শেষের পাতা

রাজারবাগ দরবারের সম্পদ তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার

২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, সোমবার, ৯:০৩ অপরাহ্ন

রাজারবাগ দরবার শরীফ ও এর পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দরবার শরীফ বা পীরের অনুসারীদের কোনো অংশ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত কিনা, তার সহযোগীরা দেশের ছয় জেলায় পৃথক মামলা দিয়ে রিট আবেদনকারীদের হয়রানি করছেন বলে যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রোববার আট ভুক্তভোগীর রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বিশেষ শাখা), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরাধ তদন্ত বিভাগ), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-মহাপরিদর্শক, গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান ও মামলাগুলোর বাদীসহ ২০ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। পরে শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, নির্দেশনা ও রুল জারির পাশাপাশি আদালত রিট আবেদনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাজারবাগ দরবার শরীফ ও পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন ৮ পরিবার। তারা হলেনÑ মো. আব্দুল কাদের, মাহবুবুর রহমান খোকন, ফজলুল করিম, জয়নাল আবেদিন, মো. আলাউদ্দিন, জিন্নাত আলী, আইয়ুবুর হাসান শামীম, নাজমা আক্তার ও নারগিস আক্তার। রিটে আবেদনে বলা হয়, পীর দিল্লুর রহমানের অনুসারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচারসহ ফৌজদারি মামলা করে হয়রানি করছেন। এতে ৭ বছরের শিশু, মহিলা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাদ্রাসার শিক্ষক, ব্যবসায়ী রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ৮ পরিবার উপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে শিশু আলাউদ্দিন ও তার মা রেজিয়া খাতুন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পঙ্গু জিন্নাত আলী কুতুবী এবং নাজমা আক্তারও উপস্থিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পঙ্গু জিন্নাত আলী কুতুবী বলেন, রাজারবাগ পীর সরকারের পক্ষ থেকে বান্দরবানের লামায় তাদের দেয়া জমি দখল করতে রাজারবাগ পীর তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি কান্না করে বলেন, পঙ্গু হয়েও দীর্ঘ ৮ বছর আমাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। আবার কবে যেন নতুন কি মামলায় কারাগারে যেতে হয়। মামলার বাদীদের কাউকেই চিনি না। অপর ভুক্তভোগী নাজমা আক্তার বলেন, রাজারবাগ পীর চক্রের মিথ্যা মামলায় আমার স্বামী এবং সন্তান আজ জেলে। সন্তান সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। ওর ভবিষ্যৎ আজ কারাগারে। ৯০ মিনিটের মধ্যে ভিন্ন দুটি জেলায় তার ছেলের নামে এই চক্রটি মামলা করেছে। মামলাগুলোর ঘটনা এক সঙ্গে পড়লেই বোঝা যাবে মামলাগুলো সাজানো।

এর আগে ৪৯ মামলার চক্করে পড়ে একরামুল আহসান নামের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই সব মামলা দায়ের ও এর পেছনে কারা আছেন, তা খুঁজে বের করতে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে একরামুলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় করা মামলার পেছনে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের সম্পৃক্ততার তথ্য এসেছে।

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ মামলার নথিপত্র সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে একাধিক মানব পাচার, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যাচেষ্টা মামলাসহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন ধর্তব্য ও অধর্তব্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা এবং বাদী ও ভিকটিমদের সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভিকটিমগণ কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরীফ এবং ওই দরবার শরীফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এ ছাড়া ২০২০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরীফের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে আসছে মর্মে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status