বাংলারজমিন

বরিশাল মহানগর বিএনপি

সবার নজর দুটি পদের দিকে

জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৭:২৭ অপরাহ্ন

বরিশাল বিএনপি জেলা, মহানগর, ছাত্রদল, যুবদল সব কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। করোনার জন্য কমিটি গঠন সম্ভব না হলেও এখন নড়েচড়ে বসেছেন সবাই। জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছেন সবাই। এক নেতা এক পদ’ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে একাধিক প্রার্থী তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় জেলা ও মহানগরের দুটি কমিটিতেই মজিবর রহমান সরোয়ার সভাপতি পদে ছিলেন। এখনো তিনি মহানগরের সভাপতি। আর এ নিয়ে দীর্ঘদিন বরিশাল বিএনপিতে কোন্দল। সময় সময় এ কোন্দল এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ঘটে অফিসে তালা দেয়ার ঘটনাও। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হয় একাধিক নেতার নেতৃত্বে একই সময়ে একইদিনে। এবার কমিটি গঠনের সংবাদে আবারো কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একঝাঁক বর্ষীয়ান নেতা এবার সরোয়ারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তাদের সকলের দাবি মহানগরের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদটি। আহ্বায়ক পদের দাবিদার মজিবর রহমান সরোয়ার ছাড়াও আছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, ত্যাগী নেতা হিসাবে পরিচিত এডভোকেট আলী হায়দার বাবুল। সদস্য সচিব পদেও এসেছে একাধিক নাম। এর মধ্যে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জিয়াউদ্দিন সিকদার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, আক্তার হোসেন মেবুল, শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন অন্যতম।
মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে একাধিক পদ আটকে রাখার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী,  কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, জেলার সভাপতি, কখনো মহানগর সভাপতি, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র, শ্রমিক দলের সভাপতির পদগুলো ছিল সব তার। তারেক রহমানের এক নেতা এক পদ ঘোষণার পরও তিনি কোনো পদ ছাড়েননি। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে দলে চরম কোন্দল দেখা দেয়। সম্প্রতি তার নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে একইদিন একই সময়ে মহানগর নেতা মনিরুজ্জামান পাল্টা সমাবেশ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এর আগেও সরোয়ারের একক নেতৃত্বে নাখোশ ছিলেন বিএনপির একাধিক নেতা। এর মধ্যে বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, আলী হায়দার বাবুল, এবায়েদুল হক চান ছিলেন অন্যতম। মেয়র বা সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির একাধিক প্রার্থীকে সরোয়ারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে দেখা গেছে। যদিও সরোয়ারকে থামাতে পারেননি। তবে এবার যারা কেন্দ্রীয় পদে আছেন তাদের জেলা বা মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হবে না এমন সিদ্ধান্তে নড়েচড়ে বসেছেন সরোয়ারের সমালোচক নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, সরোয়ারকে এবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরোয়ার, বিলকিস আক্তার জানান শিরিন, আহসান হাবিব কামাল কেন্দ্রীয় পদ দখল করে আছেন। তাদের হয় কেন্দ্রীয় পদ ছাড়তে হবে, নয়তো জেলা-মহানগরের পদ ছাড়াতে হবে। এছাড়া আহসান হাবিব কামাল সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। ঐ নেতা জানান, বরিশাল বিএনপির কোন্দলের বিষয়টি কেন্দ্র ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। সেজন্য হয়তো এ তিন নেতাকে বাদ দিয়ে জেলা ও মহানগরের কয়েক নেতাকে অদলবদল করে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। সে হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল চানকে মহানগরের দায়িত্ব এবং বরিশাল ৬ আসনের সাবেক এমপি আবুল হোসেনকে জেলার দায়িত্বে দেখা যেতে পারে। তবে তার এ বক্তব্যের সমর্থনে তেমন কোনো জোড়ালো সূত্র পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন মানবজমিনকে জানান, দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় আছেন। ২০/২৫ জন সাবেক ছাত্রনেতা কেন্দ্রের কাছে তার নাম মহনগরের আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। কেন্দ্র যদি তাকে দায়িত্ব দেয় তবে তিনি তা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছেন। সাবেক মেয়র, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, সদ্য কারামুক্ত আহসান হাবিব কামাল মানবজমিনকে জানান, দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি মহানগর বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় তিনি সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। দলের জন্য তিনি জেল খেটেছেন বলে দাবি করে কামাল বলেন, এখনো তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। দল যদি তাকে আবার মহানগরের দায়িত্ব দেয়, তবে তিনি তা গ্রহণে প্রস্তুত বলেও জানান।
তবে যে পদটি নিয়ে চলছে এত লড়াই সে পদের বর্তমানে আসীন মজিবর রহমান সরোয়ার কিন্তু সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মহানগরের ওয়ার্ড বিএনপির সভা ডেকেছেন। তিনি ভালোভাবেই জানেন, মহানগরের পদটি ওয়ার্ড নেতাদের পছন্দেই নির্বাচিত হয়।
সরোয়ার মানবজমিনকে জানান, এখন অনেক দাবিদার প্রস্তুত হয়েছে। অথচ বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে এদের কাউকে দেখা যায় না। সরোয়ার দাবি করেন, বরিশাল আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার প্ররোচণায় মাঠে নেমেছে দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকা এবং এ সরকারের আমলে ঠিকাদারি করে কোটি কোটি টাকা কামাই করা কয়েকজন নামধারী নেতা। কোনো আন্দোলনে এদের পাওয়া যায় না। তৃণমূলের কাছে এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ওয়ার্ড বিএনপির নেতারা যাকে চাইবেন তিনিই পাবেন বরিশাল মহানগর বিএনপির পরিচালনার দায়িত্ব।
একইভাবে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব পদটি নিয়েও শুরু হয়েছে পর্দার অন্তরালে লড়াই। বর্তমানে এ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে রয়েছেন জিয়াউদ্দিন সিকদার। তিনি শ্রমিক নেতা। সাবেক ওয়ার্ড কান্সিলর। সরোয়ারের প্রিয়পাত্র হিসাবে পরিচিত। তবে এবার তাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে অন্যতম বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির। আছেন ’৯০-এর দশকে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা এডভোকেট আমিনুল ইসলাম আমিন। মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বরিশাল ‘ল’ কলেজের ভিপি, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির জাহিদ মানবজমিনকে বলেন, একজন একাধিক পদ নিয়ে থাকবেন আর রাজপথের ত্যাগী নেতারা পদহীন থাকবেন, তা দলের গঠনতন্ত্রে নেই। মজিবর রহমান সরোয়ারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেলা ১২টার মধ্যে তার নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা ছিল রহস্যজনক। তার এই ঘোষণার কারণে ৫/৬টি কাউন্সিলর পদ হারাতে হয়েছে। তিনি ইচ্ছেমতো দলের নেতা নির্বাচন করেন। ত্যাগী নেতাদের ছুড়ে ফেলে দেন। এভাবে দল চলতে পারে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status