দেশ বিদেশ

মামলা নেয়নি থানা, আদালতে যাবে ইভানার পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৮:৩০ অপরাহ্ন

স্কলাসটিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় তার বাবা লিখিত অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। অভিযোগটিকে সাপ্লিমেন্টারি কপি হিসেবে জমা রেখেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শুক্রবার ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে জামাতা ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান ওরফে রুম্মানসহ ৩ জনকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। এ সময় ইভানার বাবাকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। এদিকে, পুলিশ মামলা না নিলে আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ইভানার পরিবার এবং আইনজীবী।
ইভানা লায়লার মৃত্যুর ৯ দিন পর গত শুক্রবার বিকালে তার বাবা শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়ে ৫ পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগপত্রে ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান, তার প্রেমিকা ব্যারিস্টার সানজানা ইয়াসিন খান ও ইমপালস হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হককে দায়ী করেন। অভিযোগপত্রে আমান উল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিয়ের পর থেকেই ইভানাকে তার স্বামী বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। কিছুদিন আগে ইভানা জানতে পারেন, তার স্বামী রুম্মান ব্যারিস্টার সানজানা ইয়াসিন খানের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরকীয়া সম্পর্ক নির্বিঘ্ন করার জন্য পথের কাঁটা দূর করতে ইভানাকে তার স্বামী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, গত ২০১১ সালে আমার ছোট মেয়ে ইভানা লায়লা চৌধুরী (৩২) এর সঙ্গে আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান (৪২) রুম্মানের বিবাহ হয়। তাদের আরমান (৮) এবং আয়মান (৬) নামে দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, ইভানা স্কলাস্টিকায় ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু রুম্মান ইভানাকে বাধা দেয় এই বলে যে, তার একমাত্র কাজ সন্তানদের দেখাশোনা করা। ইভানা সন্তানদের খুবই ভালোবাসতো এবং তার সন্তানদের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করতো না। সম্প্রতি জানতে পারি, বিয়ের শুরু থেকেই রুম্মান ইভানাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। কিছুদিন আগে ইভানা জানতে পারে, রুম্মান আরেকজন বিবাহিত মহিলা ব্যারিস্টার সানজানা ইয়াসিন খানের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত। সে নিজে রুম্মানের ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে সানজানার সঙ্গে প্রেমালাপের প্রমাণ পায়। এবং তার স্ক্রিনশট তুলে বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে মেসেঞ্জারে পাঠায়। ইভানা সেখানে আরও জানায় যে, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী রুম্মান ইভানাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়াচ্ছিল যাতে রুম্মান নির্বিঘ্নে ইভানাকে লুকিয়ে সানজানার সঙ্গে ফোনে প্রেমালাপ করতে পারে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর ইভানা রুম্মানের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে জানালে ১৪ই সেপ্টেম্বর সকালে মেজো মেয়ে ফারহানা সুফিয়ান চৌধুরীকে ফোন করে বিষয়টি জানায় আমার বড় মেয়ে। ১৫ই সেপ্টেম্বর বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে ইভানার শ্বশুর আমাকে ফোন করে বলে যে, রুম্মান এবং ইভানার মধ্যে একটা সমস্যা হয়েছে। আমি যেন তার বাসায় যাই মিটমাট করার জন্য। আমরা যখন ইভানার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছাই তখন ইভানার শ্বশুর তাদের বাড়ির সিসিটিভি রুম থেকে বের হয়ে আমাদের বললেন যে, ইভানাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর আমাদের নিয়ে নানা জায়গায় খুঁজলেন। সবাই তখন খোঁজাখুঁজি করে ইভানার মৃতদেহ পায়। ইভানার শাশুড়ি সঙ্গে সঙ্গে বলে ‘এখানে মরতে গেল কেন, বনানীতে (আমাদের বাসা) গিয়ে মরতে পারলো না?’ কিছুক্ষণ পর ইভানার শ্বশুর এসে বলে যে, এখন পুলিশকে খবর দিতে হবে, পোস্টমর্টেম হবে, অনেক সময় লাগবে। আমি তখন ইভানার দুই ছেলে আর অপু (যে মেয়েটি বাচ্চাদের দেখাশোনা করে) কে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে জানতে পারি যে পুলিশ খবর পেয়ে আসে এবং ময়নাতদন্তের জন্য ইভানার মৃতদেহ নিয়ে যায়।
গৃহকর্মী অপুর কাছে পরে জানতে পারি যে, ১৫ই সেপ্টেম্বর সকালে রুম্মান এবং তার মা-বাবা সবাই ইভানাকে বকাঝকা করে এই বলে যে, মারা যাওয়া কী এতো সোজা? তারা ইভানাকে আরও নানা কটু কথা বলে উত্তেজিত করে। এছাড়া রুম্মান নিয়মিতভাবে তার পরিচিত একজন নেফ্রোলজিস্ট প্রফেসর ডা. এম মুজিবল হক মোল্লার কাছে নিয়ে যেতো। ওই নেফ্রোলজিস্ট তার প্রেসক্রিপশনে ইভানার শারীরিক বা মানসিক অভিযোগের কোনো বর্ণনা না লিখে বা কোনো রোগের নাম উল্লেখ না করে এমন সব ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন যা মানসিক রোগের জন্য প্রযোজ্য। অথচ প্রেসক্রিপশন দেখে মনে হয়, তিনি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ নন। তিনি বলেছেন, রুম্মান এমনি অমানবিক যে তার স্ত্রীর দুর্ঘটনার খবর সোনার পর তাকে চিকিৎসা দেয়ার কোনো চেষ্টা করেনি। স্ত্রীর দাফন, জানাজা থেকে শুরু করে কোনো সামাজিক দায়িত্ব পালন করেনি। এমনকি সন্তানদেরও এ পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেয়নি। এসব বিষয়ে ওই থানায় মামলা রুজু করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে বিচারে সোপর্দ করার আবেদন জানায় ইভানার বাবা। বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সংশ্লিষ্ট থানায় ইভানার বাবার মামলাটি গ্রহণ করেনি। এখন তাদেরকে তো আর আইন শেখানো যাবে না। এই সপ্তাহ আমরা বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণ করবো। পুলিশ মামলা না নিলে ইভানার পরিবার ও সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতে মামলা করা হবে। ইভানার বাবা জানায়, শাহবাগ থানা তার অভিযোগ গ্রহণ করলেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেননি। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার জানিয়েছেন, ইভানার বাবার দেয়া অভিযোগটি সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আগেই একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। সেটির তদন্ত চলছে। এছাড়া একই ঘটনায় আরেকটি মামলা নেয়ার সুযোগ নেই। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে ইভানার বাবার এবং এর আগে তার শিক্ষকের দেয়া অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status