শেষের পাতা

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেবে এসএসএফ

সংসদ রিপোর্টার

১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, ৯:০৭ অপরাহ্ন

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতার পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার সংক্রান্ত সামরিক আমলের আইন বাতিল করে নতুন আইন করতে সংসদে উত্থাপিত বিলের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি পাসের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত আইনি ভিত্তি পাচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতার পদ। এদিকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিলের রিপোর্টও চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিল দু’টির রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়। কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক, মো. শামসুল হক টুকু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার অংশ নেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিবগণ, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। তবে ‘বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ-১৯৭৯’-এ তাদের পারিতোষিক ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতার স্বীকৃতি দেয়ার একক ক্ষমতা স্পিকারের। বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়নের বিষয়ে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২(১)(ট) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিষঙ্গের নেতা’। তবে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধিতে বিরোধীদলীয় উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা নেই। বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ-১৯৭৯ বলেই বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রী এবং উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রচলিত নিয়ম ও বিধিবিধান অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন শেষে সংসদ গঠনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া রাজনৈতিক দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। প্রধান বিরোধী দলের পার্লামেন্টারি পার্টি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনীত করে থাকে। সেটি সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংসদের স্পিকারকে জানাতে হয়। পরবর্তী সময়ে স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। তবে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় উপনেতা মনোনয়নে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো বৈঠক ছাড়াই ২০১৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ঘোষণা দেন যে, দলের পদাধিকার বলে তিনিই হবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং তার ভাই জি এম কাদের হবেন বিরোধীদলীয় উপনেতা। পরদিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিলেন এরশাদ। এরপর ২০১৯ সালের ১০ই জানুয়ারি এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার। তবে একই বছরের ২২শে মার্চ স্পিকারকে দেয়া চিঠিতে জি এম কাদেরের পরিবর্তে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করার অনুরোধ জানান এরশাদ। পরদিন ২৩শে মার্চ রওশনকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার। এদিকে বৈঠকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিল-২০২১ এর রিপোর্টও চূড়ান্ত করেছে কমিটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে একটি বিল আনা হয়। সংসদ কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি উত্থাপন করার পর পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৮৬ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বর্তমানে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সামরিক আমলে প্রণীত ওই আইন বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে। অবশ্য জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ এর অধীনে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা বর্তমান নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। নতুন আইনের ফলে এসএসএফ তাদের নিরাপত্তা দেবে। বিলে জাতির পিতার পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা এবং তাদের সন্তানাদি ও ক্ষেত্রমতো ওই সন্তানাদির স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের সন্তানাদি। আগের বিষয়গুলোকে প্রস্তাবিত আইনে রাখার পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদান। সরকারি গেজেট দিয়ে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরাও এই আইনের অধীনে নিরাপত্তা পাবেন। বিলে বলা হয়েছে, এসএসএফের তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, তল্লাশি, আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসহ থানার একজন ওসির যেসব ক্ষমতা আছে এসএসএফ’র একজন কর্মকর্তার এই আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সারা দেশে সেই ক্ষমতা থাকবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন এসএসএফ তাদের নিরাপত্তা দেবে। এসএসএফ তার কাজের প্রয়োজনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও সহায়তা চাইতে পারবে। যাদের কাছে সহায়তা চাওয়া হবে তাদের তা দিতে বাধ্য হবে বলে খসড়া আইনে বলা হয়েছে। জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ এ যাই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইনকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status