দেশ বিদেশ

সার্ভার থেকে নথি জব্দ

ইভ্যালির ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দায় চাপালেন রাসেলের ওপর

আল-আমিন

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৮ অপরাহ্ন

চটকদার অফার দিয়ে গ্রাহকদের টাকা নয়ছয় করা ইভ্যালির ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারীরা। ওই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন একজন পরিচালক, একজন সহকারী সিটিও এবং আরেকজন জনসংযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা। তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানে তারা চাকরি করেছেন। এ ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যবসায়ীর শেয়ারও আছে। ইভ্যালিতে ছিল একটি পরিচালনা বোর্ড। একাধিক পরিচালক প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের আগে রাসেল তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন  যে, ইভ্যালি সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করেই চালানো হবে। কিন্তু, পরে ইভ্যালিতে তাদের  কোনো পরামর্শ ও মতামতের কোনো  তোয়াক্কা করেননি রাসেল ও তার স্ত্রী। তারাই হয়ে উঠেন ইভ্যালির সর্বেসর্বা। প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং, পণ্য ক্রয়, ইভ্যালির বোর্ড পরিচালনা, মোটা অঙ্কের বিজ্ঞাপন দেয়া, পণ্য ডেলিভারি ও সোর্স মানি সংগ্রহ সহ সকল কিছুর সিদ্ধান্ত নিতেন রাসেল এবং তার স্ত্রী নাসরিন। তাদের কারণেই ইভ্যালি দেউলিয়া হয়ে গেছে। জনসংযোগের সঙ্গে যুক্ত এক অভিনেত্রীকেও ইভ্যালির বিষয়ে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গুলশান থানায় ডাকা হতে পারে বলে জানা গেছে। তিনি এখন আর ইভ্যালির সঙ্গে জড়িত নন বলে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করলেও তার ইভ্যালিতে থাকা না থাকা নিয়ে ইভ্যালির কোনো কর্মকর্তা স্পষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গুলশান থানায় ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে গুলশান থানা পুলিশ তাদের আদালতে  প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে আবারো দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড আবেদন করে। আদালত রাসেলের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার এসআই ওহিদুল ইসলাম জানান, ইভ্যালির বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইভ্যালির সার্ভার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও অর্থের আয় ও ব্যয়ের হিসাব মিলানো হচ্ছে।  মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুলশান জোনের পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইভ্যালির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ডেকেছিল। তারা কোনো ভয় ছাড়াই ইভ্যালি সমদ্ধে তথ্য প্রদান করেছেন। কারণ প্রতিষ্ঠানটি রাসেল ও স্ত্রী দুইজন মিলে চালাতেন। তারা জানিয়েছেন যে, গত বছরের নভেম্বর মাসে দুইজন ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ইভ্যালিতে পরিচালক হয়েছিলেন। পরে তারা রাসেলের একক প্রভাব বিস্তার দেখে সেখান থেকে সরে পড়েন। এ ছাড়াও রাসেল তার প্রতিষ্ঠান থেকে ঠুনকো অভিযোগে অনেককেই চাকরি থেকে বিদায় করেছেন। গত ৬ মাসে তার প্রতিষ্ঠানের ধানমণ্ডির প্রধান কার্যালয়ের শাখায় ২০ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে নতুন যোগদান করেছেন। আগের অনেককে চাকরিচ্যুত করে দিয়েছেন বলে তারা দাবি করেছেন। সূত্র জানায়, ইভ্যালির সার্ভার থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা একাধিক নথি জব্দ করেছে। সেই নথিগুলোর পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নথিগুলো দেখে তারা ইভ্যালির টাকা আয়ের পরিমাণ ও খরচের হিসাব মিলাচ্ছেন। এ ছাড়াও যেসব স্থান থেকে ইভ্যালি পণ্য সংগ্রহ করেছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। মোটা আগাম অর্থ না পেয়ে কিসের মোহে পড়ে তারা এমন একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকার পণ্য সরবরাহ করলেন সে বিষয়টি তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তারা জনিয়েছেন যে, তাদের পণ্য সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন একাধিক ব্যক্তির অনুরোধ ছিল। এ কারণে ইভ্যালির কাছে তাদের শত কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। যখনই ইভ্যালির কাছে টাকা চাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল তখনই রাসেল তার পরিচিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন আমলাকে দিয়ে সুপারিশ করাতেন। তার সুপারিশে ইভ্যালিকে আরও বেশি পণ্য দেয়া এবং পাওনা টাকা আদায়ে খুব বেশি তারা আর পীড়াপীড়ি করতেন না। ভাবতেন এই বুঝি পরের মাসে টাকা পেয়ে যাবেন। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ইভ্যালি মূলত অল্প দামে পণ্য বিক্রয়ের ফাঁদে ফেলেছিল। এতেই ইভ্যালির মার্কেট চাঙ্গা হয়ে উঠে। লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যে, শুধু তেল কেনার জন্য ১০ লাখ টাকার অর্ডার দিয়েছিলেন ইভ্যালিতে। সূত্র জানায়, ইভ্যালির তাদের সার্ভারে হিসাবনিকাশেও ভুল পাওয়া গেছে। গত জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখের হিসাবে দেখা গেছে যে, ওইদিন গ্রাহকের কাছে টাকা আদায় করা হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু, রেওয়ামিলে দেখা গেছে ৩৫ লাখ টাকা। এই টাকার হিসাবে কেন এবং কীভাবে নয়ছয় করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status