দেশ বিদেশ

আজ বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৮:৩০ অপরাহ্ন

আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস। বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
করোনাকালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি ছিল। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হয়েছে । ফলে এই সময় জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। দেশে প্রজননসক্ষম দম্পতির প্রায় অর্ধেকর কাছাকাছি এখনো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনিয়মিত হয়ে পড়ার হারও বাড়ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮ অনুসারে, ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ নারী-পুরুষ আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ২০১৪ সালে তা ছিল ৬২ শতাংশ। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচারের অভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে দম্পতিদের সচেতন করা যাচ্ছে না। ঘরে ঘরে প্রচারের ফলে আশির দশকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যে সাফল্য এসেছিল, সরকারের মনোযোগের অভাবে সেটি ব্যাহত হচ্ছে। ভবিষ্যতের জনবিস্ফোরণ ঠেকাতে এখন থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীরা যত সন্তানের জন্ম দেন, তা হচ্ছে মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট টিএফআর)। ২০১১ সাল থেকে দেশে টিএফআর ২ দশমিক ৩-এ আটকে আছে। অথচ ২০১৫ সালে টিএফআর ২ দশমিক ১-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
করোনাকালে লকডাউনের কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই সময়ে চাহিদা  ও সরবরাহে সমস্যা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে বলেই মনে হয়। বড় আকারে জরিপ হলে বিষয়টি উঠে আসবে। বিডিএইচএস’র ২০১৭-১৮-এর জরিপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ নারী-পুরুষ আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অথচ ২০১৫ সালে এটা ৭২ শতাংশ হওয়ার টার্গেট ছিল। তা অর্জন হয়নি। অনেকদিন থেকেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে একধরনের স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। দম্পতিদের সচেতন করতে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে এই বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
১৪ই এপ্রিল ২০২১-এ প্রকাশিত ইউএনএফপিএ’র ‘আমার শরীর, কিন্তু আমার পছন্দ নয়’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, ৫৭টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি নারী যৌনমিলন, জন্মনিয়ন্ত্রণ এমনকি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে না। এরই ধারাবাহিকতায় কোভিড-১৯ বাস্তবতায় সারা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতা, স্বাস্থ্য সেবায় বিঘ্ন, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সম্প্রতি মেরী স্টোপস বাংলাদেশ এবং টিম এসোসিয়েটস-এর উদ্যোগে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২১ উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল এক আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য তুলে ধরেন।
ইউএনএফপিএ’র বরাত দিয়ে তারা বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ জন্মনিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, মাতৃমৃত্যু হার কমানো, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কিন্তু কোভিড বিশ্বে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের ১৮ আর ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। কিন্তু করোনা মহামারির মধ্যে দেশে ১৩ শতাংশ বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বলছে, গত জুন মাসে ৪৬২টি কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ও সচেতন মানুষের আন্তরিক সক্রিয় উদ্যোগে ২০৭টি বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়। সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫ লাখ মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে আছে, আর বাল্যবিবাহের শিকার ১০ লাখ মেয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২ লাখেরও বেশি মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে আছে, যার প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অশুভ। করোনা মহামারির কারণে ২০২৫ সালে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে মোট ৬ কোটি ১০ লাখ র্পযন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ (বিডিএইচএস) অনুযায়ী, ১৮ বছরের আগেই দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালেও এমনটাই দেখা গিয়েছিল। বাল্যবিবাহের প্রবণতা বুঝতে ২০ থেকে ২৪ বছরের বিবাহিত নারীদের বিয়ের বয়স দেখা হয়েছে। তবে বিডিএইচএসের হিসাবে ২০০৭ আর ২০১১ সালেও বাল্যবিবাহের হার ৬৫ শতাংশ বা তার বেশি ছিল। ২০১৪ সালে তা ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে বটে, কিন্তু সেখানেই থমকে আছে। বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখাতে পেরেছিল জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর ব্যবহার (কন্ট্রাসেপটিভ প্রিভিলেন্স রেট-সিপিআর) বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালে সক্ষম দম্পতির ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। প্রতি দশকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ২০০০ সালে এই হার বেড়ে ৫৮ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপরের ১০ বছরে গতি অনেকটা শ্লথ হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে এর হার ছিল ৬১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ছিল ৬২ দশমিক ৩। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার তেমন বাড়েনি। বিবিএনের সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সঙ্গে মোট প্রজনন হারের (টোটাল ফার্টিলিটি রেট-টিএফআর) সম্পর্ক সরাসরি। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটাই টিএফআর। ১৯৭৫ সালে নারীরা মোট ছয়টির বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন (টিএফআর ছিল ৬ দশমিক ৩)। বর্তমানে টিএফআর ২ দশমিক ১। অর্থাৎ গড়ে একজন নারী দুজন করে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status