অনলাইন
বিলাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
রহমত আলী, লন্ডন থেকে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৪:১০ অপরাহ্ন
গত ২১শে সেপ্টেম্বর ইস্ট লন্ডনের ডকল্যান্ডর ইস্ট ফেরি রোডে গ্যাং ফাইটের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ৩০ বছরের এক যুবক। জানা যায়- তখন স্থানীয় একদল যুবক গ্যাং ফাইটে লিপ্ত হলে ছুরি দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করতে থাকে। এ অবস্থায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে একজন মাটিতে পড়ে গেলে অন্যরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে প্যারাডেমিকস টিম এসে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও রাস্তায় পড়ে থাকা মারাত্মক আহত যুবককে বাঁচাতে পারেনি ।সাথে সাথে পুলিশও ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিহত যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি বা কেউ তার সন্ধানে আসেনি। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। এবছর এ যাবত ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে এটি পুলিশের তদন্ত তালিকায় ৯৪তম বলে ডেইলি মেইল সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, গত ১২ সেপ্টেম্বর পূর্ব লণ্ডনের শ্যাডওয়েলের গোল্ডিং স্ট্রিটে মারাত্মক ছুরিকাঘাতে আহত এক তরুণের রক্তের উপর বসে থাকার ভয়াবহ ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণ রাস্তার ফুটপাতে বসে আছেন এবং ম্যাচেটের আঘাতে ছিন্নপ্রায় তার হাতের রক্তে পুরো রাস্তা ভেসে যাচ্ছে এবং সে রক্তের উপর বসে আছে । তবে এ ঘটনায় পাশের রাস্তা থেকে ছুরিকাঘাতে আহত ২০ বছর বয়সী আরেক তরুণকে আটক করে পুলিশ।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এক কিশোর আরেক কিশোরকে ছুরি দিয়ে পেছন থেকে আক্রমণ করছে। সে সময় সেখানে অবস্থানরত একজনের গাড়ী থেকে করা ওই ভিডিওচিত্রটির স্থান টাওয়ার হ্যামলেটসের স্টেপনী এলাকার বেলগ্রেইভ স্ট্রিট।
যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি সহকর্মীর ছুরিকাঘাতে আরেক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম সেলিম উদ্দিন (৪৩)। তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজারের মরহুম সাদই মিয়ার ছেলে। স্কটল্যান্ডের ইনভারকেটিং হাই স্ট্রিটের বাংলাদেশি মালিকানাধীন গুলশান তান্দুরি রেস্টুরেন্টের শেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
নিহত সেলিমের আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, এ রেস্টুরেন্টে শুক্রবার বিকেলে কাজ করার সময় তার সহকর্মী ফয়েজের সাথে কথাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে সহকর্মী ফয়েজের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সেলিম। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে হামলাকারী ফয়েজ মিয়াকে ছুরিসহ ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সেলিম দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ যুক্তরাজ্যে বসবাসের পর কিছুদিন আগে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্কুল শিক্ষিকা সাবিনা নেছার (২৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আগের রাতে নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন স্থানীয় গ্রিনউইচের কিডব্রুকের একটি পার্কে সাবিনা নেছার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং বলছে যে, শুক্রবার রাত ৮.৩০ টার দিকে একটি পাবে যাওয়ার পথে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় খুনি সন্দেহে ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, সাবিনা দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের লুইশামের রাশ গ্রিন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এই শিক্ষক গত গ্রীষ্মকাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং এর আগে প্রায় তিন বছর যাবৎ ইংরেজি ভাষাভাষীদের ভাষা দক্ষতা শিখতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বেডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন করার আগে গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে অধ্যায়ন করেছিলেন।
তার মৃত্যুতে সে স্কুলের প্রধান শিক্ষক লিসা উইলিয়ামস শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, তিনি ছিলেন একজন মেধাবী, দয়ালু, যত্নশীল শিক্ষক এবং একেবারে তার ছাত্রদের প্রতি নিবেদিত। সামনে তার আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল। কিন্তু এ ক্ষতি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ মর্মান্তিক ঘটনায় তার পরিবারের সবাই সত্যিই বিধ্বস্ত। তার বাবা -মা একেবারে হতবাক, তারা এখনও অসহনীয় যন্ত্রণায় দিনযাপন করছেন। হতভাগ্য সাবিনা নেছার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দাওরাই গ্রামে। তার মৃত্যুতে লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে ইস্ট লন্ডনের ক্রসহারবার ডিএলআর স্টেশনে ছুরিকাঘাতে নিহত মোহাম্মদ সামির উদ্দিন হত্যা মামলায় মোহাম্মদ হক নামে এক ব্যক্তিকে দোষি সাব্যস্ত করেছে আদালত। দোষি ব্যক্তির বয়স ২২ বছর। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের ম্যানচেস্টার রোডের বাসিন্দা। প্রায় ১০ সপ্তাহ শুনানি শেষে গত ২০শে সেপ্টেম্বর লন্ডনের সাউদার্ক ক্রাউন কোর্ট তাকে হত্যা এবং মারাত্মকভাবে শারীরিক জখমের অভিযোগে দোষি সাব্যস্ত করে। আগামী ৮ অক্টোবর মোহাম্মদ হকের সাজার মেয়াদ ঘোষণা করবে আদালত।
নিহত ১৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ সামির উদ্দিনকে গত বছরের ১০ জুলাই ডকল্যান্ড এলাকার ক্রসহারবার ডিএলআর স্টেশনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। আদালত জানিয়েছন, ঘটনার দিন বিকেলে ৬টার দিকে ক্রসহারবার ডিএলআর স্টেশনে নিহত সামির উদ্দিনসহ তার তিন বন্ধু ছিলেন। অন্যদিকে মোহাম্মদ হকের সঙ্গেও তার বন্ধুরা ছিলেন। স্টেশনে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্টেশনের সিঁড়ির নিচে সামিরকে মোহাম্মদ হক ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনার দু'দিন পর ১২ জুলাই স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পন করেন ঘাতক হক।