প্রথম পাতা

দেশে ফিরে সালমান এফ রহমান

বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি, আসছে প্রতিনিধিদল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৮:৩৮ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি বলেছেন, সৌদি আরব সফর সফল হয়েছে। দেশটি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) এবং পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) চুক্তি সই করতে সৌদি সরকার সম্মতি দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে চুক্তি সই হবে। এছাড়া তারা বিভিন্ন ইকোনমিক জোনেও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ৮ দিনের সৌদি আরব সফর শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, খুবই ভালোভাবে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা দেখেছি, আমাদের এখানে বিনিয়োগ করার জন্য তারা খুবই আগ্রহী। বিশেষ করে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিনিয়োগমন্ত্রী বলেছেন যে, ওনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসবে। আমাদের যে একটা জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি আছে, সেটার একটা মিটিং হবে। সেই মিটিংয়েও আমরা আশাবাদী। সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অথবা বিনিয়োগ মন্ত্রী নিজে আসবেন।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের অবস্থানকালেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে জিটুজি, পিপিপি এগ্রিমেন্ট যেটা করার কথা ছিল, অনেক দিন থেকে সেটা পেন্ডিং আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা সেটা সই করবে। খুব তাড়াতাড়ি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ভার্চ্যুয়ালি এটা সই করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমি আশা করি, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চুক্তিটি আমাদের সই হয়ে যাবে।
কোন কোন খাতে সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমরা দুটো প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলেছি, যেটাতে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম, সেই বিষয়ে তারা বলেছেন যে, তারা ইন্টারেস্টেড। একটা হলো ঢাকা থেকে পায়রা রেলপথ। সেটাতে তারা ইন্টারেস্টেড আছে। প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে করতে চায় বাংলাদেশ, বিষয়টি তারা ভেবে দেখবেন বলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে।
‘আরেকটা আমরা বলেছি কক্সবাজারের উন্নয়ন। কক্সবাজারের উন্নয়নে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আশা করে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা কক্সবাজারের ট্যুরিজম, পুরো কক্সবাজারের ডেভেলপমেন্টের জন্য কথা বলেছি। সেটাতেও তারা খুব ইন্টারেস্টেড। আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করলে, তাদের সঙ্গে শেয়ার করলে তখন এটা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বে-টার্মিনাল ও পতেঙ্গা টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি সরকার। তারা প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা বলেছি আমাদের জিটুজি এগ্রিমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওই প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করতে পারি না। চুক্তি হয়ে গেলে আমরা বিষয়টা দেখবো।
একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ করতেও সৌদি আরবের প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমরা একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন তাদের দিতে চাই। এই প্রস্তাবেও তারা খুবই পজেটিভ রেসপন্স করেছেন। প্রথম মিটিংয়েই আমি এই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম ওনাদের বাণিজ্যমন্ত্রীকে। এটা তাদের কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং প্রস্তাব মনে হয়েছে। তারা বলেছেন, এটা নিয়ে তারা স্টাডি করে আমাদের জানাবেন। দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, বাওয়ানি নামে একটা কোম্পানি বেজাকে (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) একটা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ইকোনমিক জোনের জন্য। ইকোনমিক জোন এক্সক্লুসিভলি ফর সৌদি অ্যারাবিয়া। এই প্রস্তাব নিয়ে তারা কাজ করছেন।
সফরের সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ডেফিনেটলি সফল হয়েছে। আমরা অনেক খুশি। আরেকটা বিষয় আমাদের ডেলিগেশনকে তারা যেভাবে রিসিভ করেছেন, যে সম্মানটা আমাদের দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে তারা খুবই অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। তারা আসলেই এখন মনে করেন যে, বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বছরের ২৮ ও ২৯শে নভেম্বর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা। সেখানেও আমরা ওনাদের দাওয়াত দিয়েছি। তারা আমাদের কনফার্ম করেছেন যে, তারা সেই বিনিয়োগ কনফারেন্সে যোগদান করবেন।
বাংলাদেশের ১৩৮ পণ্যের সৌদি আরবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন বলেও জানান সালমান এফ রহমান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, একটা লিস্ট দিয়ে আমরা বলেছিলাম এতগুলো আইটেমে ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস দেয়ার জন্য। তারা বলেছেন, সেটা বাইলেটারেলি না করে তাদের একটা জিসিসি ট্রেড এগ্রিমেন্ট আছে। এর মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে একটা এফটিএ অথবা পিটিএ করার জন্য তারা বলেছেন। তারা কাজ করতে চান।
সফরের বিভিন্ন সভায় সৌদি আরবের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, চেম্বার প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী ও স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যোগ দেন এবং বাংলাদেশ থেকে আগত উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।
এ সফরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কর্তৃপক্ষের (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজ প্রতিনিধিদলে ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status