বাংলারজমিন

একসময়ের বিত্তবানরা এখন নিঃস্ব

সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে

২০২১-০৯-২৫

কখনো বৃষ্টি, কখনো বন্যা, খড়া, শীত আর ভাঙন তা তো পিছু ছাড়ে না কখনো। দুর্যোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী এই অঞ্চলের মানুষজনের। ভাঙনের শিকার হাজারো পরিবার জমিদার থেকে হয়েছে পথের ফকির, হয়েছে নিঃস্ব। শত শত পরিবারের স্বপ্ন গেছে ভেসে, তবুও অনেকে পড়ে থাকে চরাঞ্চলসহ ভাঙন কবলিত এলাকা। আকড়ে ধরে ফসল বুনে দেখে সুখের স্বপ্ন, সাজানোর চেষ্টা করে সুখের সংসার আর এই ভাবেই চলছে চিলমারীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিনকাল আর আনন্দহীন দিনরাত গুলো।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ উপজেলার মানুষ প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন, বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খড়া আর অভাব নিয়ে দিন কাটায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে এই এলাকার মানুষ তাদের জীবন সংগ্রামকে জড়িয়ে নিয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কুড়িগ্রাম অনেক অবহেলিত এর মধ্যে চিলমারী অত্যতম। উন্নয়নের জোয়ার চললেও এই উপজেলার উন্নয়ন চাকা যেন আটকেই থাকে। গত কয়েক বছর থেকে উপজেলায় ভূমহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী ভাঙন এ উপজেলার মানুষকে বারবার বিপর্যয়ে ফেলছে আর পাল্টে দিচ্ছে এখানকার মানচিত্র। বড়-বড় নদী এবং শাখা নদী গুলো শত শত গ্রাম ও বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন করে দিয়েছে। একই সঙ্গে চরাঞ্চলে নতুন নতুন গ্রাম গড়ে উঠেছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ ভূমিহীন হয়েছে। অধিকাংশ মানুষের নিজস্ব বসতবাড়ি নেই। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক সময় তাদের বাড়িঘর সম্পদ সামাজিক প্রতিপত্তি জমিদারি সবই ছিল। কিন্তু এখন তারা সব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এরা বছরে বেশিরভাগ সময় বেকার থাকে। বছরের ৩/৪ মাস আমন ও বোরো ধান কাটার মৌসুমে অন্য জেলায় কাজ করতে যায়। আবারো অনেকে বিভিন্ন চরে ফসল ফলিয়ে জীবন ধারনের চেষ্টা চালায়। পরিসংখ্যান ও উপজেলা কৃষি অফিস তথ্য অনুযায়ী চিলমারীতে অঞ্চলের ২২ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমি চরাঞ্চলে রুপান্তরিত হয়েছে। আর ভুমিহীন মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার। এর মধ্যে বেশির ভাগ পরিবার সম্পূর্ণ রুপে ভূমিহীন, বাকি পরিবারের মধ্যে প্রান্তিক কৃষক, নি¤œবৃত্তের কৃষক, এবং বিভিন্ন স্তরের রয়েছে। ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চিলমারী উপজেলাটি। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রের তীরেই অবস্থিত অঞ্চলটি। গত ২ বছরে প্রায় ১০০টির উপরে গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ বসতবাড়ি হারিয়েছে। এদের অধিকাংশ নদীর তীর উঁচু জমি কিংবা রাস্তার ধারে বসতি স্থাপন করেছে। এখানে অন্যান্য জেলা উপজেলার তুলনায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে প্রতিবন্ধিরা বঞ্চিত রয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, অন্ন, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা কিন্তু সর্বত্র এখন পর্যন্ত স্বনির্ভর হতে পারেনি। অনেকে এখানে কু-সুংস্কার নিমজ্জিত। অধিকাংশ উদ্বাস্তু মানুষ উপজেলার চরাঞ্চলে বাস করে। নদী সংলগ্ন চরাঞ্চল ছাড়াও এরা অবদা বাঁধ ও বাঁধের পাশেও বসত গড়ে তুলেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, প্রায় ২ হাজার পরিবারের বেশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বাঁধে ও বাঁধের পাশে বসত স্থাপন করেছে। এছাড়া আরও কয়েকশত পরিবার এনজিও এবং অন্যান্য কল্যাণ মূলক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় উঁচু ভিটায় আশ্রয় নিয়েছে। চরাঞ্চলে সরেজমিনে গেলে সেখানকার অসহায় মানুষ জানায় তাদের দুর্ভোগের কথা। নদী ভাঙন তাদের প্রধান কারন। তারা মনে করে বেশকিছু আনন্দ উপভোগ করা ছাড়াই তারা চলে যাবেন। তবুও তারা চায় একটু সুখ একটু আনন্দ চায় তারা কাজ আর কাজ করেই সুখ পেতে চায়। কথা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, এই উপজেলা মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সকল সুবিধার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status