মত-মতান্তর

ওরা কেন পথে? কেন হলো পথশিশু?

আইরিন আঁচল

২ অক্টোবর ২০২১, শনিবার, ২:২৫ অপরাহ্ন

ফার্মগেট এলাকায় আমার চলাচল প্রায় ৫ বছরের। তেজতুরি পাড়ায় ছোট একটা বাচ্চাকে দেখি শুরু থেকেই। দেখা হলেই পাতে হাত। ওর নাম ফরহাদ। জানে না তার বাবা-মা কোথায়। বয়স আনুমানিক ১২/১৩।

কথা হয় প্রায় এক মাস আগে। ফরহাদ বলেছিল, আমাগো কোনোদিন ঘর-বাড়ি আছিল নাকি জানি না। যহন থিকা বুঝি তহন থিকা দেখি রাস্তায়ই সব। ঘুম থিকা উইঠা আবার ঘুমাইতে যাওয়া। আমাগো সময় কাটে রাস্তায়। আব্বা আম্মাকে দেখছি ছোট বেলায়। একদিন ঘুম থেকে উইঠা দেখি আব্বা আম্মা নাই। কই গেছে জানি না। বাঁইচা আছে কিনা তাও জানিনা।

ময়লা পোশাক, জীর্ণ-শীর্ণ দেহ, এলোমেলো চুল। এবেলা খাবার জুটে তো ও বেলা নেই। কিন্তু মুখে বেশ হাসি। ফরহাদরা ৪/৫ জন মিলে চলাচল করে। ঘুমায় ফুটওভারব্রিজ কিংবা ফুটপাতে। খুব কম শিশুই জানে পরিবারের লোকজনের খোঁজ। এমনকি পরিবার কোথায় আছে সেটা জানার আগ্রহও খুব কম একটা নেই। তবে তাদের বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা বন্ধুত্ব আছে।

আজ জাতীয় পথশিশু দিবস। দেশের পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর আমাদের দেশে পালিত হয় দিবসটি। সোশ্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগাম (সিপ) নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ‘পথশিশুদের অমানবিক জীবন ও বিভিন্ন সমস্যা শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। অসুস্থ হলে প্রায় ৫৪ ভাগের দেখাশুনার জন্য কেউ নেই। পথশিশুদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না। আর ৩৫ ভাগ শিশু খোলা জায়গায় পায়খানা করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা। সেখানে আরো বলা হয়, দেশে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখ।

যে বয়সে এই শিশুদের বইয়ের ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাবার কথা সে বয়সে তারা পথে সময় কাটাচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য- পুষ্টি ও বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু আমাদের দেশের পথশিশুরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত।

প্রতিবছর দিনটি আসবে। কিন্তু ওদের পাশে দাঁড়াবোতো আমরা? এইযে তারা পথশিশু যাদের দেখলে দূরে সরিয়ে দেই, অনেক সময় পাই ভয়। আবার এরাই প্রকাশ্যে 'ড্যান্ডি' সেবন করে। কিন্তু ওরা কেন পথশিশু এটা কি একবার ভেবেছেন? কেন বাড়ছে পথশিশুদের সংখ্যা? ওদের ভবিষ্যত কি? আসুন ওদের পাশে একটু দাঁড়াই। শুধু এক বেলা খাওয়ানো কিংবা ১০ টাকা দেয়া নয়। করুন সমস্যার সমাধান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status