এক্সক্লুসিভ

শতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছেন তারা

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, ৮:৫৬ অপরাহ্ন

রাজধানীর নদ্দা ও জয়পুরহাটে অভিযান চালিয়ে কিডনি ক্রয় ও বিক্রয় কাজের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা তিনটি দলে ভাগ হয়ে এ কাণ্ড করতো। এভাবে শতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করা হয়েছে। এজন্য চক্রটি রোগীদের কাছ থেকে নিতো ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। আর কিডনিদাতার সঙ্গে চার লাখ টাকার চুক্তি করলেও দিতো মাত্র দুই লাখ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬),  মেহেদী হাসান (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৮), আব্দুল মান্নান (৪৫) ও তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু (৩৮)। অভিযানে ভুক্তভোগী কিডনিদাতাদের চারটি পাসপোর্ট, চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট এবং ভিসা সম্পর্কিত কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল ফোন এবং দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়। গতকাল ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চক্রের সদস্যরা জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যকে টার্গেট করে অর্থের প্রলোভন দেখান। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে কিডনিদাতার কাছ  থেকে কিডনি সংগ্রহের পর নির্ধারিত রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
তিনি আরও জানান, চক্রটি প্রায় ১০ বছর ধরে সক্রিয়। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রোগী ও দাতা সংগ্রহ করে। এই চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের পুরো কাজ সম্পন্ন করেন। একটি গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কিডনি প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগী খুঁজে বের করে। তারপর রোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিডনি সংগ্রহ করে দেয়ার কথা বলে সম্পর্ক স্থাপন করে।
তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় গ্রুপটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ খুঁজে বের করে। তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি বিক্রির জন্য প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। তৃতীয় দলটি প্রলোভনের শিকার কিডনিদাতাদের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর সঙ্গে রক্তের নমুনা মেলানোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করে।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষায় কিডনি প্রতিস্থাপনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে তৃতীয় দলটি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে কিডনিদাতার পাসপোর্ট ও ভারতে ভিসার ব্যবস্থা করে। পাশের দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র বাংলাদেশি চক্রের যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনিদাতাকে বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর থেকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয়। তারপর বিভিন্ন হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে নির্ধারিত রোগীর জন্য কিডনি সংগ্রহ করা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ভুক্তভোগীদের বৈধ বা অবৈধ উপায়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য চক্রটি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নেয় রোগীদের কাছ থেকে। আর কিডনিদাতার সঙ্গে চার লাখ টাকার চুক্তি করলেও দিতো মাত্র দুই লাখ টাকা। এমনকি নির্ধারিত টাকা না দিয়ে তাদের ভয় দেখায়। একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের পর চক্রের প্রধান ইমরান নেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। আইনি জটিলতা এড়াতে ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট বা অন্য কাগজপত্র নিজেদের কাছে রেখে দেন চক্রের সদস্যরা। চক্রের প্রধান ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসাসেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামে দুটি পেজের অ্যাডমিন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি ও সহকারী পরিচালক আনম ইমরান খান ইমন প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status