বাংলারজমিন

নকল বীজ কিনে প্রতারণার শিকার শতাধিক কৃষক

মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৮:০০ অপরাহ্ন

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চলতি রোপা আমন ধানের বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক কৃষক। নান্টু চন্দ্র সরকার (৪৮) নামে এক গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে এই বীজ কেনেন তারা। নান্টু ২২ জাতের বীজের কথা বলে শতাধিক কৃষকের কাছে নকল বীজ ধান বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, নান্টু চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে কেনা বীজ ধান থেকে চারা গজানোর পর তা ক্ষেতে রোপণের আগেই বীজতলাতে ধানের শীষ বের হয়ে যায়। ফলে এলাকার শতাধিক কৃষকের প্রায় ৪০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষকই আশপাশের এলাকা থেকে অধিক মূল্যে ধানের চারা কিনে রোপণ করেছেন। অনেকে আবার অর্থাভাবে তাদের জমি রোপণ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকালে সরজমিন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নান্টু চলতি আমন মৌসুমে এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষকের কাছে ২৫ মণ নকল বীজ বিক্রি করেন।  প্রতি মণের মূল্য নেন ২২ শ’ টাকা। উপজেলার কাশিপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আলী আহম্মদ জানান, নান্টু চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে প্রায় এক মাস আগে তার দুই একর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যে বিআর- ২২ জাতের ১ মণ বীজ ধান ২২০০ টাকায় ক্রয় করেন। ওইসব বীজ ধানের চারা রোপণ করতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েন তিনি। পরে আশপাশের এলাকা থেকে অধিক মূল্যে ধানের চারা ক্রয় করে এক একর জমিতে রোপণ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় কৃষক আলী আহম্মদের মতো একই ধরনের অভিযোগ করেন কৃষক খাইরুল ইসলাম, রাজিব মিয়া, কৃষক জানু মিয়াসহ আরও অনেকেই ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার বড়তলী-বানিহায়ারী ইউনিয়নে আমন মৌসুমে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। হাইব্রিড ধান বীজ থেকে উৎপাদিত ধান, বীজ ধান হিসেবে ব্যবহার করা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও প্রতারক নান্টু চলতি মৌসুমে ওইসব হাইব্রিড ধানকে বিআর-২২ জাতের আমন ধানের বীজ বলে এলাকার কৃষকদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করেন। এতে ওই ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক কৃষক নান্টুর কাছ থেকে নকল বীজ ধান কিনে প্রতারণার শিকার হওয়াতে ইউনিয়নে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত নান্টু চন্দ্র সরকার বলেন, আমি বীজ ধানের কথা বলে কারো কাছে ধান বিক্রি করিনি। তবে অনেকের কাছে খাবারের জন্য প্রায় ২২-২৫ মণের মতো ধান ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফুলচান মিয়া জানান, গ্রাম পুলিশ নান্টুর কাছ থেকে নকল বীজ ধান কিনে কৃষকরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসকে জানিয়েছি। বড়তলী-বানিহায়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মুখলেছুর রহমান বলেন, নকল বীজ ধান কিনে এলাকার অনেক কৃষক প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, নান্টু এলাকার ২-৩ জন কৃষকের কাছে বীজধান বিক্রি করেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নকল বীজ ধান কিনে বড়তলী-বানিহায়ারী ইউনিয়নের অনেক কৃষক প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। তিনি আরও বলেন, এলাকার কৃষকরা বীজ ধান কেনার আগে আমাদের অফিসের পরামর্শক্রমে যাচাই-বাছাই করে বীজ ধান ক্রয় করলে তারা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হতেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status