এক্সক্লুসিভ

বাবা-মায়ের প্রতি অভিমান

কান পরিষ্কারের টাকায় পড়াশোনার খরচ চালান এমামুল

ফাহিমা আক্তার সুমি

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৭:১৭ অপরাহ্ন

এমামুল ইসলাম।  থাকেন ঢাকার মধ্য বাড্ডায়। বাবা-মা ও ভাই-বোনদের প্রতি অভিমান করে অল্প বয়সে বাড়ি ছাড়েন তিনি। গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তার মাথায় লাগানো কালো বেল্ট। সেই বেল্টের সঙ্গে সামনে গ্লাস লাগিয়ে আলোর প্রতিফলন কানের ভেতরে ফেলেন। সেই আলোতেই মানুষের কান পরিষ্কার করা তার পেশা। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে রাস্তা ও বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে ঘুরে মানুষের কান পরিষ্কার করেই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগান। অভাব না থাকলেও মনোকষ্ট ও পরিবারের প্রতি অভিমান নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। সপ্তম শ্রেণি থেকেই নিজের খরচের টাকা জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।   
চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এমামুল ইসলাম ছোট। পরিবারের সঙ্গে অভিমান থাকলেও তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ রাখেন। তবে পরিবারের দেয়া কোনো অর্থ হাত পেতে নেন না কখনো। এ শহরে ছুটে চলেন আয় করার চিন্তায়। বেছে নেন স্বাধীন এই পেশাটি। তার আগে বিভিন্ন দোকানে কাজ করেছেন। কয়েক মাস মানুষের কান পরিষ্কার করার বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করতে থাকেন। কানের ভেতরে কোনো ময়লা ঢুকলে বা জমা ময়লা কীভাবে বের করতে হয় এসব অন্যদের কাছ থেকে শিখে নেন। এ বিষয়ে দু’এক জায়গায় প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। ধীরে ধীরে কিছু যন্ত্রপাতিও ক্রয় করেন। এরপর শুরু করেন কান পরিষ্কারের কাজ। এ ছাড়াও সে অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করেন। একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত আছেন বলে জানান এমামুল।

তিনি বলেন, এটা একটি স্বাধীন পেশা। এই পেশার মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে পারি। প্রথমে কাজ শুরু করলে হাত কাঁপতো। পরে ভাবলাম এই কাজ করতে গেলে হাত কাঁপলে কাজ করা যাবে না। কারণ কানের ভেতরে কাজ করতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হলে কানের ভেতরে নরম জায়গায় সমস্যা হতে পারে। কাজটি ছোট হলেও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এই আয় দিয়েই আমাকে চলতে হয়। বাবা-মা ১৪ বছর ধরে বিদেশ থাকেন। বাবা একটি সরকারি চাকরি করতেন। ভাই-বোনদেরও কারও কম কিছু নেই। সবাই ভালো অবস্থায় আছেন। পরিবারের প্রতি একটি বিষয় নিয়ে রাগ করে চলে আসি। আসার সময় মনে মনে চিন্তা করতে থাকি যে করেই হোক আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। করোনা পরিস্থিতির সময় এই কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করেছি। লকডাউনের পর আবার শুরু করেছি এ কাজ। এখন প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো আয় হয়।

তিনি আরও বলেন, এ পেশা ২০০৯ সাল থেকে শুরু করি। ২০০৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে অনার্সে ভর্তি হই। ঢাকায় আসার পরে বাবা-মা এমনকি পরিবারের কাছ থেকে এক টাকাও নেইনি। এই আয় দিয়ে চলতে কষ্ট হলেও চলে যাচ্ছে জীবন। সপ্তাহে ৪ দিন কাজ করি। বাকি ৩ দিন বই ছেড়ে উঠি না। একটানা বই পড়ি। স্বাধীন পেশা হলেও পড়াশোনায় প্রভাব পড়ে কিছুটা। পরিবার জানে আমি ঢাকাতে থাকি কিন্তু কী করি সেটা জানে না। আমি চাই পরিবার জানুক। কিন্তু মাঝে মাঝে লজ্জা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ দেখে ফেলে কিনা আমি এ কাজ করি। সেসব জায়গায় বসি যেখানে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যেন দেখা না হয়। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি তো চুরি করছি না। সৎ পথে আয় করছি। আমি আমার কষ্টের জায়গা থেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোনো পয়সা নেই না। তাদেরও আমার আয়ের কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না। ভবিষ্যতে কোনো সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা নেই। পড়াশোনা শেষে গ্রামে গিয়ে একটি প্রাইমারি স্কুল করার চিন্তা আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status