শেষের পাতা

রপ্তানির পোশাক চুরি করে কোটিপতি ‘সিলেটি’ সাঈদ

স্টাফ রিপোর্টার

২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৫১ অপরাহ্ন

পুরো নাম মো. সাঈদ। তবে সবাই তাকে সিলেটি সাঈদ নামেই চিনে। সম্প্রতি সাঈদের নামের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘চোর সাঈদ’। কারণ সে বছরের পর বছর ধরে রপ্তানির পোশাক চুরি করে আসছিল। তার পরিকল্পনা ও  নেতৃত্বে কয়েক বছরে অন্তত পাঁচ হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। খোঁয়া গেছে হাজার কোটি টাকার রপ্তানি পোশাক। চুরি করা এসব পোশাক বিক্রি করে তার পকেটে ঢুকিয়েছে কোটি কোটি টাকা। করেছে বাড়ি গাড়ি। কয়েকটি পোশাক কারখানার করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাঈদের সন্ধান পেয়েছে। সে চোর চক্রের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা রয়েছে।
ডিবিসূত্র জানিয়েছে, গত ১১ই মে আশুলিয়ার জয়ন্তী নিট ওয়্যার লিমিটেড থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান রপ্তানি পোশাক নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যায়। ওই পোশাকের গন্তব্য ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর ক্রেতা ওই পোশাক ভর্তি কার্টুনে ১১ হাজার পিস পোশাক কম পান। পরে বিষয়টি জানানো হয় জয়ন্তী নিট ওয়্যার লিমিটেডকে। পরে তারা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করে। এর কয়েকমাস পর ১৫ই সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লথিং লিমিটেডের জার্মানির অর্ডার থেকে চুরি হয় আরও পাঁচ হাজার পিস পোশাক। এ ঘটনায় তারা আরেকটি মামলা করে।  হিসাবের চেয়ে কম পোশাক পাওয়ায় এই দু’টি প্রতিষ্ঠানকেই সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রেতারা জরিমানাও করেন। জয়ন্তী নিট ওয়্যারকে জরিমানা করা হয় ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার।  
ডিবিসূত্র জানায়, জয়ন্তী নিট ওয়্যার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করে ১২ই সেপ্টেম্বর। পরে ডিবি ঢাকা মহানগরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ড ভ্যানের চালক মো. ইমরান, মো. মহিউদ্দিন, মোবারক ও ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় গাড়ির চালক মো. ইমরান হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর আরও একটি অভিযান চালিয়ে ঢাকার উত্তরা থেকে ডিবি পুলিশ তৈরি পোশাকসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, মাঈনুলদের গ্রেপ্তার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে তৈরি পোশাকসহ আল আমিন ও দুলাল গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০৫ পিস পোশাক উদ্ধার করে ডিবি। এই দলটির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে রপ্তানির পণ্য চুরি করছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রটি। বিশ্বে লিডিং রপ্তানিকারক বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে চোর চক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমপ্রতি সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও দু’টি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার এবং রপ্তানি পোশাক চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ সাত সদস্যকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১১ই মে জয়ন্তী নিট ওয়্যার লিমিটেড ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এজন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। অন্যদিকে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লথিং লিমিটেড নামক পোশাক কারখানার তৈরি পোশাক ১৪৩১ কার্টুনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনাকালে ৫০০০ পিস কম পাওয়া যায়।
ডিবি জানিয়েছে, রপ্তানির পোশাক চোর চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদ। তার বাড়ি মৌলভীবাজারে। ২০০০ সাল থেকেই সে রপ্তানি পোশাক চুরি করে আসছে। চুরির টাকা দিয়ে অসংখ্য বাড়ি-গাড়ি কিনেছে। শত শত ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান রয়েছে তার। মৌলভীবাজারে রয়েছে তার বিশাল অট্টালিকা। নিজের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করে ও এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতো।  তার পরিকল্পনায় ও যোগসাজশে নিজস্ব যানবাহনে পাঁচ হাজার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলাও হয়েছে। চোরাই পোশাক বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানদের লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাঈদ সমপ্রতি আট মাস কারাভোগ করে বের হয়ে আবার যুক্ত হয় চোরাই কারবারে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। চোরাই পোশাক কোথায় বিক্রি ও কারা ক্রয় করছে জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তদন্তের স্বার্থে বলছি না। দেশের ছোট ছোট কিছু বায়িং হাউজে যাচ্ছে এসব পোশাক। আর ওইসব পণ্য ছোট বায়িং হাউজগুলো বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে সেসব চোরাই পোশাক। এত মামলা নিয়ে কীভাবে সিলেটি সাঈদ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল? জানতে চাইলে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, সে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। কারাভোগ করে বেরিয়ে এসে আবার শুরু করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status