বিশ্বজমিন

আবার পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে পারেন নাজিব রাজাক

মানবজমিন ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ৩:১৫ অপরাহ্ন

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আবারো পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে পারেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ আছে, তাতে নির্বাচনে তাকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। কিন্তু তিনি আগামী দু’বছরের মধ্যে অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির দায়ে ডুবে থাকা নাজিবের দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (উমনো) গত মাসে কোনোমতে প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখে। শত শত কোটি ডলার দুর্নীতির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর মধ্যে গত বছর তাকে দুর্নীতির জন্য দায়ী দেখানো হয়। বর্তমানে অকার্যকর রাষ্ট্রীয় তহবিল ১এমডিবি-এর বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজের একাউন্টে নিয়েছেন তিনি- এমন অভিযোগ আছে। এ অভিযোগে তাকে ১২ বছরের জেল দেয়া হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আছে আরো অনেক মামলা। তবে নাজিব রাজাক কোনো অন্যায় করেননি বলে দাবি করেছেন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তিনি মনে করেন এসব অভিযোগ আনা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশে।
এখনও তিনি দেশটির পার্লামেন্টের একজন সদস্য। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করবেন অথবা রাজা তাকে মুক্তি না দেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। শনিবার রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাতকারে নাজিব রাজাক তাকে অযোগ্য ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। বলেছেন, এটা নির্ভর করে আইনের ব্যাখ্যার ওপর, সংবিধানের ওপর এবং আদালতের প্রক্রিয়ায় কি ঘটে তার ওপর। ২০২৩ সালে মালয়েশিয়ায় নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন। তাতে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে নাজিব রাজাক বলেন, যেকোনো রাজনীতিক, তিনি যদি কোনো ভূমিকা রাখতে চান, তাহলে তো তাকে পার্লামেন্টের একটি আসন পেতে হবে। তবে কিভাবে তিনি সাংবিধানিক বাধা কাটিয়ে উঠবেন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেননি।
মালয়েশিয়ায় ৬০ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল উমনো। কিন্তু নাজিব রাজাকের সময়কালে ১এমডিবি তহবিলের দুর্নীতির কারণে এবং এতে তার পরিবার সহায়তা করেছে- এসব কারণে ক্ষমতাসীনদের নামে কলঙ্কের ছোঁয়া লাগে। উমনোও চরম মূল্য দেয়। ৬০ বছরেরও বেশি সময় পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা পরাজিত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ ও তার সাগরেদ আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে। প্রধানমন্ত্রী করা হয় মাহাথির মোহাম্মদকে। কিন্তু নিজের দলের ভিতর সুবিধাবাদীদের গ্রুপিংয়ের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন। তার দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে জোট করে প্রধানমন্ত্রী হন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। তবে তিনি ক্ষমতা বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন হারানোর পর কয়েকদিন আগে তাকেও বিদায় নিতে হয়েছে। এ অবস্থায় রাজা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবকে। তিনি তার দলের অতীত ঐতিহ্য ফেরানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে দলের বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি কতটা সফল হবেন তা নিশ্চিত নয়।
অন্যদিকে নাজিব রাজাক তার গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন অভিজাত ভাবমূর্তি। একই সঙ্গে নিজেকে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও তিনি জনপ্রিয়। সেখানে সাবেক সরকারের সমালোচকরাও তার প্রশংসা করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরির সঙ্গে আলোচনা করেছেন নাজিব রাজাক। আলোচনা হয়েছে, সরকারে তার ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে। মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাজিব রাজাককে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বানানো হতে পারে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেননি সরকারে তার পদ কি হবে অথবা তিনি কোন পদ চান। তবে এটা বলেছেন, নিজের নামের থেকে কলঙ্ক মুছে দিতে চান।
নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ৪০টিরও বেশি অভিযোগ আছে। এর মধ্যে আছে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ পাচার। ১এমডিবি সংক্রান্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ। এসব অভিযোগে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। মালয়েশিয়ার প্রসিকিউটররা বলেছেন, ২০০৯ সালে ১এমডিবি তহবিল গঠন করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিলেন নাজিব রাজাক। তিনি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়াকে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার ফেরত দেয়। তিনি ১এমডিবি থেকে যে সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে বলা হয়, সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এই অর্থ।
নাজিব বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। তিনি এসব মামলা রয়েল কমিশন অব ইনকুয়ারি দিয়ে তদন্তের জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আরসিআই প্রতিষ্ঠা হয়েছে সবার ন্যায়বিচাররের জন্য, শুধু আমার ন্যায়বিচারের জন্য নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status