প্রথম পাতা
আফগান ইস্যুতে সার্ক বৈঠক বাতিল
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২০২১-০৯-২৩
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে আফগানিস্তান ইস্যুতে প্রস্তাবিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর বৈঠকটি বাতিল হয়ে গেছে। আগামী শনিবার সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ‘ইনফরমাল’ ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বৈঠক আয়োজন প্রশ্নে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মতৈক্য না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠিয়ে কাঠমান্ডুস্থ সার্ক সদর দপ্তর তা বাতিল ঘোষণা করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পাঠানো পত্রে বৈঠক বাতিলের কথা জানানো হলেও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতি বা অসম্মতির বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি বলে দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বুধবার মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব শর্ত ছাড়াই আমরা বৈঠকের পক্ষে মতামত দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হবে না বলেই জানানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউ ইয়র্কে থাকা পররাষ্ট্র সচিবকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানান সেগুনবাগিচার ওই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত থাকার প্রেক্ষিতে মৃতপ্রায় সংস্থাটির ‘লাইফ সাপোর্ট’ হিসেবে নিউ ইয়র্ক বৈঠককে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এবার সেটাই হলো না। এতদিন ধরে তৃতীয় ভেন্যুতে বাৎসরিক ওই বৈঠকে সার্কের রুটিন বিষয়াদি নিয়ে কথা হতো। গত বছর করোনার কারণে কোনো সদস্যই জাতিসংঘ অধিবেশনে সশরীরে যাননি কিন্তু তারা সবাই ভার্চ্যুয়াল সার্ক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। গেল বছর অবশ্য আফগানিস্তান সংকট ছিল না। ছিল না বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের অযাচিত কোনো হস্তক্ষেপও। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার কারণে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে প্রস্তাবিত ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জন করেছিল বাংলাদেশ। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা যেদিন শীর্ষ সম্মেলনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়, একইদিনে কাকতালীয়ভাবে ভারতসহ আরও ৩টি দেশ ইসলামাবাদ সম্মেলন বর্জনের কথা জানায়। সেদিন থেকে আজ অবধি সার্কের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন নিয়ে অচলাবস্থা বিদ্যমান। তিন দশকের ইতিহাসে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হওয়া কিংবা পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু একই দিনে চার সদস্য রাষ্ট্রের শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের ডাক ছিল অভূতপূর্ব ঘটনা। দীর্ঘ সময় সার্কের শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ায় সংস্থাটির ভবিষ্যৎ বা বেঁচে থাকা নিয়ে এখন অনেকেই শঙ্কিত। সার্কের বিকল্প হিসেবে বিমসটেক বা চীনের উদ্যোগে ‘বিকল্প সার্ক’ গড়ার আয়োজন নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। এই অবস্থায় সার্কের নিউ ইয়র্ক বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত সংস্থাটির ভবিষ্যৎকে চরম ঝুঁকিতে ফেললো বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ১৯৮৫ সালে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দক্ষিণ এশীয় ওই সংস্থার যাত্রা শুরু হয়েছিল দীর্ঘ ৩৫ বছরে এখনো প্রতীকী সংগঠনই থেকে গেছে। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে আগেই নিউ ইয়র্ক বৈঠক বাতিল হতে পারে মর্মে রিপোর্ট করেছিল। তাদের সূত্র ছিল ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। বলা হয়েছিল ২৫শে সেপ্টেম্বরের নিউ ইয়র্ক বৈঠকে পাকিস্তান চাইছে তালেবানের অংশগ্রহণ। তারা এও বলছে, আশরাফ গণির সময়কার আফগান প্রতিনিধি যেনো কোনো অবস্থাতেই ওই বৈঠকে অংশ না নেন। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এ অবস্থায় আফগানিস্তানের আসন ফাঁকা রাখার পক্ষে মত এসেছিল। কিন্তু তা-ও মানেনি পাকিস্তান। ফলে বৈঠকটিই বাতিল করতে হয়েছে। বৈঠক বাতিলের খবর জানিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে- সার্কের চেয়ারম্যান নেপালের তরফ থেকে বাকি সদস্য দেশের সঙ্গে আফগানিস্তান ও তালেবানের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু সার্ক দেশগুলো এই বিষয়ে একমত হতে পারেনি। তাই বৈঠক বাতিল হয়েছে। সচিবালয়ের তরফ থেকে সদস্য দেশগুলোকে চিঠিও দেয়া হচ্ছে। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই বুধবারের প্রতিবেদনে সার্কের বৈঠক বাতিলের বিষয়ে বলেছে, সার্ক-এর বৈঠকে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান-ই প্রতিনিধিত্ব করুক, এমনটাই দাবি করেছিল পাকিস্তান। তবে ভারতসহ কয়েকটি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবে প্রবল আপত্তি জানায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র খবরে বলা হয়, সার্কের বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে তালেবানের অংশগ্রহণ নিয়ে ঐকমত্য ও সম্মতির অভাবে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রেক্ষিতেই শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, সার্কের ‘বেশির ভাগ সদস্য দেশ’ চেয়েছিল চলতি বছর বৈঠকে আফগানিস্তানের আসনটি খালি থাকুক। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি পাকিস্তান। উল্লেখ্য, ২০ বছর পর গত ১৫ই আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। চলতি মাসের শুরুর দিকে তালেবান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। আফগান সব সমপ্রদায় ও গোত্রের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও প্রধান প্রধান মন্ত্রণালয়গুলোতে তালেবানের কট্টরপন্থি এবং অনুগতদেরই নিয়োগ দেয়া হয়। তবে তালেবান সরকার গঠন করলেও এখনো কোনো দেশই সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপকে নিয়ে সার্কের যাত্রা শুরু হলেও ২০০৭ সালে তাতে আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়।