এক্সক্লুসিভ
ইছামতিতে ঐতিহ্যের নৌকা বাইচ
রাশিম মোল্লা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, সোমবার, ৭:৪৭ অপরাহ্ন
এদেশে নৌকা বাইচ গণবিনোদন হিসেবে কবে প্রচলন হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে এ বিষয়ে দুটি জনশ্রুতি রয়েছে। একটি জনশ্রুতি জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে। জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার সময় স্নানার্থীদের নিয়ে বহু নৌকার ছড়াছড়ি ও দৌড়াদৌড়ি পড়ে যায়। এতেই মাঝি-মাল্লা-যাত্রীরা প্রতিযোগিতার আনন্দ পায়। এ থেকে কালক্রমে নৌকা বাইচ শুরু। দ্বিতীয় জনশ্রুতি পীর গাজীকে কেন্দ্র করে। ১৮ শতকের শুরুর দিকে কোনো এক গাজী পীর মেঘনা নদীর এক পাড়ে দাঁড়িয়ে অন্য পাড়ে থাকা তার ভক্তদের কাছে আসার আহ্বান করেন। কিন্তু ঘাটে কোনো নৌকা ছিল না। ভক্তরা তার কাছে আসতে একটি ডিঙ্গি নৌকা খুঁজে বের করেন। যখনই নৌকাটি মাঝ নদীতে এলো তখনই নদীতে তোলপাড় আরম্ভ হলো। নদী ফুলেফেঁপে উঠলো। তখন চারপাশে যত নৌকা ছিল তারা খবর পেয়ে ছুটে আসে। তখন সারি সারি নৌকা একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে। এ থেকেই নৌকা বাইচের গোড়াপত্তন হয়। মুসলিম যুগের নবাব-বাদশাহদের আমলে নৌকা বাইচ বেশ জনপ্রিয় ছিল। অনেকে মনে করেন, নবাব বাদশাহদের নৌবাহিনী থেকেই নৌকা বাইচের গোড়াপত্তন হয়।
ঐতিহ্য অব্যাহত রাখতে আগামী ১লা অক্টোবর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দেওতলা ইছামতি নদীতে অনুষ্ঠিত হবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। দেওতলা নবারুণ সংঘ ও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার সভাপতি মো. মাসুদ মোল্লার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন ও নবাবগঞ্জ নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু। ইতিমধ্যে বাইচে অংশ নিতে বিশালাকৃতির ১০টি ঘাসি নৌকা, খেলনা নৌকা, কোষা নৌকা অংশগ্রহণ করতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, সিংগাইর এবং ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আকর্ষণীয় বিশালাকৃতির নৌকা অংশগ্রহণ করবে। পুরো এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
সূত্র জানায়, এক সময় ঢাকার নবাবগঞ্জে ভাদ্র মাস এলেই শুরু হতো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। পুরো এক মাসব্যাপী ইছামতি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতো এ নৌকা বাইচ। পুরো উপজেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। প্রতিটি বাসায় পিঠা-পুলি বানানোর ধুম পড়ে যেতো। বিশেষ করে তাল দিয়ে বানানো পোয়া পিঠা সবার বাড়িতে ছিল বাধ্যতামূলক। বিকাল হলে দাদা, নানা, চাচাদের সঙ্গে বাইচ দেখতে ছোট্ট ছেলে মেয়েরাও বায়না ধরতো। বাধ্য হয়ে ডিঙ্গি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তাদেরকে নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে যেতেন। অনেক পরিবারে আবার বাড়ির সবাই মিলে নৌকা বাইচ দেখতে হাজির হতো।
এ ব্যাপারে দেওতলা নবারুণ সংঘের সভাপতি মো. মাসুদ মোল্লা (মাসুদ রানা) বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রতিবছরই গ্রামবাসীর সহায়তায় অনেক কষ্ট করে নৌকা বাইচের আয়োজন করি। কিন্তু গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে আমরা এ আয়োজন থেকে বিরত ছিলাম। তবে এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব কম থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে আগামী ১লা অক্টোবর নৌকা বাইচের আয়োজন করেছি। গ্রামবাসী ও এলাকার যুব সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মাসুদ মোল্লা আরও বলেন, নবাবগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য কয়েকশো বছরের। কিন্তু গত ১০/১২ বছর ধরে এ ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। এর মূল কারণ বর্ষা মৌসুমে ইছামতি নদীতে এখন আর সেই আগের মতো পর্যাপ্ত পানি থাকে না। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কচুরিপানায় ভরপুর থাকে। এতকিছুর পরেও এলাকাবাসী কচুরিপানা অবমুক্ত করে ইছামতি নদীর কোনো না কোনো পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। বিশেষ করে উপজেলার দেওতলা, রাধাকান্তপুর- চক খানেপুর, কান্দা খানেপুর গ্রামবাসী।
