বিশ্বজমিন

জালিয়াতির অভিযোগ, তবু নিরঙ্কুশ জয়ের পথে পুতিনের দল

মানবজমিন ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, সোমবার, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

ভোট জালিয়াতির অভিযোগ সত্ত্বেও পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি। বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে, জনসমর্থন কমলেও ক্ষমতাসীন দল নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করবে। উল্লেখ্য, নির্বাচনে পুতিনের সবচেয়ে কড়া সমালোচকদেরকে বাইরে রাখা হয়েছে। বাক্সে ব্যালটভর্তি করা এবং জোরপূর্বক ভোট দেয়ার অসংখ্য রিপোর্ট পাওয়া গেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

নির্বাচন কমিশন তার প্রাথমিক ফলাফলে বলেছে, শতকরা ৬৪ ভাগ ভোট গণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি শতকরা প্রায় ৪৮ ভাগ ভোট পেয়েছে। এরপরেই রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। তারা পেয়েছে শতকরা প্রায় ২১ ভাগ ভোট। রোববার সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিজয় দাবি করেছে ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা গেছে, এই পার্টির কর্মকর্তা আঁন্দ্রেই তুরচাক রাজধানী মস্কোতে একদল সমর্থককে অভিনন্দন জানাচ্ছেন এবং তিনি দাবি করছেন নির্ভেজাল বিজয়ের। নির্বাচনে আংশিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের দল খুব সহজেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। কিন্তু তাদের জনসমর্থন কমেছে এক পঞ্চমাংশ। ২০১৬ সালে নির্বাচনে তার দলের সমর্থন ছিল শতকরা ৫৪ ভাগ। অন্যদিকে এই নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির জনসমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৮ ভাগ। এক্ষেত্রে জীবনমান নিয়ে উদ্বেগ এবং পুতিনের দুর্নীতির কড়া সমালোচনাকারী অ্যালেক্সি নাভালনিকে জেল দেয়ায় পুতিনের দলের সমর্থনে ক্ষতি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিবিসি আরো লিখেছে, রাশিয়ায় ম্যারাথন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু প্রথম ব্যালটটি কাউন্ট হওয়ার পূর্বেই ধারণা করা হয়েছিল যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিরোধী দলীয় অনেক রাজনীতিক ও অধিকারকর্মীকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলবন্দি বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির সমর্থকরা ছিলেন টার্গেটে। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে নির্বাচন তিনদিন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তবে সমালোচকরা বলেন, তিন দিনের এই নির্বাচনে স্বচ্ছতা ছিল না। প্রকাশ্যে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভোটে অনিয়মের রিপোর্ট আসছিলই। তবে নির্বাচন কমিশনের প্রধান এসব রিপোর্ট পাত্তাই দেননি। তিনি বলেছেন, এসব অভিযোগ পরিকল্পিত, বানোয়াট। দেশের বাইরে থেকে এক্ষেত্রে অর্থায়ন করা হয়েছে।

মস্কো যে নির্বাচন নিয়ে এমন সমালোচনার জবাবে এ প্রতিক্রিয়া দেবে তা আগেই জানা। তারা প্রথমেই আঙ্গুল তোলে পশ্চিমাদের দিকে। রাশিয়ার মতে, তাদেরকে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলতে এসবই হলো বিদেশিদের ষড়যন্ত্র। এই নির্বাচনে অনেক শহরে ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালের পর এবারই প্রথম অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি কোঅপারেশন ইন ইউরোপের কোনো পর্যবেক্ষক ছিলেন না। এক্ষেত্রে রাশিয়া কর্তৃপক্ষ সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। রোববার সন্ধ্যায় নিরপেক্ষ ভোট মনিটরিং গ্রুপ গোলোস বলেছে, কমপক্ষে ৪৫০০ নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনায় রিপোর্ট করা হয়েছে। পক্ষান্তরে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কোথাও উল্লেখযোগ্য নিয়ম লঙ্ঘনের তথ্য নিবন্ধিত হয়নি।
নির্বাচনের সময় অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। এসব ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স রিপোর্ট করেছে যে, এ চিত্র শুধু ভোটকেন্দ্রের বাইরের। লোকজনকে জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র। কিন্তু গোলোস বলেছে, তারা বহু ম্যাসেজ পেয়েছে ভোটারের কাছ থেকে। ওইসব ভোটারকে তার নিয়োগকর্তা জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। পাশাপাশি ছিল ভোট জালিয়াতি।

ওদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল, যা নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, সেখানে রাশিয়ার নাগরিকদের ভোট দিতে দেয়া হয়েছে। অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোট দিয়েছেন। ভোটের দিন অ্যালেক্সি নাভালনি যাতে ভোট দিতে না পারেন এ জন্য অ্যাপল এবং গুগলের স্টোর থেকে স্মার্ট ভোটিং অ্যাপ সরিয়ে রাখা হয়। বলা হয়, রাশিয়া কর্তৃপক্ষ ওই দুটি কোম্পানিকে হুমকি দিয়েছে। যদি তারা অ্যাপ ড্রপ না করে, তাহলে তাদেরকে বড় অংকের জরিমানা করা হবে। এ ঘটনার সমালোচনা করেছেন নাভালনির মিত্র লিওনিড লোবকভ। তিনি বলেছেন, এত বড় এই দুটি প্রযুক্তি বিষয়ক জায়ান্ট ক্রেমলিনের ব্লাকমেইলের শিকারে পরিণত হয়েছে। মস্কোর একজন পেনশনার নিজেকে শুধু আনাতোলি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশ্বমঞ্চে রাশিয়ার প্রভাবকে পুনঃস্থাপন করেছেন। এ জন্য তিনি তার প্রশংসা করেন। আর তাই ক্ষমতাসীন দলকে ভোট দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৬০ বা ১৯৭০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন সোভিয়েত ইউনিয়নকে যেমনটা শ্রদ্ধা করতো, এখন আর তা করে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status