অনলাইন

আলোচিত সেই বোট ক্লাব নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৪ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৫:১৭ অপরাহ্ন

দেশের প্রখ্যাত ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে রাজধানীর আলোচিত সেই 'বোট ক্লাব' নিয়ে তার প্রস্তবের কথা জানিয়েছেন। লেখাটিতে তিনি ক্লাবের সদস্যদের পরিবারের বিনোদনের চাইতে একে একটি আন্তর্জাতিকমানের আবাসিক গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। মানবজমিন পাঠাকদের কাছে তার সেই পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, দেড় বছর পর বাসা থেকে প্রথম ঘুরতে বেরোলাম। গুগল ম্যাপ দেখে ভাবলাম আশুলিয়া পেরিয়ে দিয়াবাড়ির কাশফুল দেখতে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার থেকেও বড় আগ্রহের বিষয় হলো পথেই ইদানীং কালের বহুল আলোচিত "ঢাকা বোট ক্লাব"টি দেখার সুযোগ হবে। রাস্তার গেট থেকে সুদৃশ্য ক্লাব ভবন বেশ দূরে, সুসজ্জিত রাস্তা চলে গেছে সে পর্যন্ত।

মূল ভবনের পাশে নদীর পাড়ে আরো বেশ কিছু জায়গা মনে হয় ক্লাবের ব্যবহারের জন্য  তৈরি করা হচ্ছে। দূর থেকে ভালো বোঝা গেলো না। গেটে কড়া নিরাপত্তা। শুধু সামনের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত একটু হেঁটে ঘুরে দেখা যায় কিনা সে অনুরোধ করাতে কোনো কাজ হলো না। আমার মতো বয়স্ক ছোটোখাটো নিরীহ গোছের একজন মানুষকে গেটের ভেতর এক পা দিতেও কেনো এতো আপত্তি ভেবে হাসিই পেলো।

আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল ভবনটি ও নদী তীরের জায়গাটায় পরিবেশের ও নান্দনিক সৌন্দর্য সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া। এক চিত্রনায়িকাকে নিয়ে সেখানকার একটি সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে যখন সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি হচ্ছিল। আমি লক্ষ্য রাখছিলাম ওই ক্লাবটির ভৌত কাঠামো নিয়ে যেটুকু জানা যাচ্ছিল তার উপর। সম্ভবতঃ ক্লাব কর্তৃপক্ষের বর্ণনা থেকেই জানা গিয়েছিল ক্লাব ঘরটি ক্লাবের সদস্য ও তাদের পরিবারের বিনোদনের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিশেষত দোতলার কিছু ঘর থেকে নাকি নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।

আমার তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয়েছিল এই পুরো অবকাঠামো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের জন্য খুব উপযোগী হতো, যেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষকরা কিছু সময়ের জন্য আবাসিক ফেলো (resident fellow) হিসাবে এসে এই নান্দনিক পরিবেশে তাদের গবেষণার কাজ, শিল্প-সাহিত্য চর্চা, কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে ভাবনার আদান প্রদান করতে পারবেন। এর জন্য অবশ্য আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থাও থাকতে হবে, যে কারণে আমি ভবনের পাশের নদী তীরের জায়গাটা লক্ষ্য করছিলাম।

ইতালির মিলান শহরের কাছে অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে Rockefeller Bellagio Center এরকম একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আবাসিক গবেষণা কেন্দ্র (আমার প্রয়াত স্ত্রী একাধিকবার সেখানে গবেষণার জন্য গিয়েছিলন)। প্রতিবেশী ভারতে এরকম গবেষণা কেন্দ্রের দু'টি বহুল পরিচিত উদাহরণ মনে আসছে: দিল্লীর Habitat Centre (ব্যক্তি মালিকানাধীন) এবং সিমলার পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি নিবাসে স্থাপিত Indian Institute of Advanced Studies (ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত)। এ দুটি প্রতিষ্ঠানই আমার দেখা।

সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এটাও দেখেছিলাম যে নদীর তীরের আইন অনুযায়ী এই সংরক্ষিত স্থানে কেবল "জনস্বার্থের" বিচারেই ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লাবটিকে জায়গাটি "বিশেষ বিবেচনায়" বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, অবশ্য এর সত্যাসত্য আমার জানা নেই। তবে "জনস্বার্থের" বিচারেই যদি আসলে এই অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে, তবে ক্লাবের সদস্যদের পরিবারের বিনোদনের চাইতে একটি আন্তর্জাতিক মানের আবাসিক গবেষণা কেন্দ্র যে জ্ঞান ভিত্তিক সমৃদ্ধ জাতি গঠনে অবদান রাখার মাধ্যমে অনেক বেশি জনস্বার্থের অনুকূল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সন্দেহ নাই ক্লাবের সদস্যরা এখানে বেশ কিছু বিনিয়োগ করেছেন। তারা এই বিনিয়োগকে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য endowment fund-এ রূপান্তরিত করে বাংলাদেশে করপোরেট philanthrophy-এর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সরকার ব্যয়ভারের অন্ততঃ আংশিক দায়িত্ব গ্রহণ করে উদ্যোক্তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে পারে। দেশ-বিদেশের উৎস থেকেও (Rockefeller বা Gates ফাউন্ডেশন, ইত্যাদি) অর্থ সংগ্রহ সম্ভব। ক্লাব মালিকদের সম্মতি থাকলে এ রকম একটা উদ্যোগ নিয়ে এগুনো যেতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status