বাংলারজমিন

জায়গা নেই লাশ দাফনের

যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহের ৫৩ গ্রাম পানির নিচে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার, ৮:২৪ অপরাহ্ন

যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ অঞ্চলের ৫৩ গ্রাম পানির নিচে। বাড়ির উঠানে হাঁটু জল থেকে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। অনেকের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে পানি। রান্না করার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করেছে ওই সব গ্রামবাসী। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার কবরস্থান ও শ্মশানের চিতা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লাশ দাফন নিয়ে বিপাকে পড়েছে এলাকাবাসী। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কিছু অংশ এবং মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ও কুলটিয়া ইউনিয়নের ৫৩ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ওইসব গ্রামের বাড়ির উঠানে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি। গোয়ালঘরে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেকে। রান্নাঘরে পানি ঢোকায় রান্নার সংকটে অনেকে শুকনো খাবার খাচ্ছে। জলাবদ্ধ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এলাকার মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ায় মাছচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রেমবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান জানান, ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- জিয়াডাঙ্গা, মাগুরা, বনগ্রাম, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া, চাপাতলা, উড়োতলা ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম। সুন্দলী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে। সেগুলো হলো- সুন্দলী, ডহর মশিয়াহাটি, ডাঙ্গামশিয়াহাটী, ভাটবিলা, সড়াডাঙ্গা, ফুলেরগাতী, হরিসপুর, গোবিন্দপুর, ধোপাপাড়া, আড়পাড়া, রাজাপুর, রামসরা ও ধোপাদী গ্রাম, চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা, বেদভিটা, বলারাবাদ, আন্দা, চলিশিয়া, কোটা, দিঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গা গ্রাম। এ ছাড়া মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখরচন্দ্র রায় জানান, তার ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, সেগুলো হলো- বাজেকুল্টে, হাটগাছা, সুজতপুর, লখাইডাঙ্গা, কুলটিয়া, মহিষদিয়া, আলীপুর, পুড়াডাঙ্গা, পদ্মনাথপুর, আসীংগাড়ী, পাড়িয়ালী ও ডাঙ্গা মহিষদিয়া গ্রাম। হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের বিপদ ভঞ্জন মণ্ডল জানান, তার ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে সেগুলো হলো- নেবুগাতী, কুচলিয়া, পাঁচবাড়িয়া, পাঁচকাঠিয়া, ফুলবাড়িয়া, কুমোরসিঙ্গা, হরিদাসকাঠি ও বাহিরডাঙ্গা গ্রাম। জলাবদ্ধ গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি নিয়ে চলছে জীবন-জীবিকা, হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে  রান্নার সংকটে পড়েছেন। মনিরামপুর উপজেলার সুজতপুর গ্রামের গৃহবধূ শেফালী হালদার বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে এ বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এক দিনের বৃষ্টির কারণে ৩ দিন ধরে জল বৃদ্ধি পায়। তার বাড়িতে হাঁটু পানি জমেছে। আরও জল বাড়বে। এ অবস্থায় তিনি চুলা জ্বালাতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেয়ে তাদের দিন চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে বর্ষাকাল আসলেই তার বাড়িতে জল জমে। তিনি সরকারের কাছে কোনো ত্রাণ চান না। ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান।’ মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পূজা রায় ও পূজা মণ্ডল জানান, ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাদের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ বছর করোনা পরিস্থিতির পর বিদ্যালয় চালু হলেও জলাবদ্ধতার কারণে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না। তাদের দাবি, সরকার যেন এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করেন।  অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের মিরন তরফদার বলেন. ‘তার বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। পুকুর ভেসে মাছ চলে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে বিলে ৩ বছর ফসল হয় না। তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন।’ ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ‘পলি জমে শ্রী হরি নদী ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে এ জলাবদ্ধতা। এলাকার কবরস্থান ও শ্মশান তলিয়ে যাওয়ায়। দাফন করা নিয়ে সংকটে পড়েছে এলাকাবাসী। তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট বন্ধ করে পাম্প দিয়ে পানি সেচে জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, পাম্প দিয়ে পানি সেচে জলাবদ্ধা দুর হবে না। টিআরএম এর মাধ্যমে এলাকার নদ নদীর নাব্যতা ফেরানো সম্ভব। তিনি বলেন, দ্রুত জোয়ারাধার (টিআরএম) না করলে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হবে।’ যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভবদহ এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য সেচপাম্প বসানো আছে। সেগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশা করা যায় পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয়ে যাবে। তাছাড়া ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর বৃষ্টি একটু বেশি হয়েছে তাই পানি বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবদহ এলাকার এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য তিনি সরকারের উপর মহলকে জানাবেন।’  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status