শেষের পাতা

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় স্বস্তি, তবে...

পিয়াস সরকার

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:০৬ অপরাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বসা হলো না রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আফসান জামিল চৌধুরীর। এসএসসি’তে জিপিএ ৪.৬৭ আর এইচএসসি’তে ‘অটোপাস’-এ এসেছে জিপিএ ৪.৬০। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থীর আক্ষেপটা রয়েই গেল। আফসান বলেন, পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হলেও এতে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হলো।

দেশে প্রথমবারের মতো ২০ সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একমত হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘব হয়েছে শিক্ষার্থীদের কিন্তু বেশকিছু শিক্ষার্থী মনঃক্ষুণ্নও হয়েছে এর মাধ্যমে। হয়েছে আন্দোলন, মানববন্ধন। গড়িয়েছে আদালত অবধি। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও বছরের মতো বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিট (ডি)। সেই সঙ্গে তারা বাতিল চান সিলেকশন পদ্ধতি। মূলত সমস্যা দেখা দিয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের বেশকিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা হলে বসতে না পারায়। সেইসঙ্গে প্রথমে আবেদন ফি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এরপর তা করা হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের আবেদন তুলনামূলক কমে যাওয়াতেই বৃদ্ধি পেয়েছে আবেদন ফি।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষা হবে তিনটি। আগামী ১৭ই অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ‘খ’ ও ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষা হবে যথাক্রমে ২৪শে অক্টোবর ও ১লা নভেম্বর।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাকে স্বাগত জানিয়েছে সর্বমহলের শিক্ষার্থীরা। তিন বিভাগে মোট আবেদন করেছেন মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪০৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪১, মানবিক বিভাগে ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৩ এবং বাণিজ্য বিভাগে ৫৮ হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে সকলে পরীক্ষা দিতে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীর।

সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল করে পরীক্ষার সুযোগের জন্য আন্দোলন করে আসছেন এক ঝাঁক শিক্ষার্থী। তারা গতকাল বুধবারেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন করেন। এতে তারা আল্টিমেটাম দেন আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবারের মধ্যে আত্মহত্যা করবেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০ বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হলেও পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়েছে ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে। নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার কেন্দ্র করা হয়নি। এখানে কেন্দ্র হলে আরও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতো। এ ছাড়া গুচ্ছের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ৫০০ করেও পরীক্ষার আসন বাড়ানো হয় তাহলেও সবাই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। অথচ গুচ্ছ কমিটি সিলেকশনের নামে আমাদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। আমরা মেধা যাচাইয়ের সুযোগ চাই। অনেকেই এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা হলে আমাদের রেজাল্ট অনেক ভালো হতো। আমরা সবাই অটোপাসের বলি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে অথবা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র করে আমাদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেয়া হোক। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, অটোপাসের কারণে কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই। আমরা গুচ্ছ কমিটিকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিচ্ছি।

সিলেকশন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নুর বলেন, আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিচ্ছি। আমাদের সক্ষমতার কথা বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থী মনঃক্ষুণ্ন হবেন এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সক্ষমতা থাকলে আমরা সবাইকেই নিতাম। তবে সকলকে পরীক্ষার হলে বসানোর সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, এই বিষয়গুলোতে ইউজিসি কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। ইউজিসি’র আস্থা রয়েছে তাদের ওপর। সেখানে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। যারা ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছেন তারা অভিজ্ঞ। তারাই আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে। আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত আমাদের শিক্ষার্থীরাও খুশি হবে।

বিভাগ পরিবর্তন নিয়ে হয়েছে একাধিক আন্দোলন। বিভাগ পরিবর্তনকারী ঐক্যের আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাকিব বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উপকার হবে। গতানুগতিক পদ্ধতিতে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে একটা ভর্তি পরীক্ষা হয়। গুচ্ছ না হলে আমরা এই সুযোগটা পেতাম। কারণ আমরা বিজ্ঞানে আছি, বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। হাইকোর্টে যেতেও বাধ্য হয়েছি। আমরা বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি- এই তিনটি বিষয় নিয়ে বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিট চাই।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ তো থাকছেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নম্বরের ভিত্তিতে তারা যেতে পারবে। অন্য বিষয়ে যেতে হলে নির্দিষ্ট নম্বরের মাধ্যমে তারা যেতে পারে। আমি মনে করি, এটা সুন্দর সিস্টেম। আগের মতো শুধু পরীক্ষা হবে না। সে তার বিষয়ের উপর প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষাটা দেবে। এরপর ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে পরিবর্তন করবে। আমি মনে করি- এই পদ্ধতিটাই যুক্তিসঙ্গত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status