শেখ বাড়ি নৌকার মালিক শেখ রায়হান বলেন, আমাদের নৌকার দৈর্ঘ্য ৮৭ হাত। নৌকার সামনে একজন আর পেছনে হেড চালকসহ প্রায় ৫০-৬০ জন মাল্লা লাগে। বাইচ উপলক্ষে পুরো নৌকা সাজানো হয়েছে বিভিন্ন রংয়ে। শেখ রায়হান নৌকা বানানো প্রসঙ্গে বলেন, ছোটবেলায় বিভিন্ন নৌকার মাল্লা হয়ে বাইচ দিতাম। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বাইচ দেখতে যেতাম। এক সময় নৌকা বাইচ নেশায় পরিণত হয়। এক সময় ইচ্ছে হলো নিজেই নৌকার মালিক হবো। যেই ইচ্ছা সেই কাজ। আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগে একটি কোষা নৌকা বানাই। কয়েক বছর বিভিন্ন বাইচে অংশগ্রহণ করি। এরপর চলে যাই প্রবাসে। হঠাৎ করে গত বছর দেশে আসার পর আবার মনে হয় হাজার বছরের ঐতিহ্য নৌকা বাইচের কথা। নির্মাণ করি ৫০ হাত দৈর্ঘ্যের কোষা নৌকা। তবে ওটা বিক্রি করে উপজেলার সবচাইতে বড় নৌকা নির্মাণ করছি।
ঐতিহ্য অব্যাহত রাখতে আগামী ১লা অক্টোবর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দেওতলা ইছামতি নদীতে অনুষ্ঠিত হবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। দেওতলা নবারুণ সংঘ ও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার সভাপতি মো. মাসুদ মোল্লার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন ও নবাবগঞ্জ নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু। ইতিমধ্যে বাইচে অংশ নিতে বিশালাকৃতির ১০টি ঘাসি নৌকা, খেলনা নৌকা, কোষা নৌকা অংশগ্রহণ করতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, সিংগাইর এবং ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আকর্ষণীয় বিশালাকৃতির নৌকা অংশগ্রহণ করবে। পুরো এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
সূত্র জানায়, এক সময় ঢাকার নবাবগঞ্জে ভাদ্র মাস এলেই শুরু হতো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। পুরো এক মাসব্যাপী ইছামতি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতো এ নৌকা বাইচ। পুরো উপজেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। প্রতিটি বাসায় পিঠা-পুলি বানানোর ধুম পড়ে যেতো। বিশেষ করে তাল দিয়ে বানানো পোয়া পিঠা সবার বাড়িতে ছিল বাধ্যতামূলক। বিকাল হলে দাদা, নানা, চাচাদের সঙ্গে বাইচ দেখতে ছোট্ট ছেলে মেয়েরাও বায়না ধরতো। বাধ্য হয়ে ডিঙ্গি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তাদেরকে নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে যেতেন। অনেক পরিবারে আবার বাড়ির সবাই মিলে নৌকা বাইচ দেখতে হাজির হতো।
এ ব্যাপারে দেওতলা নবারুণ সংঘের সভাপতি মো. মাসুদ মোল্লা (মাসুদ রানা) বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রতিবছরই গ্রামবাসীর সহায়তায় অনেক কষ্ট করে নৌকা বাইচের আয়োজন করি। কিন্তু গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে আমরা এ আয়োজন থেকে বিরত ছিলাম। তবে এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব কম থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে আগামী ১লা অক্টোবর নৌকা বাইচের আয়োজন করেছি। গ্রামবাসী ও এলাকার যুব সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মাসুদ মোল্লা আরও বলেন, নবাবগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য কয়েকশো বছরের। কিন্তু গত ১০/১২ বছর ধরে এ ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। এর মূল কারণ বর্ষা মৌসুমে ইছামতি নদীতে এখন আর সেই আগের মতো পর্যাপ্ত পানি থাকে না। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কচুরিপানায় ভরপুর থাকে। এতকিছুর পরেও এলাকাবাসী কচুরিপানা অবমুক্ত করে ইছামতি নদীর কোনো না কোনো পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। বিশেষ করে উপজেলার দেওতলা, রাধাকান্তপুর- চক খানেপুর, কান্দা খানেপুর গ্রামবাসী।
শেখ বাড়ি নৌকার মালিক শেখ রায়হান বলেন, আমাদের নৌকার দৈর্ঘ্য ৮৭ হাত। নৌকার সামনে একজন আর পেছনে হেড চালকসহ প্রায় ৫০-৬০ জন মাল্লা লাগে। বাইচ উপলক্ষে পুরো নৌকা সাজানো হয়েছে বিভিন্ন রংয়ে। শেখ রায়হান নৌকা বানানো প্রসঙ্গে বলেন, ছোটবেলায় বিভিন্ন নৌকার মাল্লা হয়ে বাইচ দিতাম। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বাইচ দেখতে যেতাম। এক সময় নৌকা বাইচ নেশায় পরিণত হয়। এক সময় ইচ্ছে হলো নিজেই নৌকার মালিক হবো। যেই ইচ্ছা সেই কাজ। আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগে একটি কোষা নৌকা বানাই। কয়েক বছর বিভিন্ন বাইচে অংশগ্রহণ করি। এরপর চলে যাই প্রবাসে। হঠাৎ করে গত বছর দেশে আসার পর আবার মনে হয় হাজার বছরের ঐতিহ্য নৌকা বাইচের কথা। নির্মাণ করি ৫০ হাত দৈর্ঘ্যের কোষা নৌকা। তবে ওটা বিক্রি করে উপজেলার সবচাইতে বড় নৌকা নির্মাণ করছি।