প্রথম পাতা
চিত্র বদলাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
পিয়াস সরকার
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৮:৩৫ অপরাহ্ন
রাজধানী তেজগাঁওয়ের একটি কলেজ। কলেজের অবস্থা দেখে বোঝা দায় যে বিশেষ ব্যবস্থায় এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দেখা যায় কলেজটিতে চলছে নিয়োগ পরীক্ষা। এরই মাঝে কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসছে ক্লাসে। পা ফেলার স্থান নেই কলেজের চারদিকে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সাঁটানো হয়েছে বড় ব্যানার। সেই ব্যানারের নিচেই গাদাগাদি করে আসা-যাওয়া করছে একঝাঁক শিক্ষার্থী।
এই কলেজের মতো রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠান চালুর সময়ে স্বাস্থ্যবিধির যে কড়াকড়ি দেখা গেছে তা অনেকটা শিথিল হতে চলেছে। দেশে করোনা সংক্রমণের হার ও শনাক্তের সংখ্যা কমলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই উদাসীনতা ভাবিয়ে তুলছে সকলকেই। মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হলেও এতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান থেকেও দেয়া হচ্ছে না বাড়তি চাপ। বরাবরের মতোই জটলা পাকিয়ে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। ফার্মগেট এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে অপেক্ষারত থাকেন কয়েকশ’ অভিভাবক। তাদের মাঝে দেখা মেলে না কোনো সচেতনতা। একসঙ্গে পাশাপাশি বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন তারা। অধিকাংশেরই মুখে থাকে না কোনো মাস্ক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। দীর্ঘ ১৮ মাসের অপেক্ষার পর খুলেছে স্কুল-কলেজ। সশরীরে ফেরার শেষ মুহূর্তে অপেক্ষায় রয়েছে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এরই মাঝে স্বল্প হলেও শিক্ষার্থীদের আক্রান্তের খবরে বিচলিত হচ্ছেন অনেক অভিভাবক।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন শিক্ষক। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জন শিক্ষার্থীর। ঠাকুরগাঁওয়ে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন শিক্ষার্থী। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজন সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন পঞ্চম শ্রেণির ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই দুই শ্রেণির ক্লাস সাময়িক বন্ধ রয়েছে। বাকি আটজন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা শিশু সদন পরিবারের সদস্য। তারা হাজিপাড়া আদর্শ হাইস্কুলের ছাত্রী। আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরে অবস্থিত ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, গত ২০শে সেপ্টেম্বর ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের ৫০ শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার তিনজনের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজ ছাত্রীবাসে থাকতে ইচ্ছুক এমন ৫০ জন শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
গোপালগঞ্জের দুই স্কুলে দুই শিক্ষার্থীর আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২নং বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলামের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা। ২১শে সেপ্টেম্বর পজেটিভ আসে এই শিক্ষার্থীর। পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রয়েছে এখন। পরিবারের দাবি স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হয় মোনালিসা। গোপালগঞ্জেরই কোটালিপাড়ায় তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়। উপজেলার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। শিক্ষার্থীর নাম তিনা খানম। ১৬ই সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করালে তিনার করোনা ধরা পড়ে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে সবার শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। করোনা আক্রান্ত ১০ শিক্ষার্থীই হচ্ছে মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর মেডিকেল কলেজ খুলে দেয়ার পর তারা ক্যাম্পাসে ফেরেন। তারা শামসুদ্দিন ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী। এরপর একেক করে তাদের উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টুডেন্ট কেবিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থী বাড়িতে থাকাকালেই ভ্যাকসিন নিয়েছিল। ক্যাম্পাসে ফিরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সবাই সুস্থ রয়েছে। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হয় কেরানীগঞ্জের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকও আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। আক্রান্ত স্কুল শিক্ষকদের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়েই আছেন ৬ জন। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চিড়াভেজা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুশান্ত কুমার রায়। আরও আক্রান্ত হয়েছেন একই স্কুলের শিক্ষক রমিজুল ইসলাম ও আব্দুল জলিল। গত ২১শে সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করিয়ে পরদিন করোনা পজেটিভ আসে তাদের।
বাগেরহাট জেলার মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক স্ত্রীসহ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর পূর্ব চরভাটা রেড ক্রিসেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আরও একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন।
উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই শিক্ষার্থীর। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় মানিকগঞ্জ এস কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলার। গত বুধবার মানিকগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই মারা যায় রোদেলা। আবার গত শুক্রবার লক্ষ্মীপুরে জান্নাতুল ফিজা নামে পঞ্চম শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। জেলার সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ফিজার। এই শিক্ষার্থী রায়পুর উপজেলার সায়েস্তানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় পড়তো।
স্বজনরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর নিয়মিত মাদ্রাসায় যাচ্ছিল ফিজা। চারদিন আগে তার জ্বর হয়। ছিল কাশি-সর্দিও। শুক্রবার সকালে জ্বর তেমন ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে নেয়ার পর ফিজার মৃত্যু হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধ কমিটি আছে। এগুলোকে কার্যকর করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করতে প্রতিষ্ঠান-প্রধানদের বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থী আক্রান্তের বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে স্কুলে আসার পর কোনো ছাত্রছাত্রীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গেলেও আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, বিনোদনের জায়গায় সবখানেই যাচ্ছিল। সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দেখেছি শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি।
