শেষের পাতা

প্রেম করে অর্থ হাতিয়ে নেন রেজোয়ান

রুদ্র মিজান

২০২১-০৯-২৪

কখনো প্রকৌশলী। কখনো ছাত্রনেতা। একেক স্থানে একেক পরিচয়। এসব পরিচয় ব্যবহার করে নারীদের সঙ্গে গড়ে তুলে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। মিথ্যা পরিচয়ে সম্পর্ক স্থাপনেই সীমাবদ্ধ থাকেন না তিনি। হাতিয়ে নেন অর্থ। এমন অভিযোগ থানা পুলিশ থেকে আদালতে। এমন কি সামাজিকভাবে বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী নারীদের একজন লিখিত আবেদন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরের কাছেও। কিন্তু কোনো কিছুতেই থামেনি প্রতারণার জাল বিস্তার। একের পর এক প্রতারণা করে যাচ্ছেন এই যুবক। ৩৬ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম মুমিনুর রহমান। অনেকের কাছে রেজোয়ান ওরফে রাজন নামে পরিচিত। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার  দিঘলিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার পুত্র তিনি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুলতান স্যার হিসেবে পরিচিত তার পিতা। বর্তমানে মহাখালীর বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার নানা অভিযোগ রয়েছে রেজোয়ানের বিরুদ্ধে। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এই যুবক। স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে এমন তথ্য দিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে রেজোয়ান। পরবর্তীতে কখনো মায়ের অসুস্থতা কখনো বাবার অসুস্থতার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ঋণ নেন তিনি। নিজেকে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা পরিচয় দিতেন ওই তরুণীর কাছে। বিরোধী দলের রাজনীতি করার কারণে মিথ্যা অভিযোগে সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেক সমস্যা তার। এই অজুহাতেও টাকা ধার নিয়েছে রেজোয়ান।
এভাবেই চলছিল কয়েক বছর। সম্প্রতি তারা জানতে পারেন রেজোয়ানের কথা মিথ্যা। বিবাহিত রেজোয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও অনেক তরুণীর। বিষয়টি ভুক্তভোগী ছাত্রী তার পরিবারের সদস্যদের অবগত করেন। পরবর্তীতে অভিযোগ করায় রেজোয়ানের পরিবার, জনপ্রতিনিধি থেকে থানা পুলিশ পর্যন্ত। এ বিষয়ে ওই তরুণীর ভাই জানান, পাওনা টাকার বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও রেজোয়ান এখন তা অস্বীকার করছে। বাধ্য হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন গত ৩০শে আগস্ট।
সূত্রমতে, একজন আরজের সঙ্গে বন্ধুতা রয়েছে রেজোয়ানের। তাদের অন্তরঙ্গ বিভিন্ন ছবি ইতিমধ্যে ছড়িয়ে গেছে নেট দুনিয়ায়। ওই আরজে তরুণী জানান, গত বছরের এপ্রিলে এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় রেজোয়ানের সঙ্গে। নিজেকে ডিভোর্সি পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করেন রেজোয়ান। দেন বিয়ের প্রতিশ্রুতিও। শেষ পর্যন্ত ওই তরুণী জানতে পারেন তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। গত এপ্রিলে ভাটা পড়ে তাদের সম্পর্কের। আরজে তরুণী বলেন, রেজোয়ানের সঙ্গে আমার এখন কোনো সম্পর্ক নেই। যোগাযোগ নেই। আমি দ্রুত অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছি।
মুমিনুর রহমান রেজোয়ানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ফারহানা তাসমিন হীরা (৩৪)। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে হীরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রেজোয়ান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর থেকেই নানা কৌশলে হীরা ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে একটি পুত্র সন্তানের মা-বাবা হন তারা। সংসার টিকিয়ে রাখতে রেজোয়ানের অত্যাচার নীরবে সহ্য করেন হীরা। এরমধ্যেই জানতে পারেন বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন রেজোয়ান। এ নিয়ে কলহ তৈরি হলে রেজোয়ান তা অস্বীকার করেন। তার স্ত্রী ফারহানা তাসমিন হীরা অভিযোগ করেন, উল্টো তাকে চাপে রাখতে নানা অজুহাতে যৌতুক দাবি করেন। রেজোয়ানের দাবি অনুসারে টাকা না দিতে পারায় গত ৮ই মে রাতে মারধর করে হীরাকে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের বাসা থেকে বের করে দেন। এ বিষয়ে হীরা আদালতে মামলা করেন। হীরার স্বজনরা জানান, মামলা ছাড়াও একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের তথ্য প্রমাণসহ স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উত্তরা পশ্চিম থানাতেও। ওই থানার উপ-পরিদর্শক সামিউল আলম জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব বিষয়ে মুমিনুর রহমান রেজোয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। রেজোয়ান বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ নেই। এসব মিথ্যা। এক পর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশে আরও অনেক বড় বড় বিষয় থাকতে আপনার মতো সাংবাদিক আমার পেছনে পড়ছেন কেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status