দেশ বিদেশ

এখনো আতঙ্ক কাটেনি স্কুলছাত্রী নিছার

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৪৮ অপরাহ্ন

প্রথমে একজন পেছন থেকে মুখ চেপে ধরেন। এরপর পাঁচজন মিলে হাত পা বাঁধেন। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয় দুই হাতের তালু। তারপর একটি বস্তায় ভরে চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। পরিকল্পনা করা হয় রাত দুইটায় হত্যা করে গুম করা হবে লাশ। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নূরনগর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলছাত্রী নিছা আক্তারের। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখায় মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে নিছা। আতঙ্কে রয়েছে পরিবারটিও। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর নানা আব্দুল মালেক বেপারী প্রতিবেশী সামসুন্নাহার গংদের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেছে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পরিবারটি। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। নিছা কিছুটা সুস্থ হয়ে এখন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নিছা বলেন, ১৬ই সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা তখন সাড়ে ৬টা বা পৌনে ৭টা। আমি পড়তে বসেছিলাম। তখন আমার কলমের কালি শেষ হয়ে যায়। আমি আমার মেজো মামির ঘর থেকে কলম আনার জন্য আমাদের ঘর থেকে বের হই। তখন ঘরের বাহিরে অন্ধকার ছিল। বের হয়ে আমি জুতা খুঁজতে ছিলাম। হঠাৎ একজন পুরুষ পেছন দিক থেকে আমার মুখ চেপে ধরেছে। তাকে আমি অন্ধকারে দেখি নাই। এ সময় সালমা আক্তার আমার পা ধরেছে, তাকে আমি চিনতে পেরেছি। তারা ধরে যখন আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি মামি বলে চিৎকার দেই। সঙ্গে সঙ্গে তারা ওড়না দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। আমাকে জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় সালমার মা সামসুন্নাহারও আমাকে জাপটে ধরে। ভেতরে নেয়ার পর সেখানে আরও দুইজন ছিল। রশি দিয়ে চায়না ও আরও একজন আমার পা বেঁধে ফেলে। তখন সামসুন্নাহার আমার হাত কাটে আর বলে ওকে (নিছার ছোট মামিকে) তো পাইলাম না, এখন একেই শেষ করবো। আসলে মারতে চাইছিল আমার ছোট মামিকে। হাত কাটার পর আমাকে শক্ত করে বেঁধে বস্তায় ভরে অনেক মারধর করেছে তারা। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল ওরা আমাকে মেরেছে। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে নিছা বলেন, ওরা আমাকে জবাই করতে চাইছিল। তখন একটা ফোন আসে ওদের মোবাইলে। এপাশ থেকে বলে ‘হ্যাঁ, ভাই বলেন? তখন ফোনে লাউড স্পিকার দেয়া ছিল। মোবাইলের ঐ পাশ থেকে লোকটা বলে, এখন না রাত দুইটার সময় আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। ওর কাজ শেষ করে ফেলো, ওকে জবাই করে,” এরপর আর আমি জানি না। জবাই করার কথা শুনেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। নিছা বলেন, আমি এখন ঘুমাতে পারি না। ঘুমালেই মনে হয় ওরা আমাকে জবাই করে ফেলবে। আমি ওদের বিচার চাই।
নিছার মেজো মামি জানান, আগেরদিন ওরা নিছাকে মারধর করেছিল। যখন নিছাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় সামসুন্নাহারদের রান্নাঘর থেকে হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসা নিয়ে বাসায় এলেও আতঙ্কে এখনো নির্ঘুম রাত কাটে নিছার। তাদের সঙ্গে সামসুন্নাহারদের কিছু বিরোধ রয়েছে বলে জানান তিনি। নবাবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মৃত্যুঞ্জয় কির্তুনীয়া জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সামসুন্নাহার গংদের বাসায় গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status