দেশ বিদেশ

আরেফিন বাদল-এর ৭৪তম জন্মদিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

সত্তর দশককে বলা হয় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য চর্চার স্বর্ণযুগ। এ সময়ে বাংলাদেশে বেশ ক'জন শক্তিমান সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কথা সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে। আর সেই সময়টাতে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যে ক'জন লেখক–কথাসাহিত্যিক-নাট্যকার-গবেষক-নিবন্ধকার ও সাংবাদিক, সম্পাদক আরেফিন বাদল তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ এই গুণী মানুষটির ৭৪তম জন্মদিন। আজকের এই শুভ জন্মদিনে নিরন্তর শুভকামনা ও সুস্থতাপূর্ণ দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন তার শুভানুকাঙ্খীরা. আরেফিন বাদল ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর, শনিবার দুপুর বারোটায় টায় টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার মোয়াইল-কাহেতা গ্ৰামে, নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার, ঘাটাইল থানার পোড়াবাড়ি গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে' ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লিখেছেন কবিতা, উপন্যাস, নাটক। তাছাড়া বেশকিছু গবেষণা ও সম্পাদনা গ্ৰন্থও রয়েছে তার। নিবেদিত সাহিত্যসেবী, সংবাদকর্মী বিশেষ করে চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনায় তার রয়েছে ঈর্ষণীয় ভূমিকা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। ষাটের দশকে লেখালেখি শুরু করলেও সত্তর দশকে তার পূর্ণ বিকাশ এবং এ সময়েই একজন সচেতন সামাজিক মানুষ হিসেবে স্বাধীনতাপরবর্তী যাপিতজীবনের হতাশা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, সমাজের নানা অসঙ্গতি, শ্রেণি-সংগ্রাম, সংক্ষুব্ধ গণমানুষের আবেগ, রাজনৈতিক ঙ্খলন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন পীড়াদায়ক ঘটনা এবং তার একান্ত মনের ভাবনাগুলো তিনি কথাসাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। গণমানুষের সাম্প্রতিক জীবন আশা-আকাঙ্ক্ষা, মনোজাগতিক জটিলতা— সবই তার গল্পে উঠে আসে শৈল্পিক উৎকর্ষতায়। সপ্রতিভ আরেফিন বাদল একজন কালজয়ী মানবিক ও অসম্প্রদায়িক বাঙালি চৈতন্য সম্পন্ন লেখক। সাম্যবাদের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে তিনি একটি শোষণহীন, ভেদ-বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নকে লেখার বিষয়বস্তু করে সুন্দর জীবনের আকাঙ্ক্ষায় যেমন উন্মিলিত তেমনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সচেতন বস্তবাদী চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী। আরেফিন বাদল তার মেধা, প্রতিভা উদ্ভাবনী চিন্তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের প্রথম রঙিন বিনোদনমূলক পত্রিকা পাক্ষিক 'তারোকালোক', সাপ্তাহিক 'আগামী', সাপ্তাহিক 'বিশ্ববাঙালী', মাসিক 'কিশোর 'তারোকালোক', মাসিক 'তারোকালোক ডাইজেস্ট', সাহিত্য পত্রিকা ত্রৈমাসিক 'বালার্ক' ও তারোকালোক 'কার্টুন সিরিজ'। সবগুলো পত্রিকার তিনি প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক, ও প্রকাশক। এছাড়া দৈনিক 'পয়গাম' সংবাদ সংস্থা বিপিআই, সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাংবাদিকতাসহ সরকারি চাকরিসূত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা পাক্ষিক 'প্রতিরোধ' ও বাংলাদেশ স্কাউট-এর মুখপত্র মাসিক 'অগ্রদূত'-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন বহুদিন। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে, সাধনায় আত্মনিবেদিত আরেফিন বাদল শুধু লেখালেখি ও সম্পাদনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি— বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে নিরলসভাবে কাজও করেছেন। তিনি আজীবন দেশ ও সমাজের কল্যাণে এবং সমাজ-বিকাশের ধারায় দৃশ্যমান সাহিত্য, কবিতায়, সম্পাদনায়, নাটকে সর্বোপরি বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চায় দিগন্তবিস্তৃত উজ্জ্বল আকাশ। যার সৃজনশীল জগতে বিচরণ করে অনেকে আজ দেশ সেরা, বিখ্যাত।
আরেফিন বাদলের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ: 'প্রসবোন্মুমুখ যন্ত্রণাবিদ্ধ' (১৯৭৮), 'আগামীকাল ভালোবাসার' (১৯৮০), 'Short stories' (১৯৮১), 'অন্তুর বর সাজা' (১৯৯০), 'নিত্যদিন কালগোনা' (২০০৪), 'মুক্তিযুদ্ধের গল্প' (২০১০), 'গল্প সমগ্র' (২০১৮) ইত্যাদি।
উপন্যাস: 'নিসর্গের সন্তানেরা' (১৯৮১), 'ইমুবাবু' (১৯৯৮), 'ঐ আসে আমিরালী' (১৯৯৯), 'সারা'র ব্রীজ' (১৯৯৯), 'হাকিম উদ্দিন তরফদার' (২০০১), 'অতঃপর একটি স্যুটকেস' (২০১৭), 'উপন্যাস সমগ্র' (২০১৮), 'এবং মাতৃত্ব' (২০১৯)।
কিশোর গল্প: অন্তুর বর সাজা।
কথাসাহিত্যের বাইরে তার গবেষণা গ্রন্থ: 'মওলানা ভাসানী, 'ঐতিহাসিক প্রেমপত্র, 'রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারী', 'বাংলাদেশের নির্বাচিত গল্প', তারকালোকের জন্ম ও আমার কথা।
টিভি নাটক: 'কাছের মানুষ কাঁদে, (১৯৮৯), 'ঐ আসে আমিরালী' (১৯৮৯), 'ইমুবাবু' (১৯৯৭), আপন অস্তিত্বে', 'নেতা গেমে যাচ্ছেন' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসে আরেফিন বাদল-এর বর্ণাঢ্য "জীবন ও কর্ম" নির্ভর বিচিত্রধর্মী বিভিন্ন গুণীজনের তথ্য বহুল লেখা নিয়ে, টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থগার থেকে সবুজ মাহমুদ-এর সম্পাদনায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ছয় শত পৃষ্ঠার আরেফিন বাদল সংখ্যা 'যমুনা' গ্রন্থটি। এই বইটিকে বিগত ৫০/৬০ বছরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গের নির্মোহ বিশাল তথ্যভান্ডরও বলা চলে। পেশাগত জীবনে তিনি সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সরকারি আমলা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বাইরে বাংলাদেশর বেসরকারিভাবে নির্মিত প্রথম টিভি (প্যাকেজ) নাটক– 'প্রাচীর পেরিয়ে' (১৯৯৪)-সহ বেশ কয়েকটি নাটকের প্রযোজক এবং নির্মাতা তিনি। তিনি অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে তার প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত পত্রিকা সমূহে বাংলা ভাষায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ডিটিপিতে বাংলা লিপির ব্যবহার ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করেন।
আরেফিন বাদল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার ও কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আরেফিন বাদল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ 'ভাসানী পদক'সহ বহু দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন; তিনি বাংলা একাডেমীর একজন 'আজীবন সদস্য'।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status