‘পলো বাওয়া’ উৎসব

কমলগঞ্জের ধলাই নদীতে পালিত হলো গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব ‘পলো বাওয়া’। গতকাল বেলা ১২টায় কমলগঞ্জের ধলাই নদীতে ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। এতে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিণ কুমড়াকাপন, আলেপুর, চণ্ডীপুর, কুমড়াকাপন গ্রামসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অল্প পানিতে মাছ শিকারের উৎসবে মেতে ওঠেন। পুরোদমে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হলেও কমলগঞ্জ উপজেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদীতে প্রতিবছর এ সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারিরা দল বেঁধে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়ায় অংশগ্রহণ করেন। পলো বাওয়া উৎসব হলো দল বেঁধে মাছ ধরা। উৎসবের দিন সকালে নিজ নিজ পলো, হাতজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে নদী পাড়ে গিয়ে সমবেত হন সৌখিন মাছ শিকারিরা। ঘড়ির কাটায় নির্ধারিত সময় বেজে উঠতেই সবাই এক সঙ্গে পলো নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকটা আনন্দেই। বিশেষ করে পলো, উড়াল জাল, প্লেইন জাল এসব দিয়েই শিকার করা হয় ছোট-বড় মাছ। নদীতে ৩০-৪০ জনের একটি দল একদিকে জাল নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর অপরপ্রান্ত থেকে ৪০-৫০ জনের সারিবদ্ধ দল পলো চাপিয়ে মাছ ধরতে সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। দলবদ্ধভাবে মাছ শিকারের এ দৃশ্য দেখতে নদীর দুই তীরে ভিড় করেন উৎসুক মানুষজন। উৎসবে অংশ নেয়া মানুষদের উৎসাহ দিতে হাততালি কিংবা জোরে জোরে চিৎকার করে উৎসাহ প্রদান করেন নদীর তীরে অবস্থানরত লোকজন। দুপুরে শুরু হওয়া মাছ ধরার এ উৎসব চলে বিকাল পর্যন্ত।
প্রবীণ মাছ শিকারি আনকার বলেন, ‘বছরের এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। সবাই মিলে একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা। দিন দিন পরিবেশ ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি হ্রাস এবং অধিকাংশ জলাশয় ইজারা দেয়ায় পলো বাওয়া উৎসব এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। প্রাচীন এ উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে সর্বমহলের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান মাছ শিকারিরা।