দেশ বিদেশ

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার, ৭:১৮ অপরাহ্ন

দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে  কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স এগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীগণের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম  শুরু হলো। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার রাতে এই চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কার্যক্রমের শুভ যাত্রা ঘোষণা করেন। ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে বলে তিনি জানান। এর ফলে দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলে মন্ত্রী  দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সিমিউই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রযাত্রায় একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন।
 বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং সিমিউই-৬ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কামাল আহমেদ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিনা মাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে। ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে সেই পশ্চাদপদতা অতিক্রমই বাংলাদেশ কেবল করেনি বরং হাওর, দ্বীপ, চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ  দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারি ছিল মাত্র ৭ লাখ। বর্তমানে দেশে ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ২৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরও একটি ঐতিহাসিক অর্জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযুক্তির যুগে। বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ছাড়াও আইটিইউ, ইউপিইউ-এর সদস্যপদ এবং টিএন্ডটি বোর্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করে গেছেন। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারি ভিশনারি নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ-এর দিকনির্দেশনায় গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত  স্থাপন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতি সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশ নামটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে  হ্যানরি কিসিঞ্জার যে বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা সেই বাংলাদেশকে অনুসরণের জন্য তার পিতৃভূমি কেনিয়াবাসীর প্রতি আহ্‌বান জানিয়েছেন। এটাই হলো বাংলাদেশের অর্জন শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সফলতা তুলে ধরে বলেন, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের ৩টি প্রস্তাবকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে একনেক সভায় তা অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির কারণে কনসোর্টিয়াম কর্তৃক সরবরাহকারী নির্বাচনে বেশ বিলম্ব হয়। ফলে গত ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত  কার্যাবলীটি চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নির্ধারণ করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কনসোর্টিয়ামের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিজ নিজ দেশ থেকে অনুরূপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে কনসোর্টিয়ামের  অস্থায়ী সদর দপ্তর সিঙ্গাপুরে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রেরণ করবেন। বিসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিএসসিসিএল কুয়াকাটায় দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু করে। এই ক্যাবলটির সক্ষমতা প্রথম ক্যাবলটি হতে অনেক বেশি। তথাপিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই মন্ত্রী আমাকে বলেন যে, দেশে যেভাবে ব্রডব্যান্ড সেবার প্রসার হচ্ছে তাতে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতাও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এই কথা বলে তিনি আমাকে দ্রুত তৃতীয় একটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযোগের উদ্যোগ নিতে বলেন। তিনি জানান ‘আজ দেশে ২৭০০ জিবিপিএস-এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মধ্যে বিএসসিসিএল একাই সরবরাহ করছে প্রায় ১৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।’
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে ৬০০০ জিবিপিএস-এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিএসএনএল এর নিকট ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানির জন্য নুতন করে চুক্তি  স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়ার জন্য সৌদি আরব ও ফ্রান্সের সঙ্গে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন আছে।
সিমিউই-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলঙ্কা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবতি টেলিকম, জিবতি. মবিলিঙ্ক-সৌদি আরব. চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল, চায়না টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিশর এবং অরেঞ্জ ফ্রান্স।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status