প্রথম পাতা

ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে সিপিডি’র সাত দফা সুপারিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৮:৩৭ অপরাহ্ন

দেশের উদীয়মান ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাত দফা সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শনিবার আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সভায় সিপিডি এসব সুপারিশ করে।
সভায় সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, আইনজীবী তানজীব- উল আলম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর, চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম, শপঅ্যাপের চিফ অব স্টাফ জিয়াউল হক, অ্যাসিক্স বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফসানা আসিফ, ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহিদসহ অন্যরা।
অনলাইন বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা ও আইনজীবীরা জানান, নতুন আইন কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন না করে বরং সরকারের উচিত হবে বিদ্যমান যেসব আইন আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে নজর দেয়া; একই সঙ্গে সরকারের এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার সমন্বয় করা।
আলোচনায় বলা হয়, সামপ্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণামূলক আচরণের কারণে ই-কমার্স খাত মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ভোক্তাদের টাকা আছে। অন্যদিকে, ই-কমার্স সেক্টরের ওপর গ্রাহকদের আস্থাও নষ্ট হয়েছে। গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর জন্য সিপিডি সাতটি সুপারিশ করেছে। এগুলো বাস্তবায়ন করলে আবারো গ্রাহকের আস্থা ফিরতে পারে ই-কমার্স খাতের ওপর।
সুপারিশগুলো হলো- বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধান সংশোধন করা উচিত এবং প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে; পর্যাপ্ত, দক্ষ মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তি উদ্যোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে এবং এই সংস্থাগুলোর ভূমিকা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে; ই-কমার্সের ওপর নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করা উচিত এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং জনগণের সঙ্গে নিয়মিত জানানো উচিত যাতে এই ব্যবসার জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায় এবং গ্রাহকদের ই-কমার্স ব্যবসার কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করে; ই-কমার্স গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করে এবং অসাধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের ফাঁদে না পড়ে; ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর মতো বেসরকারি সংস্থার নিবন্ধনের আগে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা, তাদের স্থায়িত্ব যাচাই করা এবং এই ব্যবসার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সদস্যপদ দেয়া; প্রতারক প্রতিষ্ঠানে জনগণ যেন বিনিয়োগ না করে সেজন্য সরকারকে কোম্পানি আইনের আইনি কাঠামোর মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে হবে।
ওয়াসিম আলিম বলেন, ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও আলাদা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। শুনতে পাচ্ছি, ই-কমার্সে শৃঙ্খলা ফেরাতে আলাদা একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করবে সরকার। এটি ই-কমার্সকে আরও কঠিন করে ফেলবে। সরকারের বিদ্যমান যেসব সংস্থা আছে, তাদের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ালে সেটি আরও বেশি কার্যকর হবে।
ফাহিম মাশরুর বলেন, ই-কমার্সের জন্য দেশে নতুন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাই না। ই-কমার্সে শৃঙ্খলা আনতে হলে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও কার্যকর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহি করা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে তাদের শক্তিশালী করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনে এসব ঘটনা ঘটেছে। এখানে তাদের অবহেলা ছিল স্পষ্ট। ব্যাংকগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ফাহিম মাশরুর বলেন, দেশে বড় একটি সমস্যা বেকারত্ব। অসংখ্য তরুণ বেকার। কর্মহীন। তারাই ই-কমার্সে বিনিয়োগ করছে। চাকরি না থাকলে তো এখানে আসবেই। ব্যাংকের সুদের হার কম। শেয়ারবাজারও নিরাপদ নয়। তাহলে তরুণ জনগোষ্ঠী যাবে কোথায়? একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করে ফেললাম, আর সঙ্গে সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না।
জিয়াউল হক বলেন, এই যে ব্যাংকিং চ্যানেলে এত টাকা লেনদেন হলো, ব্যাংকের ভূমিকা কী ছিল। ই-কমার্সকে যদি নজরদারি করা হয়, তাহলে নতুন আইনের প্রয়োজন হবে না।
আফসানা আসিফ বলেন, আমাজনের সঙ্গে আমাদের দেশের ই-কমার্সের বড় পার্থক্য হলো এখানে পণ্য ডেলিভারিতে অনেক সময় নেয়। তা ছাড়া আমাজনের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা আছে, যেটা আমাদের দেশে নেই।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ই-কমার্স নতুন একটি শিল্প। ই-মার্সে যা কিছু ঘটেছে, তাতে একক কাউকে দোষ না দিয়ে বলা যায়, এখানে সবারই দোষ ছিল। যে টাকা লোপাট হয়েছে, এখন জরুরি সে টাকা ফিরিয়ে আনা।
আবদুল ওয়াহিদ বলেন, আমরা তিন বছর আগেই সরকারকে বলেছিলাম এ ধরনের একটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। ই-কমার্সে যে স্বচ্ছতা নেই, তা সরকারকে জানানো হয়েছিল। ইভ্যালিসহ অন্যদের বিজনেস মডেল নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তানজীব উল আলম বলেন, আমাদের এখানে কোনো ঘটনা ঘটার পর আমরা বলি আইন নেই। তবে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইনের প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান আইনে প্রায়োগিক দুর্বলতা আছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনেই সব সমস্যার সমাধান আছে। এখানে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ঘাটতি স্পষ্ট। প্রতিযোগিতা কমিশন আছে। তাদের আইন আছে। তাদের তৎপর হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু হয়নি। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রস্তুত ছিল না। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এ খাতের কেউ নতুন করে আইন চায় না, তাই সরকারের আগ বাড়িয়ে উচিত হবে না নতুন করে কোনো আইন কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা। নতুন প্রতিষ্ঠান করলে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান আরও দুর্বল হবে।
রেহমান সোবহান বলেন, দেশে সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি আছে। সে কারণে গ্রাহকের টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটছে। আর ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রথম এ ঘটনা ঘটেনি। এর আগেও বহুবার একই ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বিচার হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status