করোনার উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে না পাঠাতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার পথে করোনা সংক্রমণ হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। কোথাও এমন কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা হবে। তবে আশার কথা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি।
এই কলেজের মতো রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠান চালুর সময়ে স্বাস্থ্যবিধির যে কড়াকড়ি দেখা গেছে তা অনেকটা শিথিল হতে চলেছে। দেশে করোনা সংক্রমণের হার ও শনাক্তের সংখ্যা কমলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই উদাসীনতা ভাবিয়ে তুলছে সকলকেই। মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হলেও এতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান থেকেও দেয়া হচ্ছে না বাড়তি চাপ। বরাবরের মতোই জটলা পাকিয়ে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। ফার্মগেট এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে অপেক্ষারত থাকেন কয়েকশ’ অভিভাবক। তাদের মাঝে দেখা মেলে না কোনো সচেতনতা। একসঙ্গে পাশাপাশি বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন তারা। অধিকাংশেরই মুখে থাকে না কোনো মাস্ক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। দীর্ঘ ১৮ মাসের অপেক্ষার পর খুলেছে স্কুল-কলেজ। সশরীরে ফেরার শেষ মুহূর্তে অপেক্ষায় রয়েছে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এরই মাঝে স্বল্প হলেও শিক্ষার্থীদের আক্রান্তের খবরে বিচলিত হচ্ছেন অনেক অভিভাবক।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন শিক্ষক। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জন শিক্ষার্থীর। ঠাকুরগাঁওয়ে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন শিক্ষার্থী। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজন সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন পঞ্চম শ্রেণির ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই দুই শ্রেণির ক্লাস সাময়িক বন্ধ রয়েছে। বাকি আটজন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা শিশু সদন পরিবারের সদস্য। তারা হাজিপাড়া আদর্শ হাইস্কুলের ছাত্রী। আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরে অবস্থিত ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, গত ২০শে সেপ্টেম্বর ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের ৫০ শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার তিনজনের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজ ছাত্রীবাসে থাকতে ইচ্ছুক এমন ৫০ জন শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
গোপালগঞ্জের দুই স্কুলে দুই শিক্ষার্থীর আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২নং বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলামের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা। ২১শে সেপ্টেম্বর পজেটিভ আসে এই শিক্ষার্থীর। পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রয়েছে এখন। পরিবারের দাবি স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হয় মোনালিসা। গোপালগঞ্জেরই কোটালিপাড়ায় তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়। উপজেলার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। শিক্ষার্থীর নাম তিনা খানম। ১৬ই সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করালে তিনার করোনা ধরা পড়ে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে সবার শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। করোনা আক্রান্ত ১০ শিক্ষার্থীই হচ্ছে মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর মেডিকেল কলেজ খুলে দেয়ার পর তারা ক্যাম্পাসে ফেরেন। তারা শামসুদ্দিন ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী। এরপর একেক করে তাদের উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টুডেন্ট কেবিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থী বাড়িতে থাকাকালেই ভ্যাকসিন নিয়েছিল। ক্যাম্পাসে ফিরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সবাই সুস্থ রয়েছে। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হয় কেরানীগঞ্জের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকও আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। আক্রান্ত স্কুল শিক্ষকদের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়েই আছেন ৬ জন। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চিড়াভেজা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুশান্ত কুমার রায়। আরও আক্রান্ত হয়েছেন একই স্কুলের শিক্ষক রমিজুল ইসলাম ও আব্দুল জলিল। গত ২১শে সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করিয়ে পরদিন করোনা পজেটিভ আসে তাদের।
বাগেরহাট জেলার মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক স্ত্রীসহ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর পূর্ব চরভাটা রেড ক্রিসেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আরও একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন।
উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই শিক্ষার্থীর। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় মানিকগঞ্জ এস কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলার। গত বুধবার মানিকগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই মারা যায় রোদেলা। আবার গত শুক্রবার লক্ষ্মীপুরে জান্নাতুল ফিজা নামে পঞ্চম শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। জেলার সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ফিজার। এই শিক্ষার্থী রায়পুর উপজেলার সায়েস্তানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় পড়তো।
স্বজনরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর নিয়মিত মাদ্রাসায় যাচ্ছিল ফিজা। চারদিন আগে তার জ্বর হয়। ছিল কাশি-সর্দিও। শুক্রবার সকালে জ্বর তেমন ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে নেয়ার পর ফিজার মৃত্যু হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধ কমিটি আছে। এগুলোকে কার্যকর করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করতে প্রতিষ্ঠান-প্রধানদের বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থী আক্রান্তের বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে স্কুলে আসার পর কোনো ছাত্রছাত্রীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গেলেও আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, বিনোদনের জায়গায় সবখানেই যাচ্ছিল। সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দেখেছি শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি।
করোনার উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে না পাঠাতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার পথে করোনা সংক্রমণ হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। কোথাও এমন কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা হবে। তবে আশার কথা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি।