বাংলারজমিন

মায়ের লাশ দাফনে সন্তানের বাধা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫০ অপরাহ্ন

ছিল নাড়ি ছেঁড়া ধন, তিল তিল করে মানুষ করে গড়ে তুলেছেন নিজ সন্তানকে। লেখাপড়া করিয়ে মানুষও করেছিলেন। ছেলে হয়েছিল শিক্ষক। এমনভাবে সংগ্রাম করতে গিয়ে কৃষক পরিবারের এই মা বাদ দিয়েছিলেন নিজের আরাম- আয়েশের কথা। অথচ মৃত্যুর পর সে সন্তানই দিয়েছেন লাশ দাফনে বাধা। অন্তিম মুহূর্তে  বারবার সন্তানকে শেষ দেখতে চেয়ে খবর পাঠাচ্ছিলেন। সন্তানের জবাব ছিল স্পষ্ট তিনি  “মায়ের মুখ দেখবেন না”।
জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে মৃত মান্নানের স্ত্রী মালেকা বেগম (৬৫) বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে তিনি মারা যান। নানা জটিলতার সঙ্গে তিনি গত এক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হন। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বড় ছেলে স্থানীয় একটি বেসরকারি ওশিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ দাফনে বাধা তৈরির চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে দাফন হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে আব্দুল মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরে জমির বণ্টন নিয়ে তাদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসময় ইকবাল হোসেন তার মায়ের স্বামী স্বত্বেও পাওয়া সম্পত্তির মালিকানা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাকে একা জমি লিখে না দেয়ার তার মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এসময় তার মা তার ছোট ভাইয়ের বাসায় ওঠেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছোট ছেলেই তার দেখভাল করতো।
ইকবালের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন তিনিই তার মায়ের দেখভাল করে আসছিলেন। পরে হঠাৎ করে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িতে লাশ নিয়ে আসার পর তার বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের লাশ দাফনে বাধা তৈরি করেন। যদিও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তারা লাশ দাফন করেন। তিনি আরও বলেন, যে সন্তানকে তিনি খেয়ে না খেয়ে মানুষ করলেন, সে সন্তানটি শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলো না, কবরে একমুঠো মাটিও দিলো না। সবাই যখন দাফন-কাফনে ব্যস্ত, সে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে বসে রইলো।  তার মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার ভাইকে দেখতে অনেক  ডেকেছিল। সে তাতেও সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে মৃতের ছেলে ইকবাল হোসেন বলেন, তার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই তার মাকে তার ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারণায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তবে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত না করেই চলে গেছে। তিনি এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও মৃত নারীর কোভিড পজিটিভ ছিল। তবে তিনি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন সেহেতু অভিযোগ থাকলে সেখানে মামলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status