম্বরে আসতে পারে। রাষ্ট্রদূত বলেন, কোভিড-১৯ একটি বৈশ্বিক সংকট। এ সংকট সমাধানে একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। জাপান সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। জাপান সরকার করোনার টিকা ছাড়াও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহ করবে, পাইপলাইনে অছে। এগুলো বিভিন্ন হাসপাতাল ও কিছু ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং এটিকে একটি বড় অর্জন বলে অভিহিত করেন।