প্রথম পাতা

বিচিত্র পেশা- ১

সংসার চলে টাকা বেচাকেনায়

ফাহিমা আক্তার সুমি

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার, ৮:২৭ অপরাহ্ন

বিচিত্র পেশা। সংসারের ঘানি টানতে মানুষ বেছে নেয় পেশা। চোখের সামনে এমন হাজারো পেশায় জড়িতদের সঙ্গে দেখা হয় পথে-ঘাটে। সবার উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন। টাকা কামাই। যে টাকা দিয়ে সংসার চলে আবার সেই টাকাই হয় পণ্য। টাকা দিয়ে টাকা বিক্রি করে সংসার চালানো এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাদেরই একজন মহসিন খান। চাঁদপুরে বাড়ি। নিজের তেমন জমিজমা নেই। টাকা বেচা-কেনা করে সংসার চালান। বাবা কৃষিকাজ করতেন। সেই আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। অভাবের কারণে অল্প বয়সে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশোনা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পরিবারের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চলে আসেন ঢাকায়। শুরু করেন টাকা বেচা-কেনার ব্যবসা। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। করোনা মহামারির মাঝে পরিবারের অভাব-অনটনেও হাল ছাড়েননি তিনি। আয় কমে গেলেও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণ-পোষণ চালাতে বেগ পেতে হয় তাকে।
মহসিন খান জানান, ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। ঘরে ৩ বোন তার। বাবা কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। ছোট্ট বয়সে বাবার কষ্ট দেখে চলে আসি ঢাকায়। ঘুরতে ঘুরতে টাকা বেচা কেনার দোকানে কাজ শুরু করি। এক সময় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন এভাবে কাজ করতে করতে নিজেই দোকান নিয়ে ব্যবসাটি ভালোভাবে শুরু করি। পরিবারকেও সহযোগিতা করতে শুরু করি। পড়াশোনা না করায় অন্য পেশায়ও যেতে পারি না। পেটের দায়ে এই ব্যবসা করি। ভালো না লাগলেও এই পেশা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। করোনা সব শেষ করে দিয়ে গেছে। আগে মোটামুটি আয় হলেও এখন খুব একটা হয় না। সারাদিন দোকান খুলে বসে থাকতে হয়। ক্রেতা নেই কোনো। এভাবে কী আর সংসার চলে? তবুও পরিবারকে অভাব বুঝতে দেই না। অভাবের কারণে নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি। সেজন্য কষ্ট হলেও দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছি। এদিকে, অভাবের এই সংসারে দুই লাখ টাকার মতো ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আছি। এই ব্যবসার উপর দিয়ে মাসে মাসে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বেগ পেতে হয়। করোনার জন্য বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শুধু মহসিন খান নয়, রাজধানীর গুলিস্থানে তার মতো অনেকে টাকা বেচা-কেনা করে সংসারের খরচ চালান। মো. সোহাগ জানান, তার বাবা ১০ বছর ধরে টাকা বেচা-কেনার ব্যবসা করতেন। ২০১৮ সালে চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। বাড়িতে দুই বোন ও মা আছেন। নিজে ঢাকার একটি কলেজে মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তাকে ধরতে হয় সংসারের হাল। বাবার ব্যবসাটি শুরু করেন তিনি। পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে থাকেন। করোনার কারণে তার সংসারের খরচ ও নিজের পড়াশোনা চালাতে কষ্ট হলেও টিকে থাকতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন সোহেল রানা। হঠাৎ চাকরি চলে যায় তার। কিছুদিন বেকার থাকার পর শুরু করেন টাকা বেচা-কেনার কাজ। তিনি জানান, হঠাৎ চাকরিটা চলে যায়। বেকার থেকে অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করার পর এই পেশা শুরু করি। দেড় লাখ টাকার মতো লোন আছে। করোনার আগে ভালো ব্যবসা করেছিলাম। এখন একটু খারাপ অবস্থায় আছি। কোনোদিন ৫শ’ টাকার মতো আয় হয় আবার কোনোদিন দু’একশ’ টাকা। এই ব্যবসার আয় দিয়েই পরিবারের সব খরচ চালাতে হয়।
সাত-আট বছর ধরে টাকার ব্যবসা করেন আরিফ। পরিবারের অন্য সদস্যরা এই ব্যবসাই করে গেছেন। তারপর থেকে এই পেশা তার ভালোলাগে। এই পেশার আয় দিয়েই তিনি পরিবারের খরচ চালান। তিনি জানান, তিনি ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড়। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। বাবা কৃষিকাজ করতেন। তার বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন পরিবারের সব খরচ আমাকে চালাতে হয়। অন্য ভাই-বোন ছোট। বর্তমানে করোনার জন্য আয় অনেকটা কমে গেছে। আগের মতো আর বেচা-কেনা হচ্ছে না। ভালোলাগা থেকে এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছি না।
আরেক ব্যবসায়ী কিরণ জানান, ৮ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসা করেন। তার নানা চল্লিশ বছর আগে এই ব্যবসায় ছিলেন। এই পেশা থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ চালান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status