দেশ বিদেশ

সেই গণরুমেই ফিরলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

হাসনাথ মাহমুদ

১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, ৯:০২ অপরাহ্ন

করোনা পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের জীবনমান বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘গণরুম’ বন্ধের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও আবারো সেই গণরুমের দুর্বিষহ জীবনেই ফিরতে হলো  শিক্ষার্থীদের।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত কয়েক দশকে ক্রমশ জটিল হওয়া আবাসন সংকটের কারণে আবাসিক হলগুলোতে ৪-৫ জনের রুমে ২০ জন বা অনেক ক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকায় এই রুমগুলো ‘গণরুম’ হিসেবেই পরিচিত।
প্রশাসনিকভাবে সিট না পাওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত  এসব গণরুমে তোলা হয়। এই ‘উপকারের’ প্রতিদানস্বরূপ শিক্ষার্থীদের সেই সংগঠনের মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। এসব কর্মসূচিতে তারা অংশ নিচ্ছে কিনা প্রতিরাতে ‘গেস্টরুমের’ মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়। মূলত প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হলে রাখার বিনিময়ে সংগঠনের কর্মসূচিতে ব্যবহার করার দীক্ষার নাম ‘গেস্টরুম’। আর এই গণরুম-গেস্টরুমের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ব্যাহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ভর্তি হওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিজেদের মেধা ও ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক বিকাশ।
করোনা মহামারির বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণরুম বন্ধের ব্যাপারে নিজেদের ‘পরিকল্পনা’ আর ‘সদিচ্ছার’ কথা জানিয়েছিল। গণরুমে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিধি মানার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে ব্যক্ত করেছিল এটি বন্ধে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের কথা। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, ‘গণরুমের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পছন্দ করছেন না। শিক্ষার্থীদের জীবনমানে ঘাটতি পড়ুক, একটা প্রতিকূল পরিবেশ থাকুক, এটা তিনি কোনোভাবেই চান না। তিনি আমাকে বেশ কয়েকবার পরামর্শ দিয়েছেন গণরুমের বিষয়টির সুরাহা করতে। এখন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা দরকার।’ হল কর্তৃপক্ষও অছাত্র বহিরাগত ও সাবেকদের বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট দেয়ার কথা জানিয়েছে বহুবার। তবে ১০ই অক্টোবর থেকে সব বর্ষের জন্য হল খোলার পর দেখা যায় এ ধরনের কোনো ব্যবস্থাই এখনো কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। নিয়মিতদের পাশাপাশি ঠিকই উঠেছে সাবেকরা, আর অন্য কোনো উপায় না থাকায় প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের  ঠাঁই হয়েছে সেই গণরুমেই। কমবেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল খোলার পর গণরুমেই উঠেছে বলে জানা গেছে। সরজমিন বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে দেখা যায় জিমনেশিয়াম এর জন্য বরাদ্দকৃত রুমটিকে গণরুম বানিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী থাকছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বৃহৎ গণরুম হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পাস খুললে এখানে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা একশ ছাড়াবে বলে জানান সেখানে অবস্থানরত প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তবে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও এই হলের প্রভোস্ট আব্দুল বাছির মানবজমিনকে বলেন, গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের রুম বরাদ্দের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। আমরা আশা করছি আগামী দু-একদিনের মধ্যে তাদের বরাদ্দকৃত রুমে উঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো। তিনি বলেন, ক্লাস পরীক্ষা শুরু না হলেও আগে থেকেই তারা  সবাই একসঙ্গে আসার কারণে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর পাশেই থাকা জসীমউদদীন হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দুটি গণরুম ঘুরে দেখা যায়, ৬ থেকে ৮ জনের ধারণক্ষমতার মাঝারি আকারের রুম দুটিতে গাদাগাদি করে থাকছেন ২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী। এখানে থাকা একজন শিক্ষার্থী জানান, এতজন একসঙ্গে থাকতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। দরজা পর্যন্ত বিছানা পাতা হয় বলে রাতের বেলা রুমে প্রবেশ করতে বা বের হতে খুব কষ্ট হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের প্রোগ্রাম গেস্ট রুম করানো শুরু হয়েছে বলে এই প্রতিবেদককে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গণরুমে এমনিতেই থাকা কষ্টকর, আর এই করোনা মহামারিতে এতজন একসঙ্গে থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা থেকেই যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জসীমউদ্দীন হলের প্রভোস্ট আব্দুর রশিদ জানান, করোনা আগে থেকে ওই রুমগুলোতে তারা ছিল বলে এখন এসে আবার সেইখানে উঠেছে। আমরা তাদের দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে হলের খালি হওয়া সিটগুলোতে উঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবো। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক হলসমূহ গণরুম বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এটি সফল করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণরুম বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক জানিয়ে তিনি বলেন, হলে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সহযোগিতা করলে আশা করি এটি অবশ্যই বন্ধ করা সম্ভব হবে।
হল খোলার দিন হল প্রশাসন প্রায় ১৮ মাস পরে ফেরা এসব শিক্ষার্থীদের ফুল চকলেটে বরণ করে নিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এসবের বদলে প্রশাসন যদি গণরুম বন্ধ করে তাদের সিটের ব্যবস্থা করতে পারতো তাহলে তাদের ফেরাটা আরও অনেক বেশি আনন্দের হতো